পেরুর বামপন্থী রাষ্ট্রপতি পেদ্রো ক্যাস্টিলোকে সরানোর পর দায়িত্ব নিলেন উপরাষ্ট্রপতি দিনা বুলার্তে। বুধবার পেরুর সংসদ বা ‘কংগ্রেস’ ভেঙে দিয়ে বিকল্প সরকার বা ‘গভর্নমেন্ট অফ এক্সেপশন’ প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা করেন ক্যাস্টিলো। কিন্তু সেই চেষ্টা ভেস্তে গিয়েছে। গ্রেপ্তার করা হয়েছে ক্যাস্টিলোকে।
ঘটনার সূত্রপাত বুধবার। পেরুর সংবিধানের ১১৩ নম্বর ধারা প্রয়োগ করে বামপন্থী ক্যাস্টিলোকে পদচ্যুত করে সেদেশের সংসদ। এর পালটা বিকল্প সরকার প্রতিষ্ঠার কথা বলেন ক্যাস্টিলো। যদিও ক্যাস্টিলোর পাশে দাঁড়ায়নি সামরিক বাহিনী। সেই সুযোগে ক্যাস্টিলোকে অপসারিত করে দেশের দায়িত্ব নেন দিনা বুলার্তে। প্রসঙ্গত, পেরুর রাজনৈতিক ইতিহাসে তিনিই প্রথম মহিলা রাষ্ট্রপতি। যদিও পেরুর ওয়াকিবহাল মহলের বক্তব্য, সংবিধানের অপপ্রয়োগ করে ক্যাস্টিলোকে ক্ষমতাচ্যুৎ করা হয়েছে।
২০২১ সালে পেরুর সাধারণ নির্বাচনে পেদ্রো ক্যাস্টিলো এবং দিনা বুলার্তে উভয়েই বামপন্থী পার্টি ফ্রি পেরুর’র টিকিটে রাষ্ট্রপতি এবং উপরাষ্ট্রপতি পদে প্রতিদ্বন্দিতা করেন। কিন্তু ২০২২ সালের গোড়া থেকে বুলার্তে একাধিক দলবিরোধী মন্তব্য করা শুরু করেন। ক্যাস্টিলোকে একাধিক নীতি প্রণয়নের ক্ষেত্রে বাধাও দেন বুলার্তে। এর প্রেক্ষিতে ২০২২ সালের জানুয়ারি মাসে তাঁকে দল থেকে বহিষ্কার করে ফ্রি পেরু। তখন থেকেই আশঙ্কা দেখা দেয় , সংসদের দক্ষিণপন্থী জোটের সঙ্গে হাত মেলাতে পারেন বুলার্তে।
২০২১ সালের নির্বাচনে পেরুর প্রেসিডেন্ট পদে বামপন্থী প্রার্থী পেদ্রো ক্যাস্টিলো জয়ী হলেও, ১৩০ আসনের কংগ্রেসের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নিতে ব্যর্থ হয় ক্যাস্টিলোর দল ফ্রি পেরু। সংসদের নিয়ন্ত্রণ থাকে দক্ষিণপন্থী জোটের হাতে। দীর্ঘদিন ধরেই ক্যাস্টিলোকে একাধিক বামপন্থী নীতি প্রণয়নে বাধা দিয়ে এসেছে সেদেশের সংসদ। দক্ষিণপন্থী সাংসদদের অভিযোগ, ক্যাস্টিলোর নেতৃত্বে দূর্নীতি হয়েছে। তাই সংবিধানের মূল্যবোধের অবক্ষয় রোধী ধারা প্রয়োগ করে বুধবার ক্যাস্টিলোকে ক্ষমতাচ্যুৎ করা হয়।
এর পাল্টা সাংবাদিক সম্মেলন করে পেরুর সংসদ ভেঙে দিয়ে ‘গভর্নমেন্ট অফ এক্সেপশান’ প্রতিষ্ঠার কথা ঘোষণা করেন ক্যাস্টিলো। একইসঙ্গে ৯ মাসের মধ্যে নতুন সংবিধান এবং যত শীঘ্র সম্ভব পুনরায় নির্বাচনের মাধ্যমে নতুন করে কংগ্রেস গঠনের কথাও বলেন তিনি। কিন্তু তাঁকে ফুরসৎ না দিয়েই রাজনৈতিক ক্ষমতার হাত বদল ঘটল পেরুতে।
সংবাদ সংস্থা টেলেসুর জানিয়েছে, দায়িত্ব নেওয়ার পরেই বুলার্তে ঘোষণা করেন, ক্যাস্টিলোর নেওয়া সংবিধান সংশোধনের সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করা হবে। একইসঙ্গে বর্তমান সংসদও আপাতত ভেঙে দেওয়া হবে না।
পেরুর রাজনৈতিক মহল জানাচ্ছে, বিকল্প সরকার প্রতিষ্ঠার জন্য সামরিক বাহিনীর সাহায্য লাগত ক্যাস্টিলোর। কিন্তু সেই সাহায্য মেলেনি। এর অন্যতম মূল কারণ হল, দীর্ঘদিন ধরেই সেনাবাহিনীর সাহায্যে সেদেশের বামপন্থী গেরিলাদের বিরুদ্ধে অভিযান চালিয়ে এসেছে পেরুর একের পর এক ডানপন্থী রাষ্ট্রপতি। ২০২১ সালে রাজনৈতিক পালাবদল ঘটলেও, সেনাবাহিনীর নিয়ন্ত্রণ এখনও দক্ষিণপন্থী মনোভাবাপন্ন অফিসারদের হাতেই রয়েছে। স্বাভাবিক ভাবেই তাঁরা বামপন্থী রাষ্ট্রপতির পাশে এসে দাঁড়াননি। তারফলে সাধারণ মানুষের বিপুল সমর্থন থাকলেও পদ হারাতে হল ক্যাস্টিলোকে।
সর্বশেষ পাওয়া খবর অনুযায়ী, ক্যাস্টিলোকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাঁকে পেরুর রাজধানী লিমা শহরের একটি থানায় রাখা হয়েছে। ইতিমধ্যেই রাষ্ট্রপতি ভবনের কর্তৃত্বভার বুঝে নিয়েছেন দিনা বুলোর্তে।
Comments :0