Mamata BJP

মমতার বিজেপি-বিরোধিতা নিয়ে ‘সংশয়’ বহাল

সম্পাদকীয় বিভাগ

গৌতম দেব 
একে অমর্ত্য সেন, তার সাথে সরকারবাড়ির আনন্দবাজার। কী বলেছেন অমর্ত্য সেন? প্রধানমন্ত্রী পদে ‘যোগ্য মমতা, সংশয়েও অমর্ত্য।’ মুহূর্তমাত্র দেরি না করে ইথার তরঙ্গে তরঙ্গায়িত হয়ে এইসব শব্দবন্ধ ছুটে গেল নবান্নর ফাঁকা জানলাপথে চোদ্দতলায়। একের পর এক মোবাইল বাজতে শুরু করল— আমাদের আর এক দিদিমণি চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য এবং বলাবাহুল্য অন্যান্য দাদা-দিদিরা এইরকম না চাইতে পাওয়া সার্টিফিকেটে যারপরনাই উল্লসিত। যথারীতি বিভিন্ন রাজনৈতিক দল এ ব্যাপারে তাদের মন্তব্য, বক্তব্য রাখতে শুরু করেছে। রাহুল গান্ধী বাদে এবং সোনিয়া গান্ধীর স্ট্যাম্প হাতে নতুন কংগ্রেস সভাপতি চুপচাপ, সে আর কতক্ষণের জন্য। অমর্ত্য সেন কী বলেছেন?  সর্বময় সত্যের মালিকানা যাদের হাতে সেই আনন্দবাজার লিখেছে নবতিপর এই অর্থনীতিবিদ সংবাদ সংস্থা পিটিআই-কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে দেশের রাজনীতি সহ একাধিক বিষয়ে  মুখ খুলেছেন। বর্তমানে বিরোধী দলগুলির মধ্যে সমন্বয়ের অভাবে বিজে‍‌পি-বিরোধী জোট অনেকটাই ছন্নছাড়া অবস্থায়। এই পরিস্থিতিতে অনেকে ম‍‌নে করছেন পরবর্তী লোকসভা ভোটে অর্থাৎ আগামী বছর বিজেপি’র জয় শুধু সময়ের অপেক্ষা। কিন্তু অমর্ত্য সেনের সাবধানবাণী কলকাতা, মুম্বাই, দিল্লি, তামিলনাড়ু থেকে দেশের সর্বত্র অনুরণিত হচ্ছে যে, এই জয় অতি সহজে আসবে, এমনটা ভেবে নেওয়া ভুল হবে। কারণ পরবর্তী লোকসভা ভোটে আঞ্চলিক দলগুলি ‘স্পষ্টতই’ ‘গুরুত্বপূর্ণ’ ভূমিকা নেবে বলে মনে করেন অমর্ত্য সেন। ডিএমকে একটা গুরুত্বপূর্ণ দল—সমাজবাদী পার্টির ক্ষেত্রে একই কথা প্রযোজ্য। অমর্ত্য সেন সবচেয়ে বড় এবং সুদূরপ্রসারী অভিযোগ এনেছেন বিজেপি’র বিরুদ্ধে যে, বিজেপি দল ভারতের দৃষ্টিভঙ্গিকে উল্লেখযোগ্যভাবে সঙ্কুচিত করে দিয়েছে।  শক, হুন দল পাঠান মোগল এক দেহে হলো লীন— যার এক পা আফগানিস্তানে আর এক পা পারস্যে। বর্তমান ভারতে বিজে‍‌পি’র বিকল্প না থাকাটা দুঃখজনক হবে বলেছেন অধ্যাপক অমর্ত্য সেন। বিজেপি’র যেমন শক্তি আছে, দুর্বলতার জায়গাগুলিও স্পষ্টত দেখা যাচ্ছে।
এবারে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার প্রশ্নে আমরা জানি প্রধানমন্ত্রিত্বের জন্য যে কোয়ালিফিকেশন বা পরীক্ষা যা দিতে হয়, শুধু ভারতে নয়, পৃথিবীর অন্যত্র নানা দেশে, তাতে চায়ের দোকান অথবা চপ ভাজার দোকান অথবা দিবারাত্র মিথ্যা কথা বলার পরীক্ষায় পাশ করতে পারলে তিনি ঐ পদের যোগ্য বলে বিবেচিত হতে পারেন। কার কি সামর্থ্য আছে, তার প্রমাণ এখনও পাওয়া যায়নি। সেইজন্য আর্গুমেনটেটিভ ইন্ডিয়ানের স্রষ্টা বলেছেন এমন নয় যে তার সামর্থ্য নেই। সেই সামর্থ্য মমতার স্পষ্টতই আছে। কিন্তু অন্যদিকে এটা এখনও প্রতিষ্ঠিত হয়নি যে বিজেপি’র বিরুদ্ধে দেশের জনগণের হতাশার বিষয়গুলোকে মমতা এক গাছের তলায় এনে ভারতের বিভেদের রাজনীতির অবসান ঘটাতে নেতৃত্ব দিতে পারবেন।
