Human Animal Conflict Dooars

বাড়ছে প্রাণের ঝুঁকি, বনবস্তিতে সুলভে জ্বালানির জোগানোর দাবি জোরালো

জেলা

এভাবেই ঝুঁকি নিয়ে চলে জ্বালানির খোঁজ। ডুয়ার্সে বনবস্তির বাসিন্দাদের ছবি।

দীপশুভ্র সান্যাল

বাজার থেকে জ্বালানি কিনতে গেলে চড়া দাম। সেই সঙ্গতি নেই জঙ্গল লাগোয়া বনবস্তির বাসিন্দাদের। যেতে হচ্ছে জঙ্গলের ভেতরে, কাঠকুটোর খোঁজে। পড়তে হচ্ছে বন্যপ্রাণীর সামনে। 
সাম্প্রতিক সময়ে ডুয়ার্সে বেড়েছে বন্যপ্রাণ ও মানুষের সংঘাতে মানুষের মৃত্যুর সংখ্যা। হাতি, বাইসন, গণ্ডার, চিতাবাঘ সহ অন্যান্য বন্য প্রাণীদের আক্রমণে আক্রান্ত হচ্ছেন জঙ্গল লাগোয়া গ্রাম, বনবস্তির মানুষ। 
বিভিন্ন সময় বন দপ্তরে সর্তকতা জারি করলেও পেট চালাতে প্রাণের ঝুঁকি নিয়ে জঙ্গলে ঢুকতে হচ্ছে সংলগ্ন এলাকার প্রান্তিক বাসিন্দাদের। 
ডুয়ার্স অঞ্চলের বনবস্তি বাসীদের জঙ্গলের শুকনো ডালপালা সংগ্রহ করতে হয়। জ্বালানির জন্যই বিপদের মুখে পড়তে হয়।  কিছুদিন আগে আলিপুরদুয়ারে হাতির আক্রমণে ৩ বনবস্তিবাসীর মৃত্যু হয়েছিল। তাঁরা জ্বালানি সংগ্রহ করতে গিয়েছিলেন। দু’বছর আগে জলপাইগুড়ির জলদাপাড়ার জঙ্গলে গণ্ডার ধেয়ে এসেছিল পর্যটকদের গাড়ির দিকে। 
গত বছরই এক মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী হাতির পায়ে পিষ্ট হয়েছিল। মর্মান্তিক এই ঘটনা দেখিয়ে দিয়েছিল কী ঝুঁকির মধ্যে কাটাতে হয় জীবন। মাধ্যমিক পরীক্ষা শুরুর দিনে বাবার সঙ্গে জঙ্গলের রাস্তা লাগোয়া রাজগঞ্জ ব্লকের এক কেন্দ্রে পরীক্ষা দিতে যাওয়ার সময় ভয়াবহ পরিণতির শিকার হতে হয়েছিল সেই কিশোরকে।
এই ধরনের ঘটনা মোটেও একটি নয়। বরং এটি দৈনন্দিন চিত্র হয়ে উঠেছে ডুয়ার্সের জঙ্গলে। কখনো জ্বালানি সংগ্রহ করতে, কখনো সময় বাঁচাতে বনের পথ ব্যবহার করতে হয় স্থানীয়দের। 
পরিবেশ আন্দোলনের কর্মীদের মত, যদি রাজ্য ও কেন্দ্র সরকার বনবস্তিবাসীদের জন্য সহজলভ্য এবং কম খরচে জ্বালানির ব্যবস্থা করত, তবে এই ঝুঁকি নিতে হতো না। প্রাণের ঝুঁকি নিয়ে জঙ্গলে জ্বালানি সংগ্রহ করার জন্য যেতে হতো না। 
আবার চা বাগানে কাজ করার সময়ও বন্যপ্রাণীর আক্রমণের শিকার হচ্ছেন। পরিবেশ কর্মীরা বলছেন, বনভূমি ও মানববসতির মধ্যে সঠিক সমন্বয় এবং নিরাপদ কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন করতে না পারলে এই সংঘাত আরও বাড়বে। সুসংহত ব্যবস্থা নিতে সরকারের কাছে দাবি জানাচ্ছেন ডুয়ার্সের প্রায় প্রতিটি বনবস্তির বাসিন্দারা। 
পরিবেশ কর্মীদের মতে জঙ্গলের ভেতরে ক্রমশ কমছে বন্য প্রাণীদের খাবার। বাইরে ঘন জঙ্গল দেখা গেলেও ভেতরে ক্রমেই কমছে গাছের সংখ্যা। যে কারণে খাবারের খোঁজে বন্যপ্রাণীরা গভীর জঙ্গল ছেড়ে জনবসতি সংলগ্ন হালকা জঙ্গল সেখানে ঘুরে বেড়াচ্ছে। সুযোগ পেলেই হানা দিচ্ছে জঙ্গল সংলগ্ন গ্রাম ও বনবস্তিতে। ফলে ক্রমেই বাড়ছে মানুষের সঙ্গে বন্যপ্রাণীদের সংঘাত। 

Comments :0

Login to leave a comment