ABPS

রেগায় আধার ভিত্তিক মজুরি বাতিলের দাবি পলিট ব্যুরোর

জাতীয়

কংগ্রেসের নেতৃত্বাধীন প্রথম ইউপিএ সরকারের আমলে গ্রামের গরিব মানুষকে কাজের মাধ্যমে আয়ের নিশ্চয়তা দিতে তৈরি করা হয়েছিল মহাত্মা গান্ধী জাতীয় গ্রামীণ কর্মসংস্থান নিশ্চয়তা আইন। প্রচলিত নাম রেগা। মোদী সরকার সেই আইনভিত্তিক প্রকল্পে মজুরি দেওয়ার ক্ষেত্রে বাধ্যতামূলক ক‍‌রেছে আধারের ব্যবহার। রেগায় এই আধার ভিত্তিক মজুরি প্রদান ব্যবস্থা (আধার বেসড পেমেন্ট সিস্টেম বা এবিপিএস) চালু করার সিদ্ধান্তের জোরালো প্রতিবাদ জানালো সিপিআই(এম) পলিট ব্যুরো। মঙ্গলবার এক বিবৃতিতে পলিট ব্যুরো বলেছে, মোদী সরকার এই সিদ্ধান্তের মধ্য দিয়ে কোটি কোটি শ্রমিকের কাজের অধিকার কেড়ে নিয়ে গ্রামীণ কর্মসংস্থান নিশ্চয়তা আইনের উপর আক্রমণ নামিয়ে এনেছে। ওই আইন অনুযায়ী, প্রত্যেক গ্রামীণ শ্রমিকের জব কার্ড পাওয়ার অধিকার রয়েছে এবং জব কার্ড থাকলেই এক জন বছরে অন্তত ১০০ দিন কাজ পাওয়ার অধিকারী। 
বিবৃতিতে বলা হয়েছে, জাতীয় গ্রামীণ কর্মসংস্থান নিশ্চয়তা আইনকে প্রথম লঙ্ঘন করা হয়েছে তখনই, যখন কেন্দ্রীয় সরকার জব কার্ডধারীদের এবিপিএস’র যোগ্য এবং অযোগ্য বলে ভাগ করেছে। সরকারের তথ্য বলছে, জব কার্ডধারী বা নথিভুক্ত ২৫ কোটি ২৫ লক্ষ গ্রামীণ শ্রমিকের মধ্যে মাত্র ১৪ কোটি ৩৫ লক্ষ এবি‍‌পিএস’র যোগ্য। কারণ, গত তিন বছরে তাঁরা অন্তত এক দিন কাজ করেছেন। বাকি জব কার্ডধারীদের কারও যদি এখন রেগায় কাজের দরকার হয়, তাহলে তিনি আর কাজ পাবেন না। কারণ, তাঁকে অযোগ্য বলে চিহ্নিত করেছে সরকার। এর অর্থ, ১০ কোটিরও বেশি শ্রমিক, আইন অনুসারে যাঁদের সবারই জব কার্ড পাওয়ার অধিকার আছে, তাঁদের এ‍‌বিপিএস’র অযোগ্য বলে ঘোষণা করা হয়েছে এবং এভাবে রেগায় তাঁদের কাজ পাওয়ার অধিকার কেড়ে নেওয়া হলো। 
পলিট ব্যুরো আরও বলেছে, এমনকী যে ১৪ কোটি ৩৫ লক্ষ জব কার্ডধারীকে এবিপিএস’র জন্য তথাকথিত যোগ্য বলা হচ্ছে, তাঁদের প্রায় ১২.৭ শতাংশের অর্থাৎ প্রায় ১.৮ কোটি শ্রমিকের এবি‍‌পিএস নেই। সুতরাং তাঁরাও রেগায় কাজ করার যোগ্য বলে বি‍‌বেচিত হবেন না। এর আগে সরকার রেগায় অনলা‍‌ইনে নাম নথিভুক্তিকরণের শর্ত চাপিয়ে দিয়েছিল। গ্রামীণ ভারতের বিরাট অংশে ইন্টারনেট সংযোগ অত্যন্ত দুর্বল বলে কাজের জায়গায় উপস্থিত শ্রমিকদের অনেকেই তা করাতে পারেননি। সেই থেকে অনলাইন নথিভুক্তিকরণ ছাড়া তাঁদের মজুরি দেওয়া হচ্ছে না। এমএনআরইজিএ বা মহাত্মা