Ssc scam

সব টাকা কিংপিন পার্থের, দাবি অর্পিতার

কলকাতা

নিয়োগ দুর্নীতির তদন্তে অভিষেক ব্যানার্জিকে জেরার করার ওপর কোনও স্থগিতাদেশ নেই। রক্ষাকবচ-হীন ভাইপো সাংসদ অভিষেক ব্যানার্জি। যদিও নতুন করে অভিষেক ব্যানার্জিকে নিয়োগ দুর্নীতিতে জেরার সমন না পাঠালেও মঙ্গলবারই ইডি’র জেরার মুখে পড়ার কথা সুজয় কৃষ্ণ ভদ্র ওরফে কালীঘাটের কাকুর।
  আগামীকাল সকাল ১১টায় নিজাম প্যালেসে হাজিরা দেওয়ার কথা অভিষেক ব্যানার্জি তথা মুখ্যমন্ত্রীর পরিবারের অন্যতম ঘনিষ্ঠ এই ব্যক্তির। তদন্তকারী সংস্থার দাবি, নিয়োগকাণ্ডে রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে এজেন্টদে তোলা টাকা এই ব্যক্তি কাছে এসে পৌঁছাতো। সুজয় ভদ্র কোনও সরকারি পদে নেই, শাসক তৃণমূলেরও কোনও পদে নেই।কালীঘাটের কাকুর একটাই পরিচয় তিনি অভিষেক ব্যানার্জির ব্যবসার অংশীদার ছিলেন, এখনও অভিষেক ব্যানার্জির ক্যামাক স্ট্রিট অফিসের কর্মী। তাহলে কী শীর্ষ মাথায় পৌঁছে দেওয়ার ভাগের মিডলম্যান ছিলেন কালীঘাটের কাকু? 
নিয়োগকাণ্ডে মানি লন্ডারিংয়ের তদন্তেই এবার প্রথম ইডি’র জেরার মুখে পড়তে চলেছেন সুজয় কৃষ্ণ ভদ্র। তিনি জেরায় হাজিরা দেন কিনা তাও দেখার। তদন্তকারী সংস্থা সূত্রে জানা গেছে, তদন্ত এড়ানোর পথে হাঁটলে তদন্তকারী সংস্থাও কঠোর পদক্ষেপের পথেই হাঁটবে। ইতিমধ্যে সুজয় ভদ্রের বাড়িতে ১৫ ঘণ্টার তল্লাশি অভিযানে একাধিক নথি, তথ্য হাতে এসেছে ইডি’র। গত ২০ তারিখে বেহালায় কালীঘাটের কাকুর বাড়িতে ফকিরপাড়া রোডের ফ্ল্যাট, বাড়ি, অফিসে একযোগে তল্লাশি চালায় ইডি। জানা যায় সুজয় ভদ্রের প্রায় বারোটির মতো নামে বেনামে সম্পত্তির হদিশ মিলেছে। সেই সম্পত্তির উৎস জানাতে পারেননি তিনি। কালীঘাটের কাকুর কোম্পানিতে একাধিক রহস্যজনক বিপুল টাকার লেনদেনেরও হদিশ মিলেছে। এরই মধ্যে সলিটায়র প্লেসমেন্ট সার্ভিসেস লিমিটেড নামে একটি সংস্থা গুটিয়ে ফেলা হচ্ছে। ২০১০ সালের জুন মাসে তৈরি হওয়া এই সংস্থার বোর্ড অফ ডিরেক্টরসে রয়েছে সুজয় ভদ্রও।
এদিকে নিয়োগ দুর্নীতিকাণ্ডে আদালতেই এদিন ধৃত অর্পিতা মুখার্জির তরফে জামিনের আবেদন জানিয়ে তাঁর আইনজীবী দাবি করেন, ‘অর্পিতা মুখার্জি পরিস্থিতির শিকার, পার্থ চ্যাটার্জি এই গোটাকাণ্ডের মাস্টারমশাই। অর্পিতা চ্যাটার্জি ব্যবহৃত হয়েছেন’।
