বেনজির ভাবে সরকারি উদ্যোগে চেষ্টা হয়েছে প্রমাণ লোপাটের। সূত্রের খবর, আরজি কর কান্ডে তদন্ত এগিয়ে নিয়ে যেতে গিয়ে এমনটাই মনে করছেন সিবিআই’র আধিকারিকরা।
সিবিআই’র একটি অংশ জানাচ্ছে, একাধিক দফায় এবং ছকে লোপাট করা হয়েছে আরজি কর কান্ডের প্রমাণ। এমন ‘নিঁখুত’ চিত্রনাট্য লেখা সরকারের উপরের স্তর ছাড়া সম্ভব নয়।
ঠিক কি ভাবে নষ্ট করা হয়েছে প্রমাণ? তাঁরা বলছেন, প্রথমত পিডাব্লিউডি’র ওয়ার্ক অর্ডার ছাড়া ভাঙা হয়েছে ক্রাইম সিন, অর্থাৎ সেমিনার রুমের পাশের বাথরুমটি। কে বা কার নির্দেশে সেটি ভাঙা হল, তার কোনও সদুত্তর নেই। ইঙ্গিত স্পষ্ট। এরপর রয়েছে পুলিশের প্রশ্রয়ে কয়েকশো দুষ্কৃতিতে হাসপাতালে ঢুকিয়ে অবাধে ভাঙচুর করতে দেওয়া। সেই ঘটনারও প্রভাব পড়ছে তদন্তে।
যদিও সিবিআই’র তদন্তের পরেও নতুন গ্রেপ্তারি নেই কেন, উঠছে সেই প্রশ্নও।
প্রমাণ লোপাট ও প্রাথমিক তদন্তে অসঙ্গতি ধরা পড়েছে সুপ্রিম কোর্টের চোখেও। এদিন দেশের সর্বোচ্চ আদালত প্রশ্ন করেছে, এফআইআর দায়েরে দেরি কেন হল? কেনই বা মৃতার পরিবারকে ভুল তথ্য দিয়েছিলেন আরজি কর হাসপাতালের আধিকারিকরা? কোন উদ্দেশ্যে? কেনই বা তড়িঘড়ি আরজি কর মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষকে সরিয়ে অন্য জায়গায় পাঠিয়ে দেওয়া হল? যেখানে শুরু থেকেই তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠছিল?
মঙ্গলবার সুপ্রিম কোর্টে তুমুল ভর্ৎসনার মুখে পড়েছে রাজ্য সরকার এবং কলকাতা পুলিশ। সর্বোচ্চ আদালত নির্দেশ দিয়েছে, এবার থেকে সরাসরি সুপ্রিম কোর্টকে তদন্তের স্ট্যাটাস রিপোর্ট দিতে হবে। প্রসঙ্গত, নির্যাতিতার পরিবারের দাবিকে মান্যতা দিয়ে সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দিয়েছিল কলকাতা হাইকোর্ট। পরিবারের তরফে আদালতে সওয়াল করেন বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য।
এদিন রাজ্যের উপর অনাস্থা জানিয়ে সুপ্রিম কোর্ট বলেছে, প্রয়োজনে আরজি কর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের নিরাপত্তার জন্য সিআইএসএফ মোতায়েন করা হোক।
এই গোটা বিষয় থেকে নজর ঘোরাতে তৃণমূলের তরফে বলা হচ্ছে, সিবিআই ৭ দিনেও কেন নতুন করে কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারল না? রাজ্যের শাসকদলের যুক্তি, গ্রেপ্তারি নেই, তাই তদন্তে অগ্রগতিও নেই। এর থেকে প্রমাণিত হয় কলকাতা পুলিশ সঠিক তদন্ত করছিল। ঘটনায় গ্রেপ্তার হওয়া সিভিক পুলিশকর্মী ছাড়া কেউ জড়িত নয়।
সিবিআই সূত্রে খবর, আরজি কর কান্ডে সন্দীপ ঘোষকে দফায় দফায় জেরা করা হচ্ছে। মঙ্গলবার ৮ ঘন্টার উপর জিজ্ঞাসাবাদ করা হয় তাকে। এর পাশাপাশি হাসপাতালের পড়ুয়া, চিকিৎসক, স্বাস্থ্যকর্মী, নিরাপত্তারক্ষী সহ ২০ জনের বেশি মানুষের বয়ান নেওয়া হয়েছে, জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। কিন্তু বিভৎস পরিমাণে প্রমাণ লোপাটের ফলে তদন্তে সমস্যা হচ্ছে। সুবিধা পাচ্ছে ‘অপরাধী’রা।
এই প্রেক্ষিতে প্রাক্তন পুলিশ আধিকারিকরা বলছেন, ধৃত সিভিক কর্মীর গ্রেপ্তারির বিষয়টিকে কাঁচা নাটকের স্ক্রিপ্টের সঙ্গে তুলনা করাই যায়। অভিযুক্ত অপরাধ ঘটালেন, তারপর প্রকাশ্যে মদ্যপান করলেন, তারপর হাসপাতাল থেকে পুলিশ ব্যারাকে ফিরে গেলেন, সেখানেও সবার সামনে ঘুরে বেড়ালেন, ফের হাসপাতালে এলেন, এবং পুলিশ সেখান থেকে তাকে গ্রেপ্তার করল। অভিযুক্তের এই ঘোরাফেরার সঙ্গে একই ধরণের ঘটনায় দোষী কিংবা অভিযুক্তদের কাজের কোনও মিল নেই। এতবড় ঘটনা ঘটালে অপরাধীর মনস্তত্ত্বেও তার প্রভাব পড়ার কথা। সেই জায়গা থেকে এমন গাছাড়া কাজ করা সম্ভব নয়।
ফলে কলকাতা পুলিশের সবেধন নীলমণি গ্রেপ্তারও ক্রমেই উঠে আসছে আতশ কাঁচের তলায়।
Comments :0