POWER CUT BENGAL

বেড়েছে কেবল দাম, বিদ্যুতের সঙ্কট রাজ্যজুড়ে

রাজ্য

POWER CUT BENGAL এমনই ছবি ঘুরেছে সোশাল মিডিয়ায়।

সুভাষ রায়রানাঘাট

একটা সময় ছিল যখন বিকেল হলেই মা ঠাকুমারা স্নান করে গা ধুয়ে পরিপাটি হয়ে হারিকেন চিমনি নিয়ে বসে পড়তেনসুতির কাপড় দিয়ে ভালো করে মুছে তেল ভরে সলতে টেনে রেখে পরিপাটি করে গুছিয়ে রাখতেন হারিকেনকারণ সন্ধ্যে হলেই নিয়ম করে শুরু হবে লোডশেডিং। 

এটা ছিল আটের দশকের গোড়ার দিকের গ্রাম বাংলা তথা গোটা পশ্চিমবঙ্গের পরিচিত ছবি। বামফ্রন্ট সরকার সবেমাত্র সরকারে এসেছেছোট ছোট করে শিল্প স্থাপন হচ্ছেসঙ্গে ভূমি ও সেচ ব্যবস্থার ব্যাপক সংস্কারের মধ্যে দিয়ে কৃষিতে জোয়ার আসছেচাষের মাঠে জলের চাহিদা মেটাতে শ্যালো মেশিনঅন্যদিকে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে লোডশেডিংয়ের বহর।  পাড়ার মোড়ে চায়ের দোকান থেকে শুরু করে বাড়ির ছাদে বা উঠোনে হাত পাখা নিয়ে সন্ধ্যে থেকে বসে থাকা ছিল এক নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনা। 

অবস্থার ক্রমশ পরিবর্তন ঘটেস্থাপিত হয় একের পর এক মেগা বিদ্যুৎকেন্দ্র।বস্তুত সে সময় কেন্দ্রের সরকারই কেবল বাধা দেয়নি। রাজ্যে বিরোধীদের বাধার মুখেও তৈরি হয়েছে কেন্দ্র। ফলে নতুন শতাব্দীতে লোডশডিংকে অনেকাংশে পিছনে ফেলা গিয়েছিল। চাষের খেতেও পৌঁছে দেওয়া হচ্ছিল বিদ্যুৎ। এবং তা কম দামে। দেশের মধ্যে সবচেয়ে কম দাম বিদ্যুৎ মিলত যে যে রাজ্যে তার একটি পশ্চিমবঙ্গ। এখন চড়া দাম, এমনকি ক্রেতাদের না জানিয়েই নানা কৌশলে চড়া বিলের সঙ্গে অভ্যস্ত হয়ে উঠতে হচ্ছে। নতুন বড় কোনও একটিও প্রকল্প হাতে ধরে শুরু করে গড়ে তুলতে পারেনি তৃণমূল কংগ্রেস সরকার।

কিন্তু এখন বেশ কিছুদিন ধরে বলা ভালো মাসাধিক কাল ধরে নিয়ম করে সকাল সন্ধ্যে রাত্রি বা মধ্য রাত্রিতে চলছে ভয়াবহ লোডশেডিং। গোটা রাজ্যের অধিকাংশ এলাকা ডুবে থাকছে চরম অন্ধকারে। গত মে জুন মাসেও প্রতিদিন সন্ধ্যেবেলায় দু থেকে তিন ঘন্টা ধরে গোটা রাজ্যের বিভিন্ন জেলাতে নিয়ম করে 'পাওয়ার কাটচলছিলমাঝে  কিছুটা অবস্থার পরিবর্তন হলেও আবারো শুরু হয়েছে লোডশেডিং এর দাপট। শুরু হয়েছে সোশ্যাল মিডিয়াতেও ট্রোলিংফেসবুক হোয়াটসঅ্যাপ টুইটারের বিভিন্ন পেজে দেখা যাচ্ছে রাতের আকাশ থেকে জ্বলজ্বলে ভারতবর্ষের ছবি আর পশ্চিমবঙ্গে সম্পূর্ণ কালো অন্ধকার। 

নতুন কোন শিল্প স্থাপন হচ্ছে না বরং চালু হয়ে থাকা শিল্পগুলো ক্রমশ বন্ধ হয়ে যাচ্ছে আর ব্যস্তানুপাতিক হারে বাড়ছে লোডশেডিংয়ের দাপট। বিরোধীদের অভিযোগ গত বারো বছরে যেভাবে বিদ্যুতের মাসুল বেড়েছে তার কানা কড়িও বিদ্যুৎ উৎপাদন করার ক্ষেত্রে নজর দেওয়া হয়নিবিদ্যুৎ কেন্দ্র গুলির রক্ষণাবেক্ষণের অবস্থাও তথৈবচ। 

