Raju Murder case

দ্বিতীয় গাড়ির হদিশ মিললেও রাজু হত্যায় গ্রেপ্তারি নেই

কলকাতা

অবশেষে মিলল কয়লা মাফিয়া রাজু ঝা হত্যাকাণ্ডে সেই দ্বিতীয় গাড়ির হদিশ। ঘটনার পর থেকে পুলিশ হামলাকারীদের দ্বিতীয় গাড়িটির অস্তিত্বের কথা স্বীকার করেনি। 
  তবে প্রত্যক্ষদর্শীদের একটি সূত্রেই জানা গিয়েছিল, শনিবার রাতে শক্তিগড়ে ল্যাংচার দোকানের সামনে দাঁড়িয়ে থাকা আবদুল লতিফের গাড়ি লক্ষ্য করে চলে গুলিবৃষ্টি। ৩০-৪০ সেকেন্ডের অপারেশন। গাড়ির ভিতরেই রক্তাক্ত অবস্থায় লুটিয়ে পড়ে কয়ল মাফিয়া রাজেশ ওরফে রাজু ঝা। এমনকি গোরু পাচারকাণ্ডে ফেরার সেই আবদুল লতিফের গাড়ির চালক নুর হোসেন যে লিখিত বয়ান দিয়েছিল তাতে বলা হয় যে একটি নীল রঙের ব্যালেনো গাড়িতে করে হামলা চালিয়েছিল দুষ্কৃতীরা। সোমবার প্রকাশিত গণশক্তির প্রতিবেদনে জানানো হয়েছিল, দু’টি গাড়িতে করে হামলা চালানো হয়েছিল। স্থানীয় বাসিন্দাদের সূত্রেই জানা যায় সেই তথ্য।
  মঙ্গলবার সামনে এল দ্বিতীয় গাড়ির তথ্য। ঐ গাড়িতেই ছিল ভাড়াটে শার্প শুটার। হামলা চালানোর পরে দ্বিতীয় গাড়ি থেকে দুষ্কৃতীরা সম্ভবত রসুলপুর হয়ে মেমারি রোড ধরে স্টেশন থেকে ট্রেনে চম্পট দেয় বলে জানা গেছে পুলিশেরই একটি সূত্রে। গাড়িটির রেজিস্ট্রেশন হয়েছিল ২০১৭ সালে, বারাকপুরের আরটিও থেকে। জনৈক মলয় কুমার পালের নামে গাড়িটি কেনা হয়েছিল। 
  দু’দিক দিয়ে গাড়ি ঘিরে চলে শক্তিগড়ের শুট আউট। ইতিমধ্যে রবিবার সকালেই শক্তিগড় থানার লাগোয়া তল্লাট থেকে মেলে প্রথম গাড়িটি। গাড়িতে একাধিক ভুয়ো নম্বর প্লেট, মদের বোতলের পাশাপাশি উদ্ধার হয় দু’টি পিস্তল, ১২ রাউন্ড কার্তুজ। সম্ভবত রাজু ঝা যে গাড়িতে ছিল পিছনেই আততায়ীদের গাড়ি ছিল। আধ মিনিটের মধ্যেই গুলি বৃষ্টি চালিয়ে দু’টি গাড়ি শক্তিগড় ছেড়ে দুর্গাপুর এক্সপ্রেসওয়ে ধরে কলকাতার দিকে এগিয়ে যায়।
  শক্তিগড় শুট আউটে খুন হওয়া কয়লা মাফিয়া রাজু ঝা’র হত্যাকাণ্ডে একাধিক এমন রহস্য রয়েছে তা রীতিমত চমকপ্রদ। দু’দিন পেরিয়ে গেছে, এখনও পর্যন্ত এমন চাঞ্চল্যকর হত্যাকাণ্ডের পরে মঙ্গলবার রাত পর্যন্ত একজনকেও গ্রেপ্তার বা আটক করতে পারেনি পুলিশ। সোমবার রাতেই বর্ধমান পুলিশ লাইনে সেদিন গুলিবিদ্ধ হওয়া রাজু ঝা’র ঘনিষ্ঠ দুর্গাপুরের বাসিন্দা ব্রতীন মুখার্জি এবং গাড়ির চালক নুর হোসেনকে জেরা করা হয়। ঘণ্টা দু’য়েক জেরা করার পরে দু’জনকেই ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। সংবাদমাধ্যমের কাছে কোন মন্তব্য করেননি তাঁরা। তবে ব্রতীন মুখার্জি ও নুর হোসেনের বয়ান নিয়ে বিভ্রান্তি রয়েছে।  
  দু’দিন পেরিয়ে যাওয়ার পরেও গোরু পাচারকাণ্ডে সিবিআইয়ের চার্জশিটে অভিযুক্ত ফেরার শেখ আবদুল লতিফের কোন হদিশ মেলেনি। ঘটনাস্থল থেকে বেমালুম ফেরার হয়ে গেছে লতিফ পুলিশের সামনে থেকেই।
