Insaf Yatra

যৌবনের পদযাত্রায় প্লাবন জনতার

রাজ্য

অনন্ত সাঁতরা ও শুভ্রজ্যোতি মজুমদার: চুঁচুড়া

ইনসাফ যাত্রা ঘিরে জনপ্লাবন দেখা গেল হুগলীর শিল্পাঞ্চলে। 
বুধবার শ্রীরামপুরে পদযাত্রার শুরু থেকেই ছিল মানুষের ঢল। জিটি রোড ধরে পদযাত্রা শেওড়াফুলি, বৈদ্যবাটি, চাঁপদানি, ভদ্রেশ্বর বাজারে যত এগিয়েছে, মানুষের সমাগম ততই বেড়েছে। 
হুগলী জেলায় মোট ১৫টি জুট মিল আছে। এর মধ্যে ২টি বন্ধ। বাকি সবকটি ধুঁকছে। এই জুটমিল এলাকার মধ্য দিয়ে পদযাত্রা যাবার সময় চাঁপদানির পলতাঘাটে নর্থব্রুর্ক, ডালহৌসি জুটমিলের অগণিত চটকল শ্রমিকদের ঢল নেমেছিল। পদযাত্রা আরও কিছুটা এগনোর পর অঙ্গাস জুট মিল মোড়ে শ্রমিকরা সংবর্ধনা দেন। ওই সময় মীনাক্ষী মুখার্জি বলেন,‘‘জুটমিল শ্রমিকদের আত্মহত্যার পথে ঠেলে দিয়েছে সরকার। দুই সরকার ভোটে জিতে শ্রমিককে দেওয়া প্রতিশ্রুতি রাখেনি। আসলে মালিক এবং শাসকদলের গোপন বোঝাপড়ায় শ্রমিকদের স্বার্থ বিসর্জন দিচ্ছেন। এদের বিরুদ্ধেই আমাদের লড়াই। আপনাদের দাবিগুলি নিয়ে ইনসাফ যাত্রা এগিয়ে চলেছে। আপানারা জুটমিল বাঁচাতে যে লড়াই আন্দোলন করবেন ডিওয়াইএফআই সেই সব আন্দোলনে আপনাদের পাশে থাকবে।’’ জুটমিল শ্রমিক এক তৃণমূল সমর্থক বলেন, জুটমিল বাঁচানোর লড়াইয়ের বামপন্থীরা সব সময় এগিয়ে থাকে। সরকারের কোনও সদিচ্ছা দেখা যাচ্ছে না। ফলে অসংখ্য জুট মিল শ্রমিক সঙ্কটের মধ্যে দিনযাপন করছেন। 
শহরাঞ্চলের মধ্য দিয়ে যখন ইনসাফ যাত্রা চলছে। সেই সময় জেলার বিস্তীর্ণ কৃষি বলয়ে অকাল বর্ষণের দরুন আলু, ধান ও সবজি ফসলের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এই পদযাত্রায় হাঁটছেন তারকেশ্বর ব্লকের তুল্যান গ্রামের আলুচাষি মহাদেব দাস, অসিতবরণ দাঁড়ি সহ বিভিন্ন ব্লকের ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরা। তাঁদের দাবি সরকারকে আমাদের উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। সেই দাবিতে আমরা ইনসাফ যাত্রায় হাঁটছি। জাঙ্গিপাড়ার আটপুর এক পদযাত্রী জানান, বিএ-এমএ পাশ করে এ রাজ্যে চাকরির কোনও সুযোগ নেই। যোগ্যতা নিয়ে চাকরির পরীক্ষায় পাশ করে ধর্মতলায় বসে দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন করছেন। সরকার তাদের চাকরির ব্যবস্থা করছে না। এখন মুখ্যমন্ত্রী বলছেন, চপ শিল্পের কথা। তাই বেকারের কাজের দাবিতে আমরা ইনসাফ চাই। আজ পদযাত্রায় হাঁটছি। ৭ই ব্রিগেড যাবো।
শেওড়াফুলিতে মহিলা সমিতি, মেডিক্যা ল রিপ্রেজেন্টেটিভদের সংগঠন, ঘোষ মার্কেটের সামনে পৌর কর্মচারী পরিবারের সদস্যরা, বৈদ্যবাটি ও ভদ্রেশ্বরে বহু মানুষ উপস্থিত হয়ে পদযাত্রীদের উৎসাহিত করেন। ভদ্রেশ্বরে জড়ো হওয়া মানুষের আবদারে ফুলের তোড়া ও মালা নিয়ে সংবর্ধনা দেওয়ার সময় দাঁড়াতে হয়। দুপুরে ভদ্রেশ্বর গেটবাজারে জনসভা হয়। বক্তব্য রাখেন হিমঘ্নরাজ ভট্টাচার্য, মীনাক্ষী মুখার্জি, ধ্রুবজ্যোতি সাহা