১৯৭৭ সালে বামফ্রন্ট সরকার ক্ষমতায় আসার আগে যেখানে বিদ্যুৎ উৎপাদন হতো মাত্র ১৬১৫ মেগাওয়াট সেখানে  ২০১১ সালের নির্বাচনের আগে তা বেড়ে দাঁড়ায়১১,৩০০ মেগাওয়াটে। বর্তমানে রাজ্যের যে ১৫ টি তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র আছে তা অধিকাংশই স্থাপিত বামফ্রন্টের আমলে। কেন্দ্রের লাইসেন্সিং ব্যবস্থার বাধা মোকাবিলা করে ছাত্র যুবদের ঐতিহাসিক আন্দোলন "রক্ত দিয়ে গড়বো বক্রেশ্বর" বর্তমানে রাজ্যের অন্যতম গর্বের তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র।২১০ মেগাওয়াট সম্পন্ন বক্রেশ্বরে বর্তমানে ছ’টি ইউনিট আছে।  ১০৫০ মেগাওয়াটের বেশি বিদ্যুৎ উৎপাদন হচ্ছে।  এমনকি ২বছর আগে গোটা দেশের মধ্যে বিদ্যুৎ উৎপাদনে সাফল্যের শিরোপা নিয়েছিল সাঁওতালডিহি ও বক্রেশ্বরকেন্দ্র শতাংশের বিচারে প্লান্ট লোড ফ্যাক্টর ৯২.৭৯ শতাংশ উৎপাদনযা নিয়ে বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী টুইট করে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছিলেন সেটিও তৈরি বামফ্রন্টের আমলে। দেশজুড়ে সরকারি এবং বেসরকারি ক্ষেত্রে বিদ্যুৎ উৎপাদন সংক্রান্ত তথ্য সংগ্রহ করে সেন্ট্রাল ইলেকট্রিসিটি অথরিটি( সিইএ ) তার ভিত্তিতেই এই তালিকা প্রকাশ করে তারা। সাগরদিঘি তাপবিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র কে নিয়েসেটির জমির অধিগ্রহণ থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনের কাজও শুরু হয় বামফ্রন্টের আমলে।  বর্তমানে সেখানে ৬৬০ মেগা ওয়াট ক্ষমতা সম্পন্ন একটি ইউনিট গড়ে তোলার কাজ শুরু হলেও বামফ্রন্ট সরকারের আমলে গড়া ৩টি ইউনিট থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন এখনো বহাল আছেউল্লেখ্য একটি বিদ্যুৎ কেন্দ্র করতে কমপক্ষে চার থেকে পাঁচ বছর সময় লাগে।

    অন্যদিকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রেলমন্ত্রী থাকাকালীন পুরুলিয়াতে রেলের উদ্যোগে ১হাজার মেগাওয়াট ক্ষমতা সম্পন্ন বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র তৈরি হবে বলে শিলান্যাস করেছিলেন তিনিপরবর্তীকালে বিজেপির সাথে জোট বেঁধে ক্ষমতায় এলেও কিছুই হয়নি সেখানে এমনকি বর্তমানে কেন্দ্রের বিজেপি সরকার বা রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর গলাতেও এই নিয়ে কোন কথা শোনা যায় না। 

 দুর্গাপুজোর আগেই এই ধরনের লোডশেডিং এর দাপট যথেষ্ট চিন্তায় ফেলেছে ব্যবসায়ীদের। কপালে ভাঁজ কৃষকদেরওএবছর সেরকম বৃষ্টি না হওয়ার কারণে পাট পচাতে বা জমিতে সেচের কাজ করতে তারা শ্যালোপাম্পের উপরই বেশি নির্ভর করছেন। কিন্তু এই দীর্ঘক্ষণ লোডশেডিং চাষের কাজে  ভয়ংকর সমস্যার সৃষ্টি করছেঅন্যদিকে পড়ুয়াদের ষান্মাসিক পরীক্ষার প্রস্তুতিতেও যথেষ্ট ব্যাঘাত ঘটছে। শহরতলিগুলিতে বহুজাতিক সংস্থার শপিংমল চালু হওয়াতে ছোট দোকানদারদের ব্যবসার অবস্থা এমনিই খুব খারাপ। তার মধ্যে লোডশেডিং হলে অতিরিক্ত পয়সা দিয়ে আলোর ব্যবস্থা করা সম্ভব হচ্ছে নাঅনেকেই দোকানে বাতি জ্বালিয়ে বসে থাকছেন ফলে ভয়ংকর ক্ষতির সম্ভাবনা থেকে যাচ্ছে। 

ডব্লিউবিইডিসিএল এর কর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে মহকুমা স্তরের এক বিদ্যুৎ আধিকারিক জানান "এ ব্যাপারে আমাদের কাছে নির্দিষ্ট কোন রেকর্ড বা তথ্য নেইআমরাও আপনাদের মত কাগজে পড়েই জানতে পারছি রাজ্যে বিদ্যুৎ সমস্যা চলছে"। 

Comments :0

Login to leave a comment