জাতিবিদ্বেষী গুজবকে কেন্দ্র করে গত সপ্তাহের পরে আরও একবার অশান্ত হওয়ার প্রহত গুনছে ইউকে বা যুক্তরাষ্ট্র। সেদেশের সংবাদমাধ্যম জানাচ্ছে, ব্রিটেনের উগ্র দক্ষিণপন্থী শক্তিগুলি সারা দেশের অন্তত একশোটি জায়গায় অভিবাসী ও মুসলমান বিরোধী হিংসা ঘটানোর চক্রান্ত করেছে। গত সপ্তাহের হিংসায় অভিবাসীদের ধর্মীয়স্থলের পাশাপাশি তাঁদের আশ্রয় দেয় এমন সংস্থাগুলির দপ্তরে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়।
সংঘর্ষের প্রেক্ষিতে ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী কায়ার স্টার্মার বলেছেন, ‘‘আমরা হিংসা রুখতে অত্যন্ত দ্রুত কড়া পদক্ষেপ নিচ্ছি। লিভারপুলের হিংসার সঙ্গে যুক্ত তিনজনকে দীর্ঘমেয়াদী কারাদন্ড দেওয়া হয়েছে। আপনি যদি ইউকে’র রাস্তায় বা সোশ্যাল মিডিয়ায় হিংসা এবং ঘৃণা ছড়ান, তাহলে আপনাকে আইনের মুখোমুখি হতেই হবে। কাউকে রেয়াত করা হবে না।’’
লিভারপুলে হিংসা ছড়ানোর ঘটনায় দোষী সাব্যস্ত তিনজন হলেন ডেরেক ড্রামন্ড, ডেকলান গেইরান এবং লিয়াম রাইলি। তাঁদের আড়াই থেকে তিন বছরের কারাদন্ড দেওয়া হয়েছে। গত সপ্তাহে কার্ডিফ, লিভারপুল, বেলফাস্ট, বার্মিংহ্যাম, বল্টন, হাল, লিডস, লন্ডন, ম্যানচেস্টার, নটিংহ্যাম, সান্ডারল্যান্ড সহ গোটা ইউকের ২০টি জায়গায় হিংসা ছড়ায় বিভিন্ন উগ্র দক্ষিণপন্থী সংগঠনের সদস্যরা।
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম জানাচ্ছে, উগ্র দক্ষিণপন্থী সংগঠনগুলির টেলিগ্রাম চ্যানেলগুলি থেকে তথ্য ফাঁস হয়েছে। সেই তথ্য অনুযায়ী বুধবার ইউকে জুড়ে ৩০টির বেশি জায়গায় তান্ডব করার চক্রান্ত রয়েছে উগ্র দক্ষিণপন্থীদের। সেই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সক্রিয় হয়েছে ব্রিটিশ প্রশাসন। ম্যানচেস্টার পুলিশ সহ ইউকে’র সমস্ত বড় শহরের পুলিশ বাহিনী সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট দিয়ে জনজীবন স্বাভাবিক রাখার আহ্বাণ জানিয়েছে। ব্রিটিশ প্রশাসন জানিয়েছে, হিংসায় যুক্ত থাকার অভিযোগে গত কয়েকদিনে ৪২৫ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। নতুন করে হিংসা ঠেকাতে ৬ হাজারের বেশি রায়ট পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
তারপরেও হিংসা সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে আসেনি। রাতের অন্ধকারে ব্রিটেন জুড়ে অভিবাসীদের উপর চোরাগোপ্তা হামলা চলছে। অভিবাসীদের ব্যবসায়ীক প্রতিষ্ঠান ও প্রার্থনাস্থলেও হামলা হয়েছে।
পুলিশি ব্যবস্থার পাশাপাশি উগ্র দক্ষিণপন্থীদের রোখার জন্য সংগঠিত হচ্ছেন ব্রিটেনের ধর্মনিরপেক্ষ ও বাম ঘেঁষা মানুষ। একাধিক জায়গায় উগ্র দক্ষিণপন্থীদের পালটা জমায়েতের ডাক দেওয়া হয়েছে। গত সপ্তাহে এই অংশের পালটা সক্রিয়তায় একাধিক জায়গায় উগ্র দক্ষিণপন্থীদের রুখে দেওয়া সম্ভব হয়েছিল।
প্রতিরোধের সামনের সারিতে রয়েছে ‘স্ট্যান্ড আপ টু রেসিজম’ নামে একটি সংগঠন। তাঁদের তরফে মানুষকে পথে নামার আহ্বাণ জানিয়ে বলা হয়েছে, ‘‘অভিবাসীদের আইনি সহায়তা দেওয়া আইনজীবী, অভিবাসীদের সাহায্য করা দাতব্য কেন্দ্র ও অভিবাসীদের সহায়তা দেওয়া সংস্থাগুলির কার্যালয়কে রক্ষা করতেই হবে।’’
প্রসঙ্গত ২৯ জুলাই সাউথপোর্টে এক আততায়ীর ছুরি হামলায় ৩জন শিশুকন্যা প্রাণ হারায়। ৮ শিশু এবং ২জন প্রাপ্ত বয়স্ক আহত হয় সেই ঘটনায়। ঘটনার পরে স্থানীয় মার্সিসাইড পুলিশের তরফে আক্রমণকারীর পরিচয় গোপন রাখা হয়, কারণ ব্রিটেনের আইন অনুযায়ী, অভিযুক্ত অপ্রাপ্তবয়স্ক হলে বিচার শুরু না হওয়া অবধি তার পরিচয় প্রকাশ্যে আনা অপরাধ।
উগ্র দক্ষিণপন্থীরা এর সুযোগ নিয়ে গুজব ছড়ায় আক্রমণকারী অবৈধ ভাবে ব্রিটেনে প্রবেশ করা মুসলমান অভিবাসী। পরবর্তীকালে পুলিশ জানায়, অভিযুক্তের নাম অ্যাক্সেল রুডাকুবানা। আফ্রিকার রাওয়ান্ডার বংশদ্ভূত অ্যাক্সেল ইসলাম ধর্মাবলম্বি নয়। কিন্তু তারপরেও গুজবকে হাতিয়ার করে ইউকে জুড়ে মুসলমান বিদ্বেষী হিংসা ছড়ানো অব্যাহত রাখে উগ্র দক্ষিণপন্থীরা, এবং সাউথপোর্ট শহর তীব্র মুসলমান বিদ্বেষী হিংসার সাক্ষী থাকে। শহরের মসজিদেও হামলার চেষ্টা করা হয়। যদিও পুলিশ ও ধর্ম নিরপেক্ষ মানুষের সক্রিয়তায় পিছু হঠতে বাধ্য হয় উগ্র দক্ষিণপন্থীরা।
Comments :0