রামশংকর চক্রবর্তী (তমলুক) অনন্ত সাঁতরা (খানাকুল)
ফের বৃষ্টি, খানাকুলের বানভাসি মানুষের মনে আশঙ্কা। ফের বৃষ্টিতে নতুন করে প্লাবিত হচ্ছে পাঁশকুড়া, প্রায় ৬০ হাজার হেক্টর কৃষি জমির ফসল ক্ষতিগ্রস্ত। বন্যা কবলিত খানাকুলে ফের বৃষ্টি শুরু হওয়ার কারণে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন বানভাসি মানুষজন। বুধবার সন্ধ্যা থেকে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত প্রায় এক নাগাড়ে বৃষ্টির দরুণ নতুন করে জলস্তর কিছুটা বেড়েছে। এরপরও যদি বৃষ্টি চলতে থাকে তাহলে বিপদ আরো বাড়বে বলে আশঙ্কা করছেন বাসিন্দারা।
ইতিমধ্যেই বন্যার প্রকোপে বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে বিভিন্ন গ্রামীন রাস্তা ঘাট, মাঠ, বাড়ি ঘর জলে ডুবে রয়েছে। কৃষি বলয়ে ধান সহ সব ধরনের সবজি ফসল নষ্ট হয়ে গেছে। বহু বাড়ি জলমগ্ন হয়ে রয়েছে। অনেক মাটির বাড়ি ভেঙ্গে গেছে। অসহায় অবস্থায় বসবাস করছেন তাঁরা। ত্রাণ ও পাণীয় জলের সঙ্কট দেখা দিয়েছে। যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন হয়ে রয়েছে। গ্রাম থেকে পি ডব্লিউ ডি রোডে আসতে হচ্ছে নৌকা করে। এদিকে নিম্নচাপের প্রভাবে যদি বাঁকুড়া জেলা ও ঝাড়খন্ড রাজ্যে যদি বৃষ্টির প্রকোপ বাড়ে তাহলে খানাকুলের নদীর জল আরো বেড়ে ওঠার সম্ভাবনা দেখছেন মানুষ।
হুগলির খানাকুলের কৃষি বলয়ের ছবি।
এদিন এক প্রত্যক্ষদর্শী জানালেন, খানাকুল বাজারে জল অনেকটা নেমে গিয়েছিল। রাত দিনের বৃষ্টিতে ফের জল বাড়ছে। নদীর ভাঙ্গা বাঁধ দিয়ে এখনো উপর থেকে আসা জল ঢুকছে। বন্যার ফলে এখনো বহু মানুষ জলবন্দি হয়ে দুর্ভোগের মধ্যে দিনযাপন করছেন। রাজহাটি এলাকার রামচন্দ্রপুর মালিক পাড়ায় বেশ কিছু বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বাড়িতে জল জমে রয়েছে। অনেকেই অন্যত্র সরে গিয়ে অত্যন্ত কষ্টের মধ্যে দিন যাপন করছেন। নিম্নচাপের প্রভাবে যদি বৃষ্টির পরিমাণ আরো বাড়ে তাহলে ফের বন্যা পরিস্থিতির মুখে পড়তে হবে বলে আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
পাঁশকুড়ার ধনঞ্জয়পুরে চাষের জমির অবস্থা।
ফের বৃষ্টিতে নতুন করে প্লাবিত হচ্ছে পাঁশকুড়া। বন্যা বিধ্বস্ত মানুষের সঙ্গী এখন হাহাকার আর চোখের জল। ‘‘সব গেছে আমাদের। কি খাব কোথায় থাকব জানিনা’’ কথা বলতে বলতে চোখ জলে ভরে এল। পশ্চিম নেকড়া এলাকায় জাতীয় সড়ক সংলগ্ন এলাকায় আশ্রয় নেওয়া মানুষজন জানেন না তাঁদের ঘর বাড়ি আস্ত আছে কিনা। মঙ্গলদাঁড়ির এক বাসিন্দা বললেন,‘‘এক ঘন্টাও সময় পাইনি। তার মধ্যেই জল বাড়তে থাকে। কোনওরকম বাড়ি ছেড়েছিলাম। জিনিসপত্র, ফসল সব রয়ে গিয়েছে।’’
এদিকে নিম্নচাপের বৃষ্টির ফলে পরিস্থিতি আরও খারাপ হচ্ছে পাঁশকুড়ার। গোবিন্দনগর গ্রাম পঞ্চায়েতের মানুর, গড় পুরুষোত্তমপুর এলাকায় নদী বাঁধ দিয়ে জল ঢুকছে নতুন করে। এই দুটি এলাকাতে বাঁধ ভেঙেছিল। নতুন করে প্লাবিত হচ্ছে ১৫ নম্বর ওয়ার্ড। বৃষ্টির ফলে কাঁসাই নদীর জলস্তর বাড়ছে। পূর্ব মেদিনীপুরের পাঁশকুড়ার বিস্তীর্ণ এলাকা ইতিমধ্যেই ডুবেছে বন্যায়। ব্লক প্রশাসন ক্ষয়ক্ষতির পরিসংখ্যান তৈরী করা শুরু করেছে। জেলা কৃষি দপ্তর সূত্রের খবর পাঁশকুড়া ও কোলাঘাট এলাকায় প্রায় ৩০ হাজার হেক্টরের বেশি জমির আমন চাষ ক্ষতি হয়েছে। প্রায় ৫ হাজার হেক্টর জমির ফুলচাষ নষ্ট হয়েছে। এছাড়া সবজি চাষের প্রায় ২০ হাজার হেক্টর জমি জলের তলায় যদিও প্রশাসন সরকারি হিসেব এখনো সম্পুর্ণ করতে পারেনি বহু এলাকায়। কংসাবতীর জলে এই এলাকাগুলি বন্যার কবলে রয়েছে এখনও। অধিকাংশ এলাকা এখনও জলমগ্ন। পুনরায় নিম্নচাপের বৃষ্টিতে বানভাসী এলাকাগুলির জনজীবন আরো সঙ্কটে পড়বে। কৃষকরা জানাচ্ছেন এখনও অবধি তাদের সমস্ত জমি জলের তলায়, সরকার যদি সাহায্য না করে তাহলে না খেতে পেয়ে মরতে হবে তাদের। প্রসঙ্গত যে সমস্ত এলাকায় জল কমেছে সেই এলাকাগুলির জমিতে ধান চাষের দফারফা হয়েছে দেখা যায়। ধনঞ্জয়পুরে চাষের জমি গুলি হলুদ হয়ে রয়েছে।
বৃহস্পতিবার পাঁশকুড়ার বন্যা কবলিত এলাকা নোয়াপাড়া ও মানুর গ্রামে এবিটিএ এর পক্ষ থেকে এবং জয়কৃষ্ণপুর দক্ষিণ গ্রামে হরিনাভি প্রগতি সংঘের পক্ষ থেকে ও রাতুলিয়া, তিলাগ্যাড়া গ্রামে রেড ভলেন্টিয়ার্সের পক্ষ থেকে এবং চন্ডিপুর ইউথ ফোরাম এর পক্ষ থেকে পাঁশকুড়া ১৫ নং ওয়ার্ডে ত্রাণ দেওয়া হয়।
Comments :0