Editorial

চোরের দিদির বড় গলা

সম্পাদকীয় বিভাগ

Editorial


মাথার চুল থেকে পায়ের নখ পর্যন্ত তৃণমূল যে একটি দুর্নীতিগ্রস্ত, চোর-জোচ্চোর, লুটেরাদের দল সেটা আর নতুন করে বলার প্রয়োজন নেই। গোরু-কয়লা পাচার থেকে শুরু করে শিক্ষক-শিক্ষাকর্মী নিয়োগে বল্গাহীন দুর্নীতি এখন আবহাওয়া সংবাদের মতো সংবাদ মাধ্যমের নিত্যদিনের খবর। তৃণমূলের চোর-দুর্নীতিবাজদের ধরা যেমন সিবিআই-ইডি’র প্রধান কাজ হয়ে উঠেছে তেমনি আদালতকেও তাদের মোট সময়ের বড় অংশ ব্যয় করতে হয় অভিযুক্ত চোর-দুর্নীতিবাজদের বিচার করার জন্য।



নিয়োগ দুর্নীতির কেঁচো খুঁজতে গিয়ে তদন্ত সংস্থাগুলিরও কার্যত মাথায় হাত। প্রতিদিনই প্রায় খোঁজ মিলছে দুর্নীতির নতুন নতুন কৌশল। ফলে শেষ সাপ বেরোবে নাকি হাতি-ঘোড়া, বাঘ-সিংহ বেরোবে এখনো স্পষ্ট নয়। তবে এটা স্পষ্ট যে দুর্নীতি ছাড়া এই দলের দ্বিতীয় কোনও লক্ষ্য বা উদ্দেশ্য নেই। এরা ক্ষমতায় এসেছে দুর্নীতি করে, লুট করে আখের গোছাবার জন্য। এই সরকারের যা কিছু প্রকল্প সবটাই দুর্নীতি ও লুটের প্রয়োজনে। আমফানে ক্ষতিগ্রস্তদের ত্রাণ দেওয়া বা ভাঙবাড়ি মেরামত করার প্রকল্প মানে প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য নয়। তাদের নাম করে দলের নেতা-কর্মীদের পকেটে সরকারি প্রকল্পে টাকা ঢোকানো। সরকারি বরাদ্দের সবটাই প্রায় চলে যায় নেতাদের ঘরে। রেগা প্রকল্পের জব কার্ড থাকে নেতাদের কাছে যার কার্ড তার অজান্তেই তার কার্ডের টাকা চলে যায় নেতার অ্যাকাউন্টে। আবাস যোজনার টাকার বেশিটাই দিতে হবে নেতাদের। এমনকি চাকরির ক্ষেত্রেও প্রকৃত যোগ্যরা বাতিল। মোটা টাকার বিনিময়ে নেতারা চাকরি বিক্রি করে অযোগ্যদের এবং নিজেদের পরিবারের লোকদের।

এমন বেপরোয়া ঢালাও চুরি-দুর্নীতির শতশত মামলা চলছে উচ্চ আদালত ও নিম্ন আদালতগুলিতে। প্রতিদিনই চুরি-দুর্নীতির নতুন নতুন অভিযোগ, নতুন নতুন মামলা। চুরি-দুর্নীতি‍‌ অবৈধ কাজ কারবারকে তৃণমূলীরা তাদের জীবনযাত্রার সঙ্গে এতটাই অঙ্গীভূত করে ফেলেছে, এমনকি পেশায় পরিণত করেছে যে চুরি-দুর্নীতি বাদ দিয়ে অন্য কিছু ভাবতেই ভুলে গেছে। তৃণমূল দলটাই ক্রমশ চোরের দলে পরিণত হয়ে গেছে। রাস্তায় তৃণমূলীদের দেখলে এখন সাধারণ মানুষ চোর বলেই মনে করে। মানুষের মনের গভীরে এই বিশ্বাস স্থায়ীভাবে জায়গা করে নিয়েছে। যে তৃণমূলে সৎ বলে কেউ নেই,  থাকতে পারে না। দু’-চারজন যারা ছিল তারাও মানে মানে তৃণমূলের সঙ্গে দূরত্ব তৈরি করে ফেলছেন। এইভাবে চলতে থাকলে অচিরেই তৃণমূল একটি খাঁটি নির্ভেজাল চোর-দুর্নীতিবাজ-লুটেরাদের দলে পরিণত হবে।


কোনও একটা রাজনৈতিক দল এই-মাত্রায় চুরি দুর্নীতি করতে পারে বাংলার মানুষ কোনোদিন কল্পনাও করতে পারেনি। আজ তারা শুধু ভাবতে পারছেন তা নয়, স্বচক্ষে দেখতে পাচ্ছেন। তেমনি প্রতিদিনই দুর্নীতির এক একটি অভিনব পন্থা তাদের বিস্মিত ও হতবাক করে দিচ্ছে। বাংলার বুকে এমন সীমাহীন দুর্নীতির কার্নিভাল দেশে বাংলার মানুষের লজ্জায়, অপমানে মাথা হেঁট হয়ে গেলেও তৃণমূলীদের লজ্জা বলতে কোনও কিছুর বালাই নেই। সহজাত অভ্যেসের মতো দুর্নীতি তারা করেই চলেছে। এমন কোনও সরকারি কাজ এরাজ্যে হয় না যেখান থেকে কাটমানি ঢোকে না কোনও নেতার পকেটে। তেমনি গত ১১ বছরে তৃণমূলের ঝান্ডা ধরে অবৈধ রোজগার বাড়ায়নি এমন তূণমূলীও দুর্লভ।
তৃণমূল প্রমাণ করে দিয়েছে তারা চোর। গাধা পিটিয়ে ঘোড়া বানানো সম্ভব হলেও চোর তৃণমূলীকে কোনোদিন সৎ তৃণমূলী বানানো যাবে না। এটা আর কেউ বুঝুক না বুঝুক মমতা ব্যানার্জি বোঝেন। তেমনি তিনি এটাও বোঝেন দল যদি রাখতে হয়, ক্ষতমায় যদি থাকতে হয় তাহলে এই চোর-দুর্নীতিবাজদের নিয়েই চলতে হবে। তাই দলীয় নেতা কর্মীদের তিনি বরাভয় দিয়ে বলেছেন মানুষ চোর বললেও গায়ে মাখার দরকার নেই। লজ্জা পাবারও কারণ নেই। চোরের শিরোপা মাথায় নিয়েই বুক চিতিয়ে দলের কাজ করতে হবে। অর্থাৎ দলীয় কর্মীদের তিনি নির্লজ্জ, বেহায়া হবার পরামর্শ দিয়েছেন। মানুষ চোর বললে সেটা মেনে নিতে বলেছেন। চৌর্যবৃত্তিকে স্বীকৃতি দিয়ে তৃণমূলকে চোরের দল হিসাবে নতুন পরিচিতি দিয়েছেন।

Comments :0

Login to leave a comment