Tigress Zeenat

জিনাত এখনও অধরা, পাহাড় লাগোয়া গ্রামে আতঙ্ক

রাজ্য জেলা

গৃহপালিত পশুরা নিখোঁজ ও জখম, তীব্র আতঙ্কে গ্রামের মানুষ।

ভাস্কর দাশগুপ্ত- পুরুলিয়া
জঙ্গল থেকে উদ্ধার হচ্ছে একের পর এক রক্তাক্ত মৃত ছাগল। উদ্ধার গুরুতর যখন অবস্থায় বেশ কয়েকটি ছাগল। স্থানীয় মানুষজনের দাবি বেশ কয়েকটি ছাগল এখনও পর্যন্ত নিখোঁজ রয়েছে। পুরুলিয়ার রাইকা পাহাড় লাগোয়া রাহামদা গ্রামে ছড়ালো বাঘিনীর আতঙ্ক। থমথমে গোটা এলাকা। গ্রামবাসীরা জানান,  প্রতিদিনের মতো সোমবারও ছাগলগুলো নিকটবর্তী ভাড়ারিয়ার জঙ্গলে ছেড়ে দেওয়া হয়। বিকেলের দিকে দেখা যায় সেই ছাগলের পাল নেমে আসে পাহাড় থেকে। বেশ কয়েকটি ছাগলকে রক্তাক্ত অবস্থায় রয়েছে,  বেশ কয়েকটি ছাগল এখনও নিখোঁজ। বাঘের কামড়েই এই ঘটনা ঘটেছে বলে দাবি গ্রামবাসীদের। খবর পেয়ে বনকর্মীরা ঘটনাস্থলে আসেন। মৃত অবস্থায় বেশ কয়েকটি ছাগলকে উদ্ধার করে নিয়ে যায়।
প্রায় ৯৬ ঘণ্টা কেটে গেল এখনো জিনাতকে ধরতে সক্ষম হলো না বন কর্মীরা।  জঙ্গলে ঘুমপাড়ানি শুটার রয়েছে, খাদ্য সামগ্রী সহ টোপ রয়েছে। কিন্তু কোন কিছুতেই পাত্তা দিচ্ছে না সেই বাঘিনী। পূর্ব প্রান্তে রয়েছে রাইকা পাহাড় এবং তার পশ্চিম দিকে রয়েছে ছোট রাইকা পাহাড়। মঙ্গলবার ভোর তিনটা নাগাদ বন কর্মীরা ভাড়ারিয়ার পশ্চিম প্রান্তে জিনাতের অস্তিত্ব টের পায়। ভোরের দিকে সে আবার পূর্ব দিকে লাইকা পাহারি ফিরে যায়। বনকর্মীদের দাবি রাইকা পাহাড়ে ওই বাঘিনী জিনাত তার নিশ্চিন্ত আশ্রয় খুজে পেয়েছে। সেজন্য রাতের অন্ধকারে কয়েক কিলোমিটার পথ জুড়ে তার গতিবিধি থাকলেও দিনের আলো ফোটার আগেই সে ঢুকে যাচ্ছে রাইকা পাহাড়ের গভীর জঙ্গলে। আতঙ্ক ছড়িয়েছে গোটা এলাকা জুড়ে। ইতিমধ্যেই পাঁচটি ছাগলকে মৃত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়েছে এবং ছটি ছাগলকে আহত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়েছে।  গলায় এবং পিছনে থাবা এবং কামড়ের স্পষ্ট দাগ রয়েছে বলে বন কর্মীরা জানিয়েছেন। বহু গ্রামের মানুষ তাদের গবাদিপশুদের ঘরেই বেঁধে রাখছেন। আতঙ্কে তারা জঙ্গলে ছাড়ছেন না। কিন্তু এভাবে দীর্ঘদিন বেঁধে রাখলে তাদের খাদ্য সামগ্রী কিভাবে সংগ্রহ করা যাবে। উড়িশার বাঘিনী জিনাতের ভয়ে পুরুলিয়ার বান্দোয়ানের রাহামদা,  কেসরা, লেদাসোল, বারুডি কেন্দডি,  গুলিতে আতঙ্ক ক্রমশ ছড়াচ্ছে। রাইকা পাহাড়ে বেশ কিছুটা অঞ্চল যেহেতু শ্যাডোজোনের মধ্যে পড়ে সেহেতু জিনাতের অস্তিত্ব পেতে কাল ঘাম ছুটেছে বনকর্মীদের। পাহাড় সংলগ্ন স্কুলগুলিতে আতঙ্ক ছড়িয়েছে। রাইকা পাহাড় লাগোয়া উদলবনী কেসরা স্কুলগুলিতে তাদের সন্তানদেরও পাঠাতে ভয় পাচ্ছেন। স্কুলে ছুটি না দেওয়া হলেও অভিভাবকরা কোনভাবেই পাঠাতে চাইছেন না পড়ুয়াদের। 
সারাদিন ধরে রাইকার জঙ্গলকে বৃত্তাকারে ঘিরে রেখে বনুকর্মীরা সতর্ক দৃষ্টি রাখছেন। টোপে খাদ্য সামগ্রী রেখে ঘন্টার পর ঘন্টা চলছে অপেক্ষা,  টোপের পাশেই ট্রানকুলাইজার টিমের শুটাররা প্রস্তুত হয়ে রয়েছেন ঘুমপাড়ানি গুলিতে যাতে ওই বাঘিনীকে আয়ত্তে আনা যায়। গত একমাস ধরে জিনাতকে খাঁচা বন্দি করতে নাকানি চোবানি খাচ্ছেন সিমলিপাল ব্যাঘ্র প্রকল্পের কর্মীরা। সোমবার দিন টোপ রাখা খাদ্য বস্তুর সামনে দিয়ে ঘুরে গেলেও সে ফিরেও চায়নি বলে জানা গেছে। টোপের পাশে বিধি মোতাবেক বনদপ্তরের ট্রাপ ক্যামেরা লাগানোর ব্যবস্থা করা হয়েছে। ইতিমধ্যে আটটি ট্র্যাপ ক্যামেরা নিয়েও আসা হয়েছে‌। শ্যাডো জোন হওয়ায় রেডিও সিগনাল পেতে সমস্যা হয়েছে। সিমলাপাল রেপিড রেসপন্স টিমের জোড়া গাড়ি দীর্ঘ রাইকার পাহাড় জঙ্গলে চষে বেড়াচ্ছে। ক্যামোফ্লাজ পোশাকে নজরদারি চালাচ্ছে উড়িশার আধিকারিকরা। পাশাপাশি চলছে কংসাবতী দক্ষিণ বনবিভাগের কর্মীদেরও নজরদারি। কিন্তু যার জন্য এই এত আয়োজন সেই জিনাত হয়ে গেছে অধরা। 

Comments :0

Login to leave a comment