অপূর্ব মণ্ডল- বালুরঘাট
জীবনজীবিকার দাবি জোরালো হলেই বিভাজনের কৌশলে নামে তৃণমূল আর বিজেপি। বেকারি, শিক্ষা, আবাস, চিকিৎসার দাবি জোরালো হচ্ছে। বিজেপি সেই সময়েই রাজ্যভাগের আওয়াজ তুলেছে।
শনিবার দক্ষিণ দিনাজপুরে দু’টি সভায় এ’কথা বলেছেন সিপিআই(এম) রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম। এদিন বালুরঘাটে নাট্যতীর্থ সভাকক্ষে ডিওয়াইএফআই’র রাজ্য মুখপত্র ‘যুবশক্তি’ পত্রিকার ৫৭ তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী পালিত হয়। আলোচনার বিষয় ছিল ‘আরএসএস দক্ষিণপন্থার বিপদ ও প্রতিরোধের বর্ণমালা’।
সেলিম এদিন বক্তব্য রাখেন হিলিতেও। তিনি বলেন, ‘‘বিজেপি ও তৃণমূল যে একে অপরের পরিপূরক। এ কথা আমরা বামপন্থীরা বার বার বলেছি। কারণ মমতা ব্যানার্জি যতবার ইডি সিবিআই নিয়ে বিপদে পড়েছে তখনই দিল্লিতে ছুটে গিয়েছেন।’’
সেলিম মনে করিয়েছেন যে বিজেপি’র রাজ্য সভাপতি উত্তর পূর্বাঞ্চলের সঙ্গে উত্তরবঙ্গকে যুক্ত করার কথা বললেন যেদিন সেদিনই অনন্ত মহারাজ কোচবিহারকে নিয়ে আলাদা রাজ্যের দাবি তুলেছেন ফের। উল্লেখ্য, অনন্ত মহারাজের সঙ্গে সম্প্রতি দেখা করেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী এবং তৃণমূল প্রধান মমতা ব্যানার্জি।
সেলিম বলেন, ‘‘আলাদা রাজ্যের দাবি কোনও বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। এসব ‘আরএসএস অ্যান্ড কোম্পানি’-র মস্তিষ্কপ্রসূত। পরিকল্পনা করে চারিদিকে অস্থির পরিবেশ তৈরি করার চেষ্টা করছে।’’
তিনি বলেন, ‘‘দেশের উন্নয়ন করতে স্বাধীন ভারতে পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা করা হয়েছিল। তার মাধ্যমে কোথায় কল কারখানা হবে, কোথায় কৃষি বীজ উৎপাদন হবে, সার তৈরি হবে, রাস্তা ঘাট সব পরিকল্পনামাফিক হতো। বর্তমান সরকারের সে সব পরিকল্পনা নেই। বরং সরকারের কাজ বেসরকারি হাতে দিয়ে দিচ্ছে। ফলে সারের দাম বাড়ছে, বীজের দাম আকাশ ছোঁয়া। কৃষি সামগ্রীর দাম বাড়ছে। কর্পোরেট দুনিয়ায় দেশটাকে বিক্রি করেদিচ্ছে এই সরকার। কয়লা, তেল, গ্যাস, রেলপথ, আকাশ পথ, মিডিয়া সব বিক্রি করে দিচ্ছে আদানি আম্বানির কাছে। অর্থাৎ ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে বেসরকারি কর্পোরেটদের কথাতেই উঠতে বসতে হবে।’’
তিনি বলেন, ‘‘রাজ্যে দুর্নীতি হচ্ছে। আমরা দেখেই চলছি ইডি সিবিআই এর নাটক, জাল একটা স্তরে গিয়ে আর এগোয় না। বিজেপি এবং তৃণমূল, ক্ষতিকর দুই শক্তির বিরুদ্ধেই লড়তে হবে।’’
প্রাকৃতিক দুর্যোগ উপেক্ষা করে বালুরঘাটে নাট্যতীর্থ সভাকক্ষ উপচে পড়ে এদিন। সংগঠনের রাজ্য সম্পাদক মীনাক্ষী মুখার্জি, প্রাক্তন যুবনেতা আভাস রায় চৌধুরী, ‘যুবশক্তি’ পত্রিকার সম্পাদক কলতান দাশগুপ্ত বক্তব্য রাখেন। ধর্মের নামে মানুষের মধ্যে বিভেদের তৈরির চেষ্টা সম্পর্কে সতর্ক করেন তাঁরা। মনে করিয়েছেন, দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসে যে আরএসএস’র ভূমিকা নেই তারাই আজ দেশপ্রেমের নামে বিদ্বেষ ছড়াচ্ছে।
সভায় ছিলেন ডিওয়াইএফআই দক্ষিণ দিনাজপুরের জেলা সভাপতি সমীরণ সাহা, সম্পাদক শুভ্রজিৎ দাস সহ নেতৃত্বৃন্দ। সভা পরিচালনা করেন সংগঠনের রাজ্য সভাপতি ধ্রুবজ্যোতি সাহা। এদিনই হিলিতে সিপিআই(এম) দপ্তর ‘সৌরীশ সরকার ভবন‘-র উদ্বোধন হয়েছে। হিলিতে ছিলেন দক্ষিণ দিনাজপুরের সিপিআই(এম)’র ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক নন্দলাল হাজরা, হিলি এরিয়া কমিটির সম্পাদক সমীর রায় প্রমুখ।
Comments :0