অন্যকথা
আকাশ প্রদীপ জ্বলে দূরের তারার পানে চেয়ে
কৃশানু ভট্টাচার্য্য
মুক্তধারা
সুভাষনগরের সুনীতিবালা স্টেট ব্যাঙ্কের বকুলতলার 'যখন চাই, তখন পাই' টাকা তোলার কেন্দ্রের দরজায় একটা ভ্যান গাড়িতে রোজ ফুল বিক্রি করেন। বৃদ্ধার ঠিক বা দিকে ডিম বিক্রি করেন শান্তিনগরের মালতি । দুজনেরই বয়স একই রকম। কেনাবেচা লেনদেন চলতে চলতেই দুই সমবয়সীর মধ্যে এক অকৃত্রিম বন্ধুত্ব। রাস্তার উল্টোদিকেই বসে জসমির। নিবাস দোপেড়িয়া। উল্টোদিকে বসা দুই দিদার ব্যবসার সবচেয়ে বড় সহায়ক এই যুবকটি। সে রিকশা থেকে মাল নামিয়ে দেওয়াই হোক, বর্ষাকালে ছাতা লাগিয়ে দেওয়াই হোক কিংবা এপাশ ওপাশের দোকান থেকে টাকা ভাঙ্গিয়ে আনাই হোক। এ রোজের ঘটনা। নিজের দোকানের খদ্দেরকে সামলে রাস্তা পার হয়ে এসে সুনীতিবালার ভ্যানের উপর ছাতা লাগিয়ে দিতে জসমির কখনো সংকোচবোধ করে না। এই বাংলায় এই ভারতে পথেঘাটে এরকম অসংখ্য সুনীতিবালা জসমির পাওয়া যাবে।
এস ওয়াজেদ আলীর কথা ধার করেই বলা যায় এ ট্রাডিশন সমানে চলছে। আজ থেকে প্রায় ৭০-৮০ বছর আগে এন্টালির এক বস্তিতে এক মাকে আবিস্কার করেছিলেন মা টেরিজা। নিরন্ন আট টি সন্তানের জন্য খাবার পেয়ে তার থেকেই কিছুটা আলাদা করে প্রতিবেশী মুসলিম পরিবারের পাঁচটি নিরন্ন বাচ্চার জন্য খাবার নিয়ে গেছিলেন সেই হিন্দু মা। ক্রিশ্চান মা টেরিজাকে অবাক করে দিয়েছিলেন সেই দুই মা। ভাগাভাগির এ এক ব্যতিক্রমী চিত্র। এটাই ভারতের ছবি। এটাই বাংলার ছবি। সেই ছবি অক্ষরের বিন্যাসে তুলে ধরেন সমরেশ বসু কিংবা আরো অনেকে। আদাব গল্পের শেষ দৃশ্যের আকুতি সরিয়ে পড়ে মানুষের অন্দরে ,অন্তরে।
সেদিনও কিংবা এই দিনেও মানুষের আনমনে আঁকা এই ছবিকে নষ্ট করার জন্য একদল মানুষ তৎপর হয়। প্রতি সন্ধ্যায় বিনোদনের ঢং দেখিয়ে,পতাকার রং দেখিয়ে, বাস্তববোধকে অন্ধকারে ঠেলে দিয়ে একদল মানুষ চায় ভাঙতে কিংবা। কিংবা ভাঙ্গার জন্য উৎসাহিত করতে।
আর সেই সময় কানে বেজে ওঠে সেই গান। অন্ধকারের মধ্যে জুড়ে ওঠে প্রদীপ। রাতের গভীর অন্ধকারে মেঘ যখন ঢেকে দিয়েছে চাঁদকে কিম্বা অমাবস্যার ঘোর অন্ধকারে চারপাশে কিছু দেখা যাচ্ছে না, সেই সময় এই প্রদীপের শিখা বার্তা পাঠায় দূরের আকাশের মিট মিট করে জ্বলে থাকা তারার দিকে। জনগণেশের অনুরোধের আসরে তখন সেই রাত্রে বেজে ওঠে,
'আকাশ প্রদীপ জ্বলে দূরের তারার পানে চেয়ে'।
Comments :0