তবে এদিন ইডি’র তরফে আদালতে যে সাবমিশন জমা দেওয়া হয়েছে তাতে জানানো হয়েছে খোদ অর্পিতা মুখার্জি জেরায় স্বীকার করেনছে বেলঘরিয়ার যে ফ্ল্যাট থেকে নগদে ২৭কোটি ৯০ লক্ষ টাকা উদ্ধার হয়েছিল গত জুলাই মাসে সেই টাকা পার্থ চ্যাটার্জিরই। ঐ ফ্ল্যাটের ঠিকানাতেই ‘অনন্ত টেক্সফ্যাব প্রাইভেট লিমিটেড’ নামে একটি সংস্থা ছিল। সেটা পার্থ চ্যাটার্জি চালাতেন। পার্থ চ্যাটার্জির পরিবারের সদস্যদের শেয়ার ছিল, তাতে তাঁর কোন বিনিয়োগ ছিল না। গোটা কাজটাই চলতো পার্থ চ্যাটার্জির বাড়ি থেকে। ইডি’র দাবি অর্পিতা মুখার্জির সঙ্গে পার্থ চ্যাটার্জির পরিবারের শেয়ার লেনদেনের তথ্য হাতে এসেছে। জেরায় অর্পিতা মুখার্জি স্বীকার করেছেন উদ্ধার হওয়া টাকা, সম্পত্তি পার্থ চ্যাটার্জির। কোথা থেকে এত টাকা এল তা পার্থ চ্যাটার্জিই ভালো বলতে পারবেন। 
অর্পিতা জানিয়েছেন, ‘বেলঘরিয়ার ফ্ল্যাট অনন্ত টেক্সফ্যাবের রেজিস্টার্ড অফিস ছিল। আমার সাথে অনন্ত টেক্সফ্যাবের সম্পর্ক কি! আমাকে ব্যবহার করা হয়েছিল অনন্ত টেক্সফ্যাবের শেয়ার ট্রান্সফার করার জন্য। পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের স্ত্রীর মৃত্যুর পর মেয়ে বিদেশে থাকায় এটা করা হয়। ওই সংস্থার ১০০ শতাংশ শেয়ার হোল্ডার পার্থর পরিবারের হাতেই ছিল,  এই সব সংস্থার সব কাজও হত পার্থ চ্যাটার্জিরর বাড়িতে থেকে। এটা যদি দাবা খেলা হয় তাহলে তার রাজা কে সেটা পরিস্কার।’
তবে জামিনের আবেদনের বিরোধিতা করা ইডি বলে, এই গোটা ষড়যন্ত্রের বিষয়টি জানতেন অর্পিতা মুখার্জি। প্রথমে জেরায় তা অস্বীকার করেছিলেন, বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করেছিলেন। নিয়োগ দুর্নীতির টাকা পার্কিং করার জন্য নিজের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট পার্থ চ্যাটার্জিকে ব্যবহার করতে দিয়েছিলেন অর্পিতা মুখার্জি। অর্পিতা মুখার্জিকে এই মুহূর্তে জামিন দিলে তদন্তের ক্ষতি হবে। ইডি’র তরফে আইনজীবী বলেন,  ‘অর্পিতা মুখার্জির তরফেই বলা হচ্ছে পার্থ চ্যাটার্জি চ্যাটার্জিই এই দুর্নীতির খেলায় রাজা। তাহলে ওনাকেই ঠিক করতে হবে উনি ডিফ্যাক্টো রানি নাকি পার্থ চ্যাটার্জিকে কাকু বলবেন। কারণ তাঁর জীবন বিমার ফরমে পার্থ চ্যাটার্জির সই রয়েছে ‘কাকু’ হিসাবে’।
দু-পক্ষের সওয়াল জবাব শেষে যদিও রায়দান এদিন স্থগিত রাখেন বিচারক। আগামী বুধবার জামিনের আবেদনের শুনানির পরিপ্রেক্ষিতে রায় দেবেন বিচারক।
 

Comments :0

Login to leave a comment