কর্মরত অবস্থায় হাসপাতালের ভিতরেই ধর্ষণের শিকার হয়ে খুন হওয়া মহিলা চিকিৎসকের পরিবারকে টাকার বিনিময়ে গোটা ঘটনা মিটিয়ে নেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছিল পুলিশ!
আর জি কর কাণ্ডে এমনই চাঞ্চল্যকর ভয়াবহ অভিযোগ এবার সামনে এল। কলকাতা পুলিশের এক উচ্চপদস্থ আধিকারিক এমনই ‘অফার’ দিয়েছিল ধর্ষণের পরে খুন হওয়া তরুণী চিকিৎসককে। এমনকি যখন পরিবারের সদস্যদের কাছে টাকার ‘অফার’ দিয়েছে পুলিশ সেই সময় তাঁদের মেয়ের শেষকৃত্য পর্যন্ত সম্পন্ন হয়নি। কতটা অমানবিক, নৃশংস হতে পারলে সদ্য খুন হওয়া তরুণী চিকিৎসকের মা’কে এমন প্রস্তাব দেওয়া যাতে পারে তা স্বাভাবিকভাবেই গুরুতর প্রশ্ন তুলে দিয়েছে এবার আর জি কর কাণ্ডে।
এদিনই ওই তরুণী চিকিৎসকের বাড়িতে গিয়ে তাঁর বাবা-মায়ের সঙ্গে দেখা করেন জয়েন্ট প্ল্যাটফর্ম অব ডক্টরর্স-এর তরফে চিকিৎসকদের একটি প্রতিনিধি দল। সন্তান হারানো পরিবারের পাশে থাকার বার্তা নিয়েই চিকিৎসকরা গিয়েছিলেন বাবা-মায়ের কাছে। তাঁদের সামনে কথা বলতে গিয়ে কার্যত কান্নায় ভেঙে পড়েন নিহত তরুণী চিকিৎসকের মা-বাবা’। সেই সময়তেই ওই তরুণী চিকিৎসকের মা জানান, সেদিন পুলিশে এক উচ্চপদস্থ কর্তা তাঁদের টাকার অফার দিয়েছিলেন। এমন প্রস্তাব শুনে তাঁরাও বিস্মিত। বাবা-মা দু’জনেই কার্যত বাক্রুদ্ধ হয়ে পড়েন। তখনও মেয়ের শেষকৃত্য হয়নি। তখন টাকা পয়সার অফার দেয় পুলিশ। মৃতার বাবা-মা তখন পালটা বলেছিলেন, ‘আপনার উর্দিতে যে স্টার আছে তা আপনি পড়াশোনা করে, খেটে অর্জন করেছেন। আমার মেয়েও খেটে ডাক্তার হওয়ার সুযোগ অর্জন করেছিল। আমরা পারবো না এসব নিতে।’
কামদুনির বর্বরতা থেকে ছাত্রনেতা আনিস খানের খুনের ঘটনায়, এরাজ্যে বারেবারে দেখা গেছে প্রতিবাদীদের, নির্যাতিতাদের পরিবারকে সরকারের কিনে নেওয়ার চেষ্টা। প্রত্যাখ্যাতও হতে হয়েছে বারেবারে। কামদুনির আন্দোলনের সময়েও নির্যাতিতার ভাই সহ পরিবারের সদস্যদের টাকা দিয়ে কিনে নেওয়ার চেষ্টা হয়েছিল। আবার হাওড়ার আমতায় খুন হওয়া প্রতিবাদী ছাত্রনেতা আনিস খানের বাড়িতে মধ্যরাতে গিয়ে তাঁর বাবাকে সরাসরি টাকার অফার দিয়েছিলেন ‘মুখ্যমন্ত্রীর প্রতিনিধি’ হিসাবে দাবি করা একটি বৈদ্যুতিন চ্যানেলের জেলখাটা প্রধান। তা নিয়ে বিস্তর প্রতিক্রিয়াও তৈরি হয়েছিল অবশিষ্ট রাজ্যে।
এদিন এদিন জয়েন্ট প্লাটফর্ম অব ডক্টরসের চিকিৎসকদের সাতজনের একটি প্রতিনিধিদল ছাত্রীটির বাড়িতে যান। ডাক্তারি পাঠরত মৃত ছাত্রীর পরিবারের লোকজনদের সাথে কথা বলেন। পরে বাইরে বেরিয়ে সাংবাদিকদের কাছে সংগঠনের যুগ্ম সম্পাদক সুবর্ণ গোস্বামী জানান, ভারতে এই ঘটনা বেনজির। হাসপাতালের ভিতরে কর্মরত অবস্থায় এক চিকিৎসককে ধর্ষণ করে খুন করা হয়েছে তা বেনজির ঘটনা। এরপরেই তিনি বলেন, ‘আমাদের কাছে খুন হওয়া তরুণী চিকিৎসকের মা বলেছেন পুলিশে এক পদাধিকারী এসে ওনাদের কাছে নাকি টাকা পয়সার অফার করেছেন। শুনে আমরা তাজ্জব বনে গেলাম। যদি কোনও কিছু ধামাচাপা দেওয়ার না থাকে তাহলে টাকা পয়সার অফার দিতে হবে কেন’। এরপরেই সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে ফের তিনি বলেন, ‘মৃতার মা আমাদের বলেছেন, যখন শেষকৃত্যও হয়নি সেই সময়টাতেই নাকি ওনাদের এমন টাকার অফার দেওয়া হয়েছিল’।
সব মহলেই প্রশ্ন উঠেছে, পুলিশকে শেষকৃত্যের আগেই ছুটে গিয়ে টাকার প্রস্তাব দিতে হয়েছে কেন? ইতিমধ্যে খুন হওয়া চিকিৎসকের পরিবারের তরফে অভিযোগও তোলা হয়েছে ঘটনার পরে সকালে বেলায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তাঁদের ফোন করে বলেছিল যে আমাদের মেয়ে নাকি আত্মহত্যা করেছে! এত বড় মিথ্যা কেন? স্পষ্টতই শরীরের একাধিক ক্ষত, অর্ধনগ্ন দেহ, হাড় ভাঙা থাকা অবস্থাতেও হাসপাতাল থেকে কেন ফোন বলা হলো আত্মহত্যা? প্রথম থেকেই কি কিছু লুকানোর চেষ্টা? কেন শবদেববাহী গাড়িতে তাঁদের যেতে দেওয়া হয়নি। তাঁদের আটকে রেখে সেদিন কেন আগে মৃতদেহ নিয়ে যাওয়া হয়েছিল, এমন একাধিক প্রশ্ন উঠছে। আর তার মধ্যেই এবার সদ্য সন্তান হারানো পরিবারকে টাকা দিয়ে কেনার সরকারের ঘৃণ্য কৌশলের অভিযোগ সামনে আসায় রীতিমত চাঞ্চল্য তৈরি হয়েছে।
RG KAR
টাকা দিয়ে রফার চেষ্টা করেছিল পুলিশ ভয়ঙ্কর অভিযোগ তুললেন নির্যাতিতার মা-বাবা
×
Comments :0