তিনি বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে পদত্যাগ করার আগে এবং তার ঢাকার বাসভবন ত্যাগ করার আগে, শেখ হাসিনা জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণ দিতে চেয়েছিলেন, বিশেষ করে প্রতিবাদকারীদের উদ্দেশ্যে, যাদের আন্দোলন তাকে শীর্ষ পদ ছেড়ে দিতে বাধ্য করেছিল। প্রতিবাদকারীরা তার বাসভবনে পৌঁছে যাওয়ায় দেশের শীর্ষ নিরাপত্তা কর্মকর্তারা যত তাড়াতাড়ি সম্ভব চলে যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছিলেন বলে সেই বক্তৃতাটি আর দেওয়া হয়নি।
এখন ভারতে, ৭৬ বছর বয়সী হাসিনা তার ঘনিষ্ঠ সহযোগীদের সাথে সেই বক্তৃতা সম্পর্কে কথা বলেছেন। শেখ হাসিনা দেশে শাসন পরিবর্তনের ষড়যন্ত্রের জন্য যুক্তরাষ্ট্রকে অভিযুক্ত করেছেন এবং সুযোগ পেলে তার বক্তৃতায় এ কথা বলতেন।
‘‘আমি পদত্যাগ করেছি যাতে আমাকে লাশের মিছিল দেখতে না হয়। ওরা ছাত্রদের লাশ নিয়ে ক্ষমতায় আসতে চেয়েছিল, কিন্তু আমি তা করতে দেইনি। আমি প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করেছি। সেন্ট মার্টিন দ্বীপ আমেরিকার হাতে তুলে পারতাম এবং আমেরিকাকে বঙ্গোপসাগরের উপর কর্তৃত্ব বজায় রাখার অনুমতি দিলেই আমি ক্ষমতায় থাকতে পারতাম। আমি আমার দেশের জনগণের কাছে অনুরোধ করছি, অনুগ্রহ করে মৌলবাদীদের দ্বারা চালিত হবেন না,’’ তার অবিকৃত ভাষণে তিনি বলেছেন।
শেখ হাসিনা চলে যাওয়ার সাথে সাথে নোবেল শান্তি পুরস্কার বিজয়ী এবং গ্রামীণ ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা মুহাম্মদ ইউনূসের অধীনে একটি অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব গ্রহণ করলেও অগ্নিগর্ভ পরিস্থিতি চলছে সেখানে। সংখ্যালঘুদের উপর হামলা চলছে। হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর লাগাতার হামলার প্রতিবাদে বাংলাদেশে লাখ লাখ সংখ্যালঘু হিন্দু রাস্তায় নামে শনিবার। বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা এবং দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর চট্টগ্রামে শনিবার বিশাল সমাবেশে লক্ষাধিক লোকের উপস্থিতি দেখা গেছে। ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারের পতনের পর থেকে ৫২টি জেলা জুড়ে ২০৫টিরও বেশি হামলার ঘটনার সম্মুখীন হয়েছে হিন্দুরা। তাদের বাড়িঘর ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলায় কয়েকশো হিন্দু আহত হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
এদিকে গোটা পরিস্থিতির ওপর নজর রাখছে সিপিআই(এম)। বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের ওপর আক্রমণের প্রতিক্রিয়ায় ভারতের পরিস্থিতি কী হতে পারে তা নিয়ে সতর্ক পার্টি। সিপিআই(এম) এর পক্ষ থেকে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর থেকে বাংলাদেশে মন্দির এবং সংখ্যালঘু হিন্দু, বৌদ্ধ, খৃষ্টান সম্প্রদায়ের উপর হামলার ঘটনায় গুরুতর উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে। পার্টি জানিয়েছে, যে এটা স্পষ্ট হয়ে গেছে যে মৌলবাদী শক্তিগুলি সরকারের পতনের ফলে যে বিশৃঙ্খল পরিস্থিতিকে কাজে লাগিয়ে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়কে টার্গেট করছে।
সংখ্যালঘুদের, তাদের ঘরবাড়ি এবং উপাসনালয়ের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য যে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার স্থাপন করা হয়েছে তাকে অবিলম্বে এবং দৃঢ় পদক্ষেপ নিতে বলেছে সিপিআই(এম)। পাশাপাশি ভারতে কেন্দ্রীয় সরকারকেও বাংলাদেশের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সাথে এই বিষয়টির ওপর নজর রাখতে হবে বলে জানিয়েছে সিপিআই(এম)।
Comments :0