ISRAEL PALESTINE CONFLICT

বেনজির বিপর্যয়ের সাক্ষী গাজা

আন্তর্জাতিক

israel palestine conflict hamas usa israel iran india bengali news মৃত্যুর পর দেহ খুঁজে পেতে সুবিধা হবে। তাই এমন ব্রেসলেট পরছে গাজা’র শিশুরাও।

চারিদিকে মৃতদেহের স্তূপ। আল জাজিরা জানাচ্ছে, ১৯ দিন ধরে চলা সংঘর্ষে গাজা ভূখণ্ডের ৬ হাজার ৫৪৬ জনের বেশি প্যালেস্তিনীয় প্রাণ হারিয়েছেন। বহু মৃতদেহকে শানক্ত করা সম্ভব হয়নি। সেই দেহগুলিকে গণকবর তৈরি করে সমাধি দেওয়া হয়েছে। নিজেদের প্রিয়জনকে যাতে এই পরিস্থিতির শিকার না হতে হয়, তাইজন্য ব্রেসলেট পরা শুরু করেছেন গাজা’র বহু মানুষ। 

সেই ব্রেসলেটে নিজেদের নাম, ঠিকানা সহ জরুরি তথ্য লেখা রয়েছে। আল জাজিরার প্রতিবেদন অনুযায়ী, গাজাবাসী জানাচ্ছেন, ইজরায়েলের বোমা হামলায় পরিবারের কেউ প্রাণ হারালে যাতে তাঁকে চিহ্নিত করা যায়, এবং শনাক্ত না হওয়া মৃতদেহের স্তূপে যেন প্রিয়জনের ঠাঁই না হয়, তাই এই ব্যবস্থা। 

ব্রেসলেট পরার পাশাপাশি গাজা ভূখণ্ডের বহু মানুষ সরকারি পরিচয়পত্র সুতো দিয়ে গলায় ঝোলানো শুরু করেছেন। একাধিক সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, গাজা’র বহু শিশু হাতে কালি দিয়ে নিজেদের নাম, ঠিকানা সহ গুরুত্বপূর্ণ তথ্য লিখে রাখছে। এখানেও একই কারণ। যাতে মৃত্যুর পরে শনাক্ত করা সহজ হয়। 

এই কোলাজগুলি থেকেই স্পষ্ট, ঠিক কী পরিস্থিতিতে দিন কাটাচ্ছেন গাজা ভূখণ্ডের সাধারণ মানুষ। 

ইজরায়েল সেনাবাহিনীর গাজা’র বাসিন্দাদের গাজা শহর ছেড়ে ভূখণ্ডের দক্ষিণ দিকে চলে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছে। এরইমাঝে দের আল-বালাহ’র মোঘরাবি  ত্রাণ শিবিরে বিমান হানা চালিয়েছে ইজরায়েল। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানাচ্ছেন,  ত্রাণ শিবিরের মধ্যে থাকা একটি বেকারিতে হামলা চালানো হয়েছে। ত্রাণ শিবিরে এটিই একমাত্র বেকারি ছিল, যেখানে রুটি তৈরি হত। রাষ্ট্রসংঘের প্যালেস্তাইন সংক্রান্ত সংস্থার তরফে এই বেকারিতে গম পাঠানো হয়েছিল। গম এসে পৌঁছনোর পরেই হামলা চালিয়েছে ইজরায়েল। 

অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের তরফে বলা হয়েছে, গোটা গাজা শহর এবং গাজা ভূখণ্ডের উত্তরাংশের মানুষকে দক্ষিণে চলে যাওয়ার নির্দেশ দেওয়া যুদ্ধপরাধের সামিল। 

গাজার হাসপাতালগুলিতেও ভয়ঙ্কর অবস্থা তৈরি হয়েছে। অধিকাংশ হাসপাতালে বিদ্যুৎ নেই। খান ইউনিস শহরের নাসের হাসপাতালের পরিস্থিতি বর্ণনা করেছেন সেখানকার চিকিৎসক মহম্মদ কান্দিল। তিনি আল জাজিরা’কে জানিয়েছেন, হাসপাতালে পর্যাপ্ত ওষুধ নেই। গত ১২ ঘন্টায় আমাদের হাসপাতালে ১৫০জন নিহত এবং ৩০০জন আহত মানুষ এসেছেন। এরমধ্যে এক মহিলা অন্ত্রে গুরুতর চোট নিয়ে এসেছিলেন। কিন্তু তাঁর চিকিৎসা করার পরিকাঠামো আর অবশিষ্ট ছিলনা। তাই আমরা তাঁকে কথায় কথায় ভুলিয়ে রাখার চেষ্টা করে গিয়েছি, যতক্ষণ না তিনি মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন! এছাড়া আমাদের কাছে আর কোনও উপায় ছিলনা। 

তুরষ্কের রাষ্ট্রপতি রিচেপ তাইপ এরডোগান জানিয়েছেন, ‘‘হামাস প্যালেস্তিনীয়দের মুক্তির জন্য সংগ্রাম চালাচ্ছে। প্যালেস্তাইনের জমি রক্ষার লড়াই লড়ছে হামাস। আমি তাঁদের উগ্রপন্থী সংগঠন বলতে পারিনা।’’

আঙ্কারা শহরের একটি জনসভায় এরডোগান আরও বলেন, ‘‘গাজা’র মানুষের বিরুদ্ধে অমানবিক যুদ্ধ চালাচ্ছে ইজরায়েল। আমার ইজরায়েল সফরের কথা ছিল। কিন্তু গাজা’র ঘটনার প্রতিবাদে আমি সেই সফর বাতিল করেছি। এভাবে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক মজবুত হওয়া সম্ভব নয়।’’

এর পালটা ইজরায়েলের বিদেশমন্ত্রকের মুখপাত্র লিওর হাইয়াত বলেছেন, ‘‘হামাস আইসিসের থেকেও ভয়ঙ্কর সংগঠন। তারা ঠান্ডা মাথায় ছক কষে শিশু, কিশোর, মহিলা, বৃদ্ধ সহ সমস্ত অংশের মানুষকে খুন করে এবং পণবন্দী বানায়। একইসঙ্গে নিজেদের লোককে(পড়ুন প্যালেস্তিনীয়দের) মানব ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে হামাস।’’

Comments :0

Login to leave a comment