ও শুভঙ্কর দাস প্রমুখ। সভাপতিত্ব করেন সুমন মাল। জনসভায় যুব নেতৃবৃন্দ বলেন, বন্ধ কলকারখানা খোলার দাবিতে আগামী দিনে আরও বড় আন্দোলন গড়ে তোলা হবে। বিজেপি-তৃণমূল মিলে কিছুদিন আগে রিষড়া ও বাঁশবেড়িয়ায় দাঙ্গা বাধানোর চেষ্টা করেছিল। মানুষের ঐক্যকে ভেঙে বিভাজনের রাজনীতি করতে চক্রান্ত করছিল। কিন্তু মানুষ দাঙ্গা চায়নি। তাই ওই দুই দলের অপচেষ্টাকে রুখে দেওয়া হয়েছিল। 
পদযাত্রা বারাসত গেট পেরিয়ে চন্দননগর পৌঁছাতেই মহিলা ঢাকিদের ঢাকের বোলে ইনসাফ যাত্রা ভিন্ন মাত্রা পায়। জ্যোতি মোড় তেমাথায় বাঁধভাঙা উচ্ছ্বাস ও উদ্দীপনা দেখা যায়। মহিলা নৃত্যশিল্পীরা নাচের মধ্য দিয়ে পদযাত্রীদের অভ্যর্থনা জানান। এরপর মূল পদযাত্রার আগে আরও বড় মিছিল এগিয়ে চলে। বড় বড় মল, দোকান পাট, আবাসন থেকে কর্মীবৃন্দ ও আবাসিকরা পদযাত্রার ছবি মোবাইল ফোনে তুলতে থাকেন। বিভিন্ন স্কুলের ছাত্র-ছাত্রীরা পদযাত্রা দেখতে রাস্তার দু’ধারে ভিড় জমায়। পদযাত্রায় উপস্থিত ছিলেন হিমঘ্নরাজ ভট্টাচার্য, মীনাক্ষী মুখার্জি, দেবজ্যোতি সাহা, পারমিতা ঘোষ চৌধুরি সহ গণআন্দোলনের নেতা রবীন দেব ও দেবব্রত ঘোষ ও অন্যান্যরা।
ডিওয়াইএফআই লেখা ৭০ ফুটের ব্যানার নিয়ে এগিয়ে চলেন যুব কর্মীরা। ইনসাফ যাত্রা থেকে বিপ্লবী চারুচন্দ্র রায়, মাখনলাল ঘোষাল, কানাইলাল দত্ত, কালীচরণ ঘোষের মূর্তিতে মাল্যদান করে শ্রদ্ধা জানান রাজ্য নেতৃত্ব। নৃত্যগোপাল স্মৃতি মন্দির থেকে বাগবাজার মোড় পর্যন্ত রেড কার্পেট বিছিয়ে ইনসাফ যাত্রাকে অভ্যর্থনা জানানো হয়। রাস্তার মোড়ে চন্দননগরের আইনজীবীরা, বাজার মোড়ে বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকে, লালদিঘির সামনে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য পেনশনার্স সমিতি, অল বেঙ্গল মিউনিসিপাল পেনশনার্স সমিতি, চন্দননগর হাসপাতাল মোড়ে , লক্ষ্মীগঞ্জ বাজারে বিভিন্ন গণসংগঠনের পক্ষ থেকে বিপুল জমায়েতের মধ্য দিয়ে সংবর্ধনা ও অর্থসাহায্য দেওয়া হয়। 
সন্ধ্যায় মশাল হাতে নিয়ে পদযাত্রীরা চুঁচুড়ার দিকে এগিয়ে চলে। চুঁচুড়া খাদিনা মোড়ে ব্যাপক জমায়েত করে পদযাত্রীদের সংবর্ধনা দেওয়া হয়। এরপর চুঁচুড়া ঘড়ির মোড়ে এসে জনসভা হয়। 
হুগলী জেলার এক অন্যতম ঐতিহ্যশালী শহর শ্রীরামপুর। অন্যদিকে এই শহর শিল্পের শহর হিসাবে দীর্ঘদিন ধরে সুপরিচিত। এখন সেই শিল্প শহর ধুঁকছে।   এই শহরে অসংখ্য কারখানা বন্ধ। মাদুরা কোটস, স্ট্যান্ডার্ড, ম্যাকডাওয়েলস আরও কত। খোলা থাকলেও রোজকার ডাল-ভাত জোগাড় করছে চটকলকর্মী বন্ধুরা। হয় আবাসন না হয় টোটোর কাজ ছাড়া বাইরে আর কোনও কর্মসংস্থান নেই শহরটায়। যা আছে তাতে স্বজনপোষণ, হাসপাতালে বা পৌরসভায়, সেগুলোও অস্থায়ী। চুঁচুড়া ঘড়ির মোড়ের সভায় অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন স্থায়ী পদযাত্রী অভিজিৎ ঘোষ।

Comments :0

Login to leave a comment