অপদার্থতার নজির গড়ে জেলা পুলিশ প্রশাসনের দাবি, বারো জনের তদন্তকারী দল তৈরি হয়েছে। সবদিক খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তবে লতিফের উধাও হয়ে যাওয়ার বিষয়ে কোন মন্তব্য মেলেনি জেলা পুলিশের তরফে। এদিন পুর্ব বর্ধমান জেলা পুলিশ সুপার কামনাশিস সেন সাংবাদিকদের কাছে বলেন, ‘সিট তৈরি হয়েছে। আমরা একাধিক জনকে জেরা করেছি। তদন্ত চলছে। আশা করছি কোন ব্রেক থ্রু নিশ্চয়ই মিলবে’। দু’দিন পরেও পুলিশ কেবলই আশাবাদী যদিও একজনকেও গ্রেপ্তার করা কিংবা এই ফিল্মি কায়দায় শুট আউট নিয়ে কোন রকম তথ্যও জানাতে পারেনি!
  রবিবার রাতেই দিল্লি গেছেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক ব্যানার্জি। এদিকে রাজ্য পুলিশেরই একটি সূত্রে জানা গেছে রবিবার রাতেই দিল্লি যাওয়ার পরিকল্পনা ছিল রাজু ঝার।  তারও রবিবার সন্ধ্যার বিমানেই টিকিট ছিল। শনিবার রাতে কলকাতায় এসে রবিবার সন্ধ্যায় বিমানে দিল্লি যাওয়ার পরিকল্পনা ছিল। অন্ডাল থেকে বিমানে দিল্লি যাওয়া যায়। যদিও রাজু ঝা অন্ডাল থেকে বিমান না ধরে গোরু পাচারকাণ্ডে চার্জশিটে অভিযুক্তের গাড়িতে তাঁর সঙ্গেই কলকাতায় এসে সেখান থেকে বিমানে কেন দিল্লি যেতে চাইছিলেন? শনিবার রাতে বা রবিবার কলকাতায় কোনও গোপন বৈঠক ছিল কোন প্রভাবশালীর সঙ্গে? রাজু ঝা সঙ্গে লাগেজ নিয়েই দুর্গাপুরে তাঁর হোটেলের সামনে থেকে ১তারিখ সন্ধ্যা ৬টা ১০ মিনিট নাগাদ গাড়িতে ওঠে। যদিও হত্যাকাণ্ডের পরে পুলিশ সেই গাড়ি, লাগেজ বাজেয়াপ্ত করলে তাতে কী কী মিলেছে তা নিয়ে মুখ খোলেনি।  
  কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা সূত্রে জানা গেছে, মঙ্গলবার ৪ এপ্রিল দিল্লিতে ইডি দপ্তরে হাজিরা দেওয়ার কথা ছিল রাজু ঝার। কয়লা পাচারকাণ্ডেই এই হাজিরা দেওয়ার কথা। তার আগেই এই হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে এবং গোরু পাচারকাণ্ডে সিবিআই-এর চার্জশিটে অভিযুক্ত লতিফের প্রসঙ্গ সামনে আসায় গোটা ঘটনার ওপর নজরদারি রাখছে ইডি ও সিবিআই দুই সংস্থাই। 
  এর আগে একাধিকবার যেমন জেলে গিয়েছিলেন এই কয়লা মাফিয়া তেমনি একাধিকবার তাঁকে হত্যার চেষ্টাও করা হয়। সর্বশেষ ২৬ ফেব্রুয়ারি। জানা যাচ্ছে ইসিএলের খনি থেকে কয়লা উত্তোলের পরে সেই বৈধ কয়লার সড়ক পরিবহণের ‘ডিও’র নিয়ন্ত্রণ নিয়েই রাজু ঝার সঙ্গে পালটা কয়লা মাফিয়া গোষ্ঠীর বিরোধ বাড়ছিল, শাসক দলের মদতও ছিল তাতে। কয়লা মাফিয়া অনুপ মাঝি ওরফে লালার নেটওয়ার্ক থমকে যায় সিবিআই তদন্তের ঠেলায়। গ্রেপ্তারও হয়েছিল লালা। মূলত তৃণমূল ঘনিষ্ঠ এই কয়লা মাফিয়া। লালার টাকাই বিনয় মিশ্রের মাধ্যমে এরাজ্যে শাসক দলের এক প্রভাবশালীর স্ত্রীর মাধ্যমে বিদেশে পাচার হত। লালার কয়লা পাচারের টাকাই আসানসোল থেকে সড়কপথে পুলিশি পাহারায় দক্ষিণ কলকাতার এক প্রভাবশালীর ঠিকানায় যেতো। সেই লালার দাপট কিছুটা কমতে  গত কয়েকমাস রাজু ঝা ফের কয়লা কারবারে সক্রিয় হয়ে উঠছিল। বর্ধমানের বালিঘাটের দখলও ক্রমেই যাচ্ছিল এই কয়লা মাফিয়ার বাহিনীর হাতে। ফলে পরিকল্পনা মাফিকই এমন শুট আউট বলে মনে করা হচ্ছে।
 

Comments :0

Login to leave a comment