পার্টি হিসাবে সিপিআই(এম) ইতিমধ্যে তাদের নির্বাচন সংক্রান্ত লাইন ঘোষণা করেছে তা সরাসরি বিজেপি’র বিরুদ্ধে। প্রধান কথা বিজেপি’কে বিচ্ছিন্ন ও পরাস্ত করা। কংগ্রেসের সাথে সিপিআই(এম) আসন রফা করবে গতকালও এটা ভাবতে পারত না। আজকে পার্টিতে খুব বেশি এই নিয়ে বিতর্ক আছে বলে মনে হয় না। কিন্তু তার মানে ভারতের মতো ভিন্ন ভিন্ন ভাষাভাষী জাতি, ধর্ম, বর্ণ ভেদে যে ভারতীয়ত্ব গড়ে উঠেছে তাতে সব দলের স্বার্থ— জাতীয় স্বার্থ নয়। বিংশ শতাব্দী এবং একবিংশ শতাব্দীর বিশ্বে অন্যতম শ্রেষ্ঠ চিন্তাবিদ অমর্ত্য সেন কারো পকেটে বাস করেন না। হয়তো বা অমর্ত্য সেন ভালোরকম জানেন বা তার প্রাজ্ঞতা দিয়ে বুঝতে পারছেন যে মমতার রাইটার্স বিল্ডিং ভেঙে নবান্নতে এইচআরবিসি ভবন দখল করে রাজত্ব চালিয়ে মাসে মাসে যে হুঙ্কার দিচ্ছেন তাতে তার প্রধানমন্ত্রী হবার উগ্রবাসনা পুরোদস্তুর বর্তমান। অথচ মমতা দিদিমণি নিজে যে পার্টির জন্ম দিয়েছেন সে পার্টি নিজে হাতে শেষ করার কাজটি নিজেই সমাপণ করছেন। অন্যদিকে বারবার প্রধানমন্ত্রী এবং ‘মুখ্যমন্ত্রী’র একান্ত বৈঠকের সংবাদ ভ্রূণাবস্থায় হত্যা করা এবং অমর্ত্য সেনের মতো অত বড় পণ্ডিত না হয়েও ভারতের রাজনীতিতে নানান ধরনের কাজে কর্মে নিয়োজিত থেকে এমন কিছু লোকসভা নেতা নেত্রী যা বলছেন— আগামী ভোটের ফলাফল সম্পর্কে তাও উড়িয়ে দেওয়ার না। তাই কি এক চালানে প্রধানমন্ত্রী এবং কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রীর সাথে বিশেষ গোপনীয়তা বজায় রেখে সভা শেষ করলেন এবং বেনিয়া স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী জানিয়ে দিয়েছেন যে তিনি বেনিয়া। আশাকরি বেনিয়ারা কিভাবে হিসাব করে চলে বা কথা বলে সেটা জনসাধারণ বোঝেন।
ফলত, সেই জনসাধারণ বোঝার চেষ্টা করছেন কী হলো মোদী মমতা মিটিং-এ। দুই থেকে তিনশো তিন সংসদ সদস্য হতে যেমন কোনও বিজ্ঞান ব্যবহার করতে হয়। মোদী এবং বেনিয়া যুগল সেই অপারেশন, সঙ্ঘ পরিবারের একশো বছর উপলক্ষে করতে পারলেন তেমনি কোনও হিসাবেই তাদের একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা হচ্ছে না আগামী লোকসভা নির্বাচনে। তার জন্য দরকার মমতা। তাই সিবিআই চলবে, ইডি, শিক্ষা, চাকরিপ্রার্থীদের আত্মহত্যা চলবে। আর ‘যোগ্য’ মমতাকে নিয়ে ‘সংশয়ও’ চলতে থাকবে।

Comments :0

Login to leave a comment