প্রবন্ধ
মুক্তধারা
ওষুধে ডাক্তারে
কৃশানু ভট্টাচার্য্য
২০২৫ ডিসেম্বর ৪ | বর্ষ ৩
কে না জানে, ডাক্তার ছুলে বত্রিশ ঘা!!! প্রথমে প্রেসক্রিপশন, তার পরে এক্সামিনেশন, তারও পরে এডমিশন, প্রয়োজন হলে অপারেশন, সফল হলে কংগ্রাচুলেশন , বিফল হলে ক্রিমেসান- দাদাঠাকুরের ভাষায় জীবন চলবে শনশন্ করে।
তবে প্রশ্