গান্ধী জাতীয় গ্রামীণ কর্মসংস্থান নিশ্চয়তা আইনের উপর এ এক সর্বাত্মক আক্রমণ। এই আইনে নানা অপ্রতুলতা আছে, যেমন কাজ পাওয়ার সুযোগ একশো ‍‌দিনের মধ্যে সীমাবদ্ধ। কিন্তু তা সত্ত্বেও রেগা গ্রামীণ গরিব মানুষের কাছে জীবনরেখা বলে প্রমাণিত হয়েছে, বিশেষত যখন বেকারত্বের কারণে গ্রামীণ জীবনে ব্যাপক বিপর্যয় নেমে এসেছে। এখন মোদী সরকার এমন একটি আইনি অধিকারের উপর আক্রমণ নামিয়ে আনতে প্রযুক্তিকে ব্যবহার করছে। রেগায় শ্রমিকদের যে অধিকারের নিশ্চয়তা দেওয়া হয়েছে, তার উপর এই বেআইনি আক্রমণ অত্যন্ত নিন্দনীয়। অবিলম্বে কেন্দ্রীয় সরকারকে রেগায় মজুরি প্রদানে এবিপিএস বাধ্যতামূলক করার সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করতে হবে। 
এদিকে বিভিন্ন মহল থেকে এবিপিএস’র বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানানো হলেও মোদী সরকার এই সিদ্ধান্তে অনড় থাকার একগুঁয়ে মনোভাব দেখাচ্ছে। কেন্দ্রের গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রী গিরিরাজ সিং মঙ্গলবার রীতি মতো হুমকি দিয়ে বলেছেন, যেসব রাজ্য রেগায় মজুরি প্রদানে এবিপিএস চালু করবে না, কেন্দ্র তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেবে। গত সোমবার এই এবিপিএস বাধ্যতামূলক করে নির্দেশিকা জারি করেছে মোদী সরকার। তার এক দিনের মধ্যেই মন্ত্রী হুঁশিয়ারি দিলেন। পূর্বতন ইউপিএ সরকারের গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রী এবং কংগ্রেস নেতা জয়রাম রমেশ সোমবারই অভিযোগ করেছিলেন, মোদী সরকার আধারের মতো প্রযুক্তিকে গরিব মনুষের বিরুদ্ধে অস্ত্র হিসাবে প্রয়োগ করছে। এদিন বর্তমান গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রী গিরিরাজ কিশোর দাবি করেছেন, রেগা‌য় মজুরি প্রদানে স্বচ্ছতা আনতেই এ‍‌বিপিএস চালু করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তবে এই তথাকথিত স্বচ্ছতা আনার কথা কেন প্রায় দশ বছর সরকার চালানোর পরে মোদী সরকারের মাথায় এল, সেটাই প্রশ্ন। আগে রেগায় বরাদ্দ কমিয়েছে মোদী সরকার। তাতে গ্রামের গরিব মানুষের কাছে এই আইনে কাজ পাওয়ার সুযোগ একপ্রস্থ কমেছে। এবার আধারের নামে আরও অনেককে রেগার বাইরে ছিটকে দিয়ে গ্রামীণ কর্মসংস্থান নিশ্চয়তা প্রকল্পে আরও কম অর্থ খরচের ব্যবস্থা করতেই মজুরির সঙ্গে যুক্ত করা হলো আধারকে, এই মতই জোরালো হয়ে উঠেছে।  
 

Comments :0

Login to leave a comment