Loksabha vote 2024

বিরোধী ঐক্যের মঞ্চ ‘ইণ্ডিয়া’

জাতীয়

 ভারত বাঁচানোর লক্ষ্যেই লড়বে ‘ইন্ডিয়া’। শেষ পর্যন্ত জিতবে ‘ইন্ডিয়া’-ই। এই প্রত্যয় নিয়েই মঙ্গলবার বেঙ্গালুরুতে শেষ হলো বিজেপি-বিরোধী দলগুলির দু’দিনের বৈঠক। এই বৈঠক থেকেই বিজেপি’র বিরুদ্ধে একযোগে লড়াইয়ের সুর বেঁধে দেওয়া হয়েছে। ঠিক হয়েছে, ‘ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল ডেভেলপমেন্টাল ইনক্লুসিভ অ্যালায়েন্স’ বা ‘ইন্ডিয়া’ নামেই বিজেপি’র হাত থেকে দেশ, গণতন্ত্র এবং সংবিধান বাঁচানোর স্বার্থে লড়াই চালাবে ২৬ দল। ‘ভারতের ভাবনাকে’ রক্ষা করাই মূল ভাবনা। সেই জন্যই কংগ্রেসের নেতৃত্বাধীন ইউপিএ নয়, বিজেপি’র বিরুদ্ধে ‘ইন্ডিয়া’ নামের মঞ্চে এককাট্টা হয়ে লড়াইয়ে সহমত পোষণ করেছেন ২৬ দলের নেতৃবৃন্দ। কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধীর ব্যাখ্যা, ‘‘এই লড়াই ‘ইন্ডিয়া’ বনাম নরেন্দ্র মোদীর।’’ 


সোমবার প্রাথমিক আলোচনার পর মঙ্গলবার চার ঘন্টা ধরে বৈঠক করেন বিরোধী নেতারা। এই বৈঠকেই দেশকে রক্ষার স্বার্থে যৌথ প্রস্তাবও নেওয়া হয়েছে। এরই পাশাপাশি ঠিক হয়েছে, এই মঞ্চকে এগিয়ে নিয়ে যেতে ১১ সদস্যের সমন্বয় কমিটি গঠন করা হবে। একইসঙ্গে প্রচার ও অন্যান্য কর্মসূচি রূপায়ণের দায়িত্বে থাকবে একটি সম্পাদকমণ্ডলী। এই সম্পাদকমণ্ডলী কাজ করবে দিল্লি থেকে। পাশাপাশি বিভিন্ন বিষয়ে পৃথক পৃথক কমিটি গঠন করা হবে। আর ‘ইন্ডিয়া’র পরবর্তী বৈঠক হবে মুম্বাইয়ে। সেখানেই সমন্বয় কমিটি এবং সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্যদের নাম ঠিক করা হবে। সমন্বয় কমিটির আহ্বায়ক কে হবেন, তাও স্থির করা হবে ওই বৈঠকে। তবে মুম্বাইয়ে বৈঠক কবে হবে, তা এখনই ঠিক হয়নি। শীঘ্রই সেই তারিখ জানিয়ে দেওয়া হবে বলে বৈঠক শেষে সাংবাদিক সম্মেলনে জানালেন কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গে। সেখানেই খাড়গে অত্যন্ত প্রত্যয়ের সঙ্গে ঘোষণা করলেন, ‘‘আমরা ঐক্যবদ্ধভাবেই ২০২৪ সালের লোকসভা ভোটে লড়াই চালাবো এবং আমাদের জয় নিশ্চিত।’’ এই প্রসঙ্গে তিনি এও বলেন যে, ‘‘এখানে উপস্থিত অনেক দলের পারস্পরিক রাজনৈতিক মতানৈক্য আছে। তবে দেশ বাঁচানোর তাগিদে তারা সেই মতভেদ দূরে সরিয়ে রেখে এক মঞ্চে সমবেত হওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।’’ বিরোধীদের তরফে প্রধানমন্ত্রীর পদে ‘মুখ’ হিসাবে কাকে তুলে ধরা হবে, সেই প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘‘এই বৈঠকে নিজেদের শক্তি বৃদ্ধিই আমাদের লক্ষ্য ছিল। দেশের সংবিধান, গণতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা এবং সামাজিক ন্যায় রক্ষার স্বার্থেই এই বৈঠক।’’ অবশ্য মাঝে খাড়গে জানিয়ে দিয়েছিলেন যে, কংগ্রেস ক্ষমতা কিংবা প্রধানমন্ত্রিত্বের জন্য লালায়িত নয়।


বিরোধীদের বৈঠকের দিনেই দিল্লিতে বৈঠক ডেকেছিল এনডিএ। তার আগে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী স্বভাবসিদ্ধভাবেই আক্রমণ করেন বিরোধীদের। তিনি কটাক্ষ করেন, ‘‘কয়েকটি দুর্নীতিগ্রস্ত দল একটি পরিবারকে বাঁচাতে ঝাঁপিয়ে পড়েছে।’’ এর জবাব অবশ্য দিয়েছেন শিবসেনা (উদ্ধব) নেতা উদ্ধব থ্যাকারে। তিনি উলটে বলেছেন, ‘‘উনি তো ঠিকই বলেছেন। আমাদের কাছে দেশ একটি পরিবার। ওঁর হাত থেকে সেই দেশ নামক পরিবারকে বাঁচাতেই আমরা এককাট্টা হয়েছি।’’ তিনি এও বলেন, ‘‘এক জন কিংবা একটি দল মোটেই দেশ নয়।’’
বিরোধীদের এক মঞ্চে আসার বিষয়টির ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে যৌথ সাংবাদিক সম্মেলনে কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী বলেন, ‘‘আমাদের লড়াই বিজেপি’র মতাদর্শ এবং ভাবনার বিরুদ্ধে। ওরা দেশের মূল ভাবনাকেই আক্রমণ করছে। বেকারত্ব বেড়েই চলেছে, দেশের সম্পদ দেশবাসীর হাত থেকে ছিনিয়ে নিয়ে বিজেপি এবং প্রধানমন্ত্রীর কতিপয় বন্ধুর হাতে তুলে দেওয়া হচ্ছে।’’ এর পরেই তিনি যোগ করেন, ‘‘আমরা দেশের সংবিধান, দেশবাসীর কন্ঠস্বর এবং ভারতের ভাবনাকে রক্ষা করতে চাই। এই লড়াই ‘ইন্ডিয়া’র সঙ্গে বিজেপি’র। ‘ইন্ডিয়া’র সঙ্গে নরেন্দ্র মোদীর।’’
বৈঠকের ফাঁকে এদিন সকালে ইয়েচুরি বিরোধী বৈঠকের তাৎপর্য ব্যাখ্যা করতে গিয়ে বলেছিলেন, ‘‘আমরা ভারতকে বাঁচাতে চাইছি। কারণ আমরা জানি, ভারত কী। দেশ এখন তীব্র বহুমুখী আক্রমণের মুখে। এই আক্রমণের হাত থেকে দেশকে রক্ষা করে ভালোর জন্য পরিবর্তন আনাই লক্ষ্য।’’


আপ প্রধান অরবিন্দ কেজরিওয়াল অভিযোগ করেন, ‘‘যতই বড় বড় কথা বলুন, ৯ বছরে দেশের জন্য কিছুই করেননি প্রধানমন্ত্রী।’’ তৃণমূল নেত্রী মমতা ব্যানার্জি বলেন, ‘‘ইন্ডিয়া জিতবে, দেশ জিতবে।’’ বৈঠকের ফাঁকে আরজেডি নেতা তেজস্বী যাদব বলেন, ‘‘দেশের সংবিধান, গণতন্ত্র এবং ভ্রাতৃত্ব রক্ষার স্বার্থেই আমরা একজোট হয়ে আলোচনা করছি।’’ সমাজবাদী পার্টির নেতা অখিলেশ সিং যাদবের বক্তব্য, ‘‘দেশের দুই-তৃতীয়াংশ মানুষই বিজেপি’র বিরুদ্ধে।’’ ন্যাশনাল কনফারেন্স নেতা ওমর আবদুল্লা কিংবা পিডিপি নেত্রী মেহবুবা মুফতি উভয়েই জানিয়ে দেন, দেশের সংবিধান এবং গণতন্ত্র রক্ষার স্বার্থেই তাঁরা একজোট হয়েছেন। সিপিআই(এমএল)’র সাধারণ সম্পাদক দীপঙ্কর ভট্টাচার্য বলেছেন, ‘‘ভারতকে বাঁচাতে বড় ধরনের গণ আন্দোলন হবে ২০২৪ সালের লোকসভা ভোট— এই কড়া বার্তাই পৌঁছে দেবে এদিনের বৈঠক।’’ ডিএমকে প্রধান এম কে স্ট্যালিন জানিয়েছেন, ‘‘আগামী দিনে এক ‘নতুন ভারত’-এর প্রকাশ ঘটবে।
সংবিধানে বর্ণিত ভারতের ভাবনাকে রক্ষা করতে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলা হয়েছে বৈঠকে গৃহীত যৌথ প্রস্তাবে। বলা হয়েছে, দেশের ইতিহাসে ভারত এখন এক জটিল সন্ধিক্ষণের মুখোমুখি। ভারতীয় সংবিধানের মূল স্তম্ভগুলি আজ বিপন্ন। ধর্মনিরপেক্ষ গণতন্ত্র, অর্থনৈতিক সার্বভৌমত্ব, সামাজিক ন্যায় এবং যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোকে পরিকল্পিতভাবে খর্ব করা হচ্ছে। এরই পাশাপাশি মণিপুরে দীর্ঘ দিন ধরে চলতে থাকা হিংসা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে প্রস্তাবে। এই প্রশ্নে প্রধানমন্ত্রীর আশ্চর্যজনক নীরবতাকে কটাক্ষ করা হয়েছে। একইসঙ্গে প্রস্তাবে জাতভিত্তিক জনগণনা চালুর দাবি জানানো হয়েছে। সংখ্যালঘু সম্প্রদায়, মহিলা, দলিত, আদিবাসী এবং কাশ্মীরি পণ্ডিতদের উপর ক্রমাগত হামলার বিষয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন বিরোধী নেতারা।
এনডিএ তাদের বৈঠকে ৩০টি দলকে আমন্ত্রণের দাবি জানালেও দলগুলির অস্তিত্ব নিয়ে এদিনও প্রশ্ন তোলেন খাড়গে। তালিকা পেলে ভালো হতো বলে তিনি জানান। তবে বেঙ্গালুরুর বৈঠকে উপস্থিত ছিল কংগ্রেস, ডিএমকে, জনতা দল (ইউ), সিপিআই(এম), সিপিআই, ফরওয়ার্ড ব্লক, আরএসপি, সিপিআই(এমএল), আপ, তৃণমূল, আরজেডি, জেএমএম, এনসিপি, শিবসেনা (ইউবিটি), সমাজবাদী পার্টি, আরএলডি, আপনা দল (কামেরাওয়াদি), ন্যাশনাল কনফারেন্স, পিডিপি, এমডিএমকে, ভিসিকে, কেএমডিকে, এমএমকে, আইইউএমএল, কেরালা কংগ্রেস (মানি) এবং কেরালা কংগ্রেস (যোসেফ)।

 

Comments :0

Login to leave a comment