Editorial New TMC

নতুন তৃণমূল

সম্পাদকীয় বিভাগ

Editorial New TMC

বাইপাসের ধারে পুরানো তৃণমূল ভবন ভেঙে ফেলে সেখানে নতুন ভবন নির্মাণে ভিত পুজো হয়েছে। হিন্দু ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠানের মাধ্যমে ব্রাহ্মণ সহযোগে দলের প্রতিষ্ঠা দিবসের এই কর্মসূচিতে ভাইপো উপস্থিত থাকলে পিসি গরহাজির ছিলেন। তৃণমূল দলটা ধর্মনিরপেক্ষ এমন দাবি নেতা-নেত্রীরা কখনো করেন না। তবে দলটি যে হিন্দু মতে চলে এবং হিন্দু ধর্মে পূর্ণ আস্থাশীল দলীয় ভবনের শিলান্যাসকালে ভাইপো সেটা স্পষ্ট করে দিয়েছেন। পিসি অবশ্য ভোট এলে নানা ধর্মের ভেক ধারণ করেন।

এই শিলান্যাস অনুষ্ঠানেই ভাইপো ছ’মাস আগের ঘোষিত ‘নতুন তৃণমূল’ আসলে কি তার ব্যাখ্যা দিয়েছেন। নতুন তৃণমূলে নাকি দুর্নীতি বরদাস্ত করা হবে না। ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বের করে দেওয়া হবে। তার মানে কি পুরানো তৃণমূলে দুর্নীতিগ্রস্তদের ছড়াছড়ি। যত খুশি দুর্নীতি করলেও ঘাড় ধাক্কা দেবার কোনও ব্যবস্থা ছিল না। পিসি-র জমানায় তৈরি পুরানো তৃণমূল ভেঙে যেমন নতুন তৃণমূল ভবন তৈরি হচ্ছে তেমনই কি পিসি-র ‘পুরানো’ তৃণমূলকে সরি‍‌য়ে ভাইপোর নতুন তৃণমূল হচ্ছে?

এখন প্রশ্ন হলো আয়লায় ত্রিপল সহ সরকারি ক্ষতিপূরণের টাকা  যেসব তৃণমূল নেতারা আত্মসাৎ করেছে তাদের সকলকে কি ঘাড় ধাক্কা দেওয়া হবে? সারদা‍‌ চিট ফান্ড কেলেঙ্কারিতে যেসব নেতা-কর্মীরা কয়েক শত কোটি টাকা লুটেছে তারা নতুন তৃণমূলে থাকতে পারবে কি? নারদ স্ট্রিং অপারেশনে যাদের নগদ টাকা ঘুষ নিতে দেখা গেছে দলে তারা বহাল তবিয়তে থাকবেন না গলা ধাক্কা খাবেন। শিক্ষা ক্ষেত্রে দুর্নীতির যে প্যান্ডোরা বক্স খুলে যাচ্ছে তাতে জড়িয়ে আছে সব জেলার সব অঞ্চলের তৃণমূল নেতা-কর্মীরা। লক্ষ লক্ষ টাকার বিনিময়ে অযোগ্যরা যেমন চাকরি পেয়েছে তেমনি নেতাদের আত্মীয় স্বজনরাও চাকরি পেয়েছে। এই দুর্নীতিগ্রস্তর গলা ধাক্কা খাবে তো?


পাড়ায় যেসব তৃণমূলী দাদা ও তাদের শাগরেদরা সিন্ডিকেট চালিয়ে, তোলা আদায় করে, কাটমানি নিয়ে নিত্যদিন দুর্নীতি করে যাচ্ছে তারা কি পিসির ভাষ্য অনুযায়ী দলের সম্পদ হিসাবে সম্মানিত হবে না ভাইপোর ভাষ্য অনুযায়ী গলা ধাক্কা খাবে। গুন্ডা কন্ট্রোলার যাদের কন্ট্রোল করেন নতুন তৃণমূলে কে তাদের কন্ট্রোল করবে? সব দুর্নীতিগ্রস্ত, চোর-চোরটা, চিটিংবাজদের গলা ধাক্কা দিতে হয় তাহলে তো ঠগ বাচাতে গাঁ উজাড় হয়ে যাবে।

পুরানো তৃণমূল থেকে নতুন তৃণমূলে ঠাঁই পাবার জন্য তো কাউকেই পাওয়া যাবে না। তার চেয়েও বড় প্রশ্ন গোরু, বালি, পাথর পাচার সহ নানা দুর্নীতিতে অভিযুক্ত স্বয়ং ভাইপোর কি জায়গা হবে নতুন তৃণমূলে। কালীঘাটে পিসি-ভাইপোর পরিবারের দখলে ব্যবসা ফুলে ফেঁপে উঠেছে তার  পেছনে অনিময় থাকলে নতুন তৃণমূলের মালিকানা তাদের হাতে থাকবে তো? নাকি দু’-চারটে হতভাগাকে লোক দেখানোর মতো ‘তাড়িয়ে’ সততার নতুন বিজ্ঞাপন দেওয়া হবে। শেষ পর্যন্ত গণ‍‌রোষে যদি চোর তাড়ানো শুরু হয়ে যায় তাহলে তৃণমূলের ঝান্ডা ধরারও লোক থাকবে না। তখন জেলে বসেই নতুন তৃণমূল বানাতে হবে।

Comments :0

Login to leave a comment