School series

শ্রীহীন শিক্ষাঙ্গন-৪: সম্পন্ন এলাকায় শিক্ষা বাজার, গরিব এলাকায় ধুঁকছে স্কুল

রাজ্য

শুভ্রজ্যোতি মজুমদার: শ্রীরামপুর
 

২৫টি স্কুল বন্ধ হয়ে যাওয়ার তালিকায় আছে সিঙ্গুরে। সেখানেই, রাজ্যের পঞ্চায়েত দপ্তরের প্রতিমন্ত্রী বেচারার মান্নার বাড়ির পিছনে তৈরি হচ্ছে চোখ ধাঁধানো বেসরকারি স্কুল। 
সিঙ্গুর এখন বেসরকারি স্কুলের হাব। সিঙ্গুর এখন শিক্ষার বাজার। গ্রামের ভিতরে পৌঁছে যাচ্ছে গাড়ি। মাঝারি কৃষক, কৃষক আবার ব্যবসায়ীও—এমন পরিবারের সন্তানরা স্কুলের পোশাক ড্রেস পরে উঠে বসছে সেই গাড়িতে।  
কিন্তু এই ছবিটাই সব নয়। তার জন্য যেতে হবে চাঁপদানির ফয়েজ আহমেদ ফয়েজ উর্দু মাধ্যম হাইস্কুলে। ২০০০-র বেশি ছাত্র। শিক্ষক আছেন, যা থাকার কথা তার অর্ধেক। আদাবি সোসাইটি হাই মাদ্রাসাতেও এক ছবি। শিক্ষকদের অভাবে ধুঁকছে হিন্দিভাষী স্কুলও।  
স্কুল বন্ধ হচ্ছে চন্দননগরেও। কোথাও শিক্ষকদের অভাব। কোথাও ছাত্রদের। 
যেমন, চন্দননগর কর্পোরেশন পরিচালিত মডেল হাই স্কুল উঠে গিয়েছে। শিক্ষকদের অন্য জায়গায় বদলি করা হয়েছে। সাধুচরণ বিদ্যামন্দির সেখানে কোনও ছাত্র নেই, কয়েকজন শিক্ষক আছেন। ছাত্র স্বল্পতায় ভুগছে শ্রী শিক্ষানিকেতন, বিদ্যাসাগর বিদ্যামন্দির, সুলেখা মাতৃমন্দির, মহাডাঙা সুভাষ বিদ্যামন্দির, দুর্গাচরণ রক্ষিত বঙ্গ বিদ্যালয়। 
প্রবণতা দু’টি। প্রথমত, গরিব পরিবারের সন্তানদের স্কুলগুলিতে শিক্ষক নেই। দ্বিতীয়ত, যে এলাকায় গ্রাম, শহরের সম্পন্ন মানুষের বাস, সেখানে বেসরকারি স্কুলের রমরমা। 
শিল্পের মতো শিক্ষাতেও বেহাল দশা। কোনও স্কুলে শিক্ষক নেই, আবার শিক্ষক থাকলেও নেই পর্যাপ্ত ছাত্র-ছাত্রী। কোনওক্রমে চলছে রাজ্যের মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক স্কুলগুলি। 
হুগলি জেলার অবস্থাও তার থেকে খুব একটা আলাদা না। এই জেলাতেও বন্ধের মুখোমুখি হাইস্কুল বা জুনিয়র হাইস্কুলের সংখ্যা চারটে মহকুমা জুড়ে ৩২টির মতো। পড়ুয়ার সংখ্যা ৫০-৪০-র মধ্যে বা শিক্ষক ১৬-১৮ জন। এই কম শিক্ষক নিয়ে কোনোরকমে চলছে স্কুলগুলি। কোন্নগর কল্যাণ পরিষদ স্কুল বন্ধ হয়ে গিয়েছে। বিভাস চন্দ্র গার্লস হাইস্কুল আগে যেখানে ১০০ জনের অপর পড়ুয়া পড়তো, এখন তা অর্ধেকের কম। গ্রামেঞ্চলের স্কুলগুলির অবস্থাও খুব একটা ভালো না। 
এবিটিএ হুগলি জেলা সম্পাদক প্রিয়রঞ্জন ঘটক বলেন বর্তমান ১৩ বছর ধরে যে শিক্ষাব্যবস্থা চলছে রাজ্য, তাতে সাধারণ পরিবারের সন্তান সেই সুযোগ থেকে প্রায় বঞ্চিত হওয়ার মতো অবস্থা। মূলত তিনটি কারণে এই হাল।  প্রথমত শিক্ষক-শিক্ষাকর্মী নিয়োগ বন্ধ। দ্বিতীয়ত অহেতুক ছুটি। অত্যন্ত অবৈজ্ঞানিক সিলেবাস অনুসরণ করা হচ্ছে তাতে ছাত্র-ছাত্রীদের পড়াশুনার প্রতি আগ্রহই চলে যাচ্ছে। সরকার আর সরকারি শিক্ষায়তনগুলির দায় নিতে চাইছে না। তারা কার্যত বেসরকারি শিক্ষাকে উৎসাহ যোগাচ্ছে। আর্থিকভাবে পিছিয়ে পড়া অংশের ছাত্র-ছাত্রীরা পড়াশোনার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। 
এসএফআই হুগলি জেলা সম্পাদক বাদশা দাস বলেন, সার্বিকভাবে সরকারি শিক্ষাব্যবস্থাকে তুলে দিতে চাইছে তৃণমূল সরকার। গোটা শিক্ষাব্যবস্থাকে বেসরকারি করার পরিকল্পনা। তাই স্কুলগুলিতে কোনও শিক্ষক নিয়োগ নেই। আমরা আগস্ট মাস জেলা জুড়ে এই শিক্ষানীতির বিরোধিতা করে পথে নেমেছি।
 

Comments :0

Login to leave a comment