Mamata Banarjee

ছাব্বিশে ফিরে জমা জল ‘ট্রিট’ করার আশ্বাস মমতার

রাজ্য কলকাতা

জমা জলে তড়িদাহত হয়ে শহরবাসীর মৃত্যুর পর আগামী বিধানসভা ভোটে ফিরে আসার পর শহরের জল জমা নিয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিলেন মমতা ব্যানার্জি!
১৫ বছর রাজ্যে সরকার চালাচ্ছে তৃণমূল কংগ্রেস। ক্ষমতায় এসে কলকাতাকে লন্ডন বানাবেন বলে ঘোষণা ছিল মমতা ব্যানার্জির। এখন সেই লন্ডন শহরে বৃষ্টি হলে ১০ দিন জল জমে থাকে জানিয়ে মুখ্যমন্ত্রী আগামী ২০২৬ সালে ক্ষমতায় এসে কলকাতাকে জমা জল মুক্ত করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে রেখেছেন। 
রাজ্যে ২০১১ সালে ক্ষমতায় আসলেও  ২০১০ সাল থেকে কলকাতা কর্পোরেশনের দখল রাজ্যের শাসকদলের হাতে। তার থেকেও গুরুত্বপূর্ণ রাজ্যের ৯৯ শতাংশ কাজ শেষ করে দেওয়ার ঘোষণা করে শহরের জল জমার জন্য মুখ্যমন্ত্রীকে এখন ২০২৬ সালের বিধানসভা ভোটে ক্ষমতায় ফিরে আসার প্রার্থনা করতে হচ্ছে। 
বৃহস্পতিবার দলের নেতা অরূপ বিশ্বাসের পুজোর উদ্বোধন করতে এসেছিলেন মমতা ব্যানার্জি। সেখানেই তিনি বলেন, ‘‘যদি আমি আপনাদের আশীর্বাদে ফিরে আসতে পারি, আমি জানি হাউ টু ট্রিট (কীভাবে মোকাবিলা করতে হয়)।’’ 
এমনকি শহরের জমা জল কীভাবে ‘ট্রিট’ করতে হবে তারও একটা বিকল্প পথ বাতলেছেন। মমতা ব্যানার্জি বলেছেন, ‘‘বিকল্প কী করে করতে হয় আমি জানি। আমাদের দিকে জল ঠেললে আমি তোমাদের দিকে জল ঠেলে দেব। সহজ অঙ্ক যেটা বলে।’’ 
এরাজ্যে বন্যা হলে মুখ্যমন্ত্রী এতদিন ডিভিসিকে দায়ী করে এসেছেন। রাজ্যকে না জানিয়ে ডিভিসি জল ছেড়ে দেয় বলে মুখ্যমন্ত্রীর অভিযোগ ছিল। কিন্তু প্রকৃত ঘটনা হলো ডিভিসি জলাধার থেকে জল ছাড়ার আগে ডিভিআরআরসি (দামোদর ভ্যালি রিজার্ভার রেগুলেশন কমিটি) তে আলোচনা করে কত পরিমাণ জল ছাড়া হবে তা জানিয়ে দেওয়া হয়। ডিভিআরআরসি’র কমিটিতে রাজ্য সরকারের প্রতিনিধিরা থাকেন। কিন্তু গত দুদিন আগে কলকাতায় জমা জল নিয়ে মমতা ব্যানার্জি ‘বহিরাগত জল’এর তত্ত্ব নামিয়ে ছিলেন। কলকাতায় জল জমা নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বিহার, উত্তর প্রদেশ, উত্তরাখণ্ড থেকে জল গঙ্গা হয়ে রাজ্যে আসার জন্য কলকাতায় জল জমেছে বলে অভিযোগ করেছিলেন। এদিনও কার্যত সেই সুরে মমতা ব্যানার্জি বলেন,‘‘ তোমরা আমাদের জলে ভাসাও। আমরা জল তাড়াই।’’ সেই তত্ত্ব থেকেই এদিন ২৬ সালের বিধানসভা ভোটে জয়ী হয়ে আসার পর কলকাতার জল যন্ত্রণা মিটিয়ে ফেলার আশ্বাস দিয়েছেন। 
এদিন দুপুর আড়াইটে নাগাদ কালীঘাটের বাড়ি থেকে রাজ্যের বিভিন্ন জেলার ৩০০ ক্লাবের পুজোর ভার্চুয়াল উদ্বোধন করেন। তারপর শহরে রাস্তায় পুজো উদ্বোধনে নামেন। এদিন আলিপুর বডিগার্ড লাইনে পুলিশের দুর্গাপুজোর উদ্বোধন করে পুলিশকে ভূয়সী প্রশংসায় ভরিয়ে দেন মমতা ব্যানার্জি। তারপর আসেন অরূপ বিশ্বাসের ক্লাবের পুজোয়। তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনা হলো, এদিন কলকাতা শহরে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে ৮ জনের মৃত্যুর ঘটনা নিয়ে সিইএসসি’র প্রসঙ্গে একটি কথাও উচ্চারণ করেন মুখ্যমন্ত্রী। ২৪ ঘণ্টা আগে সিইএসসি’কে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মৃত্যুর ঘটনার জন্য দায়ী করে সংস্থাকে মৃত পরিবারগুলিকে ৫ লক্ষ টাকা করে আর্থিক সাহায্য ঘোষণা করার অনুরোধ করেছিলেন।
এদিন সিইএসসি’কে নিয়ে একটি কথা না বললেও মুখ্যমন্ত্রীর উষ্মা গিয়ে পড়ে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে জমা জলে মৃত্যুর ঘটনার তদন্তের দাবিতে করা মামলাকরীদের ওপর। কলকাতা হাইকোর্টে গত বৃহস্পতিবারই মৃতদের ক্ষতিপূরণের পাশাপাশি জমা জলে মৃত্যুর ঘটনার তদন্ত নিয়ে মামলা হয়েছে। সিইএসসি’কে ছেড়ে মামলাকারীদের উদ্দেশ্যে মমতা ব্যানার্জি বলেন, ‘‘৩০০ মিলিমিটার যদি বৃষ্টি হয়, তাহলে জলটা পড়বে কোথায়? গঙ্গা তো ভর্তি। নালা ভর্তি, নদী ভর্তি, খাল, পুকুর সব ভর্তি। ৬ ঘণ্টার মধ্যে অধিকাংশ জল সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। তারমধ্যে আবার কোর্টে কেস করেছে। জল কেন জমেছে? এটা আমায় না জিজ্ঞাসা করে আকাশকে জিজ্ঞাসা করতে পারে। যারা কেস করেছে তারা তো কেন্দ্রকে জিজ্ঞাসা করতে পারে।’’ এমনকি ক্ষমতায় এসে যে কলকাতাকে লন্ডন বানাতে চেয়েছিলেন সেই লন্ডনেও বৃষ্টি হলে ১০ দিন জল জমে থাকে বলে মুখ্যমন্ত্রী জানান।
অরূপ বিশ্বাসের পুজোর উদ্বোধন করে মুখ্যমন্ত্রী মণ্ডপ সজ্জা দেখে একটু নস্টালজিক হয়ে পড়েছিলেন। স্বাধীনতা আন্দোলনে এরাজ্যের ভূমিকার প্রেক্ষাপটই থিম দেখে মুখ্যমন্ত্রীর মুখে ছিল বাংলার নবজাগরণের প্রসঙ্গ। আর তখনই তিনি বলে ওঠেন, বিদ্যাসাগরের শতবর্ষ আসছে। সম্ভবত ২৬ (সেপ্টেম্বর) তারিখ।’’ পাশে দাঁড়িয়ে ঘাড় নেড়ে সম্মতি দেন ক্রীড়া ও যুবকল্যাণ মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস। ঘটনা হলো ২০২০ সালে বিদ্যাসাগরের দ্বিশতজন্মবর্ষ পার হয়ে গেছে। আগামী ২৬ সেপ্টেম্বর ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের ২০৫ তম জন্মদিবস।

 

Comments :0

Login to leave a comment