Ssc scam

আদালতে যাবতীয় আবেদন খারিজ, অভিষেকের সিবিআই জেরা আজ সকালেই

কলকাতা

 কয়লা পাচার কাণ্ডে এর আগে দিল্লি ও কলকাতা মিলিয়ে তিনবার জেরার মুখে পড়েছিলেন। এবার স্বাধীনতার পরে পশ্চিমবঙ্গের বুকে সর্ববৃহৎ নিয়োগ কেলেঙ্কারিতেও আদালতের নির্দেশের জেরেই সিবিআই’র জেরার মুখে পড়তে চলেছেন তৃণমূল সাংসদ অভিষেক ব্যানার্জি। 
বৃহস্পতিবার কলকাতা হাইকোর্টে বিচারপতি অমৃতা সিনহার একক বেঞ্চ অভিষেক ব্যানার্জির রক্ষাকবচের আবেদন খারিজ করে বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের নির্দেশই বহাল রাখার নির্দেশ দেওয়ার পরেই অভিষেক ব্যানার্জির জেরা সময়ের অপেক্ষাই ছিল।
আদালতের রায়ের পরে শুক্রবার দুপুরেই অভিষেক ব্যানার্জিকে সমন পাঠিয়ে শনিবার সকাল ১১টায় নিজাম প্যালেসে হাজিরা দিতে বলা হয়েছে সিবিআই’র তরফে। কুন্তল ঘোষের সেই চিঠি সংক্রান্ত অর্থাৎ প্রাথমিক নিয়োগ দুর্নীতিতে মূল আবেদনকারী চাকরিপ্রার্থী সৌমেন নন্দীর মামলায় কলকাতা হাইকোর্টের রায়ের পরিপ্রেক্ষিতেই তাঁকে তলব করা হয়েছে বলে জানানো হয়েছে সিবিআই’র সমনে। 
সমন প্রাপ্তির কথা নিজেই স্বীকার করে এদিন অভিষেক ব্যানার্জি যদিও ফের দাবি করেন, ‘যারা আমাদের বিরুদ্ধে রায় দিয়েছে সম্মান করি। যদি আমার বিরুদ্ধে কোনও প্রমাণ মেলে, আমি সেই বিচারপতিকেই বলব ফাঁসির আদেশ দিতে। সারদা, নারদ, কয়লা, গোরু— কোনও মামলাতেই আমার বিরুদ্ধে কিচ্ছু পায়নি। ওরা আমার স্ত্রী, আইনজীবী এমনকি আপ্ত সহায়ককেও ছাড়েনি। কিন্তু কিচ্ছু পায়নি। আমি তদন্তে সহযোগিতা করবো, আজকে রাতেই কলকাতায় ফিরবো।’
জেরায় সহযোগিতা করতে তিনি প্রথম থেকেই প্রস্তুত বলে বারেবারে দাবি করলেও জেরা ঠেকাতে ডিভিসন বেঞ্চে গিয়েছিলেন অভিষেক ব্যানার্জি। বিচারপতি অমৃতা সিনহার একক বেঞ্চের রায়ের ওপর স্থগিতাদেশের আবেদন জানিয়ে দ্রুত ডিভিসন বেঞ্চে শুনানির আবেদন করা হয়েছিল ভাইপো সাংসদের তরফে। যদিও বিচারপতি সুব্রত তালুকদার এবং বিচারপতি সুপ্রতিম ভট্টাচার্যের ডিভিসন বেঞ্চ জরুরি ভিত্তিতে এই মামলা শুনতে এদিন রাজি হননি। 
এদিন সকালে ডিভিসন বেঞ্চের তরফে স্পষ্টভাবে জানানো হয়, পূর্বনির্ধারিত অনেক মামলা রয়েছে। এখনই মামলা শোনা যাবে না। গ্রীষ্মের ছুটির পর আদালত খুললে সম্ভব হবে। ফলে এদিনের শুনানির রাস্তা বন্ধ হয়ে যায়। এদিকে সোমবার থেকে হাইকোর্টে গ্রীষ্মাবকাশ। ফলে অবকাশকালীন বেঞ্চে আবেদন করা ছাড়া আর কোনও রাস্তা ছিল না মুখ্যমন্ত্রীর ভাইপোর কাছে। যদিও তারপরেও অভিষেক ব্যানার্জি এবং নিয়োগ কাণ্ডে ধৃত কুন্তল ঘোষের তরফে এদিন প্রধান বিচারপতির কাছে যাওয়া হয়। কিন্তু সেখানেও আগে থেকে নির্ধারিত মামলার চাপ থেকে জরুরি ভিত্তিতে শোনা সম্ভব নয় বলে জানানো হয়।
এরপর আর রাস্তা খোলা ছিল না অভিষেক ব্যানার্জির কাছে। ততক্ষণে পৌঁছে যায় সিবিআই সমনের নোটিস। আদালতের দরজা বন্ধ হওয়ায় বাধ্য হয়েই কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার সঙ্গে ‘সহযোগিতার’ রাস্তায় তৃণমূলের এই শীর্ষ নেতা।
তবে সমন পাওয়ার পরেই দলীয় কর্মসূচি থেকে রীতিমত সিবিআই-কে চ্যালেঞ্জ করেই অভিষেক বলেন, ‘সিবিআই-কে চ্যালেঞ্জ দিচ্ছি ক্ষমতা থাকলে গ্রেপ্তার করে দেখাক’। এর আগে নিয়োগ দুর্নীতির তদন্তেই অভিষেক ব্যানার্জির ব্যবসার শরিক সুজয় কৃষ্ণ ভদ্র ওরফে কালীঘাটের কাকু একই সুরে বলেছিলেন, আমার সাহেবকে (অভিষক ব্যানার্জি) ছোঁয়ার ক্ষমতা পৃথিবীর কারো নেই!
সিবিআই’র জেরার নোটিস পাওয়ার পরে এদিন অভিষেক ব্যানার্জি আরও উদ্ভট দাবি করেন, ‘সিবিআই’র সাহস থাকলে আমাকে প্রকাশ্যে জেরা করুন, সংবাদমাধ্যমের সামনে জেরা করা হোক’। আদালতের নির্দেশে শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মী নিয়োগ দুর্নীতির তদন্ত, সেই তদন্তের জেরা পর্ব আদৌ সংবাদমাধ্যমের সামনে সম্ভব? পরিকল্পিতভাবেই জেরা পর্বের আগে দলীয় কর্মী, সমর্থকদের উত্তেজিত করার চেষ্টা করেছেন তিনি। 
অভিষেক ব্যানার্জিকে জেরা সংক্রান্ত যে নির্দেশ দিয়েছিলন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়, দীর্ঘ সওয়াল ও দফায় দফায় নাটকীয় পরিস্থিতির পরে শেষমেশ বৃহস্পতিবার সেই নির্দেশই বহাল রাখেন বিচারপতি অমৃতা সিনহার একক বেঞ্চ। খারিজ হয় রক্ষাকবচের আরজিও। শুধু আবেদন খারিজ করে দেওয়াই নয়, আদালতে সময় নষ্ট করার অভিযোগে একই সঙ্গে অভিষেক ব্যানার্জি ও কুন্তল ঘোষকে ২৫ লক্ষ টাকা করে জরিমানার নির্দেশও দেন বিচারপতি অমৃতা সিনহার একক বেঞ্চ।
তবে আদালত অভিষেক ব্যানার্জির নাম নিয়োগ কেলেঙ্কারির তদন্তে সামনে আনেনি। তাঁর নাম প্রথম থেকেই সামনে আনেন তাঁর দলের যুব সংগঠনের রাজ্য নেতা ধৃত কুন্তল ঘোষ। এমনকি কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার সূত্রে জানা গেছে শুধু কুন্তল ঘোষ নয়, আরও দু’জনের জেরাতেও অভিষেক ব্যানার্জির নাম সামনে এসেছিল। নিয়োগ কাণ্ডেই ধৃত তৃণমূল ঘনিষ্ঠ শিক্ষা ব্যবসায়ী তাপস মণ্ডল এক মাসেও আদালতের ঢোকার সময় প্রকাশ্যেই সাংবাদিকদের সামনে বলেন, অভিষেক ব্যানার্জির নাম করেই নিয়োগ কাণ্ডে ধৃত যুব তৃণমূলের রাজ্য সম্পাদক কুন্তল ঘোষ টাকা তুলেছিল। সেই টাকার পরিমাণও প্রায় ৫০০ কোটি! সেই কীর্তিমানকেই ২০২২ সালের নভেম্বরে যুব তৃণমূলের রাজ্য সম্পাদক বানান অভিষেক ব্যানার্জি। 
এর আগে নিয়োগ মামলায় একাধিকবার নিম্ন আদালতে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা জানিয়েছিল ধৃত তৃণমূল নেতা শান্তনু ব্যানার্জির মোবাইল ঘেঁটে যা তথ্য মিলেছে তা প্রকাশ্যে বলা যাচ্ছে না। বিচারপতিকে উদ্দেশ্য করে বলা হয়েছিল, সেই নাম শুনলে আপনি চমকে যাবেন। এরপর নিয়োগ কাণ্ডেই অভিষেক ঘনিষ্ঠ মুর্শিদাবাদের বড়ঞার বিধায়ক জীবন কৃষ্ণ সাহার গ্রেপ্তারির পরেও সামনে আসে একাধিক চাঞ্চল্যকর তথ্য। ফলে নিয়োগ কাণ্ডে এই প্রথমবার জেরার মুখে পড়তে চলা অভিষেক ব্যানার্জি আদৌ স্বস্তিতে নেই।  
ডিভিসন বেঞ্চেও তাঁর আবেদন না শোনার পরেই সিবিআই’র কপি উল্লেখ করেই অভিষেক ব্যানার্জি টুইট করে বলেন, ‘আমি ভেবেছিলাম আমায় ৪৮ ঘণ্টা সময় দেবে। কিন্তু তা করেনি’। তবে জেরা ঠেকানোর সবরকম চেষ্টাই করেছিলেন। দলীয় সমাবেশের মঞ্চে দাঁড়িয়ে বারেবারে বলছেন যদি কোনও দুর্নীতিতে আমার যুক্ত থাকার কোনও প্রমাণ মেলে তবে ইডি, সিবিআই-কে লাগবে না আমি নিজেই হেঁটে গিয়ে ফাঁসিতে ঝুলবো! অথচ তদন্ত প্রক্রিয়াকে আওতা থেকে নিজেকে বাঁচাতে বারেবারে আদালতেই দ্বারস্থ হয়েছেন তৃণমূল সাংসদ অভিষেক ব্যানার্জ। সুপ্রিম কোর্ট থেকে হাইকোর্টের ডিভিসন বেঞ্চ, দৌড়াতে হয়েছে সর্বত্রই। বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের এজলাস থেকে প্রাথমিক নিয়োগের দুটি মামলা সরিয়ে দেওয়ার সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশের পরে কার্যত বিজয়োল্লাসের ঢঙে বক্তব্য রাখা শুরু করেছিলেন তৃণমূল নেতারা। 
শেষমেশ কয়লা পাচার কাণ্ডের পরে আরও একটি দুর্নীতিতে জেরার মুখেই বসতে হচ্ছে ভাইপো সাংসদকে।

 

Comments :0

Login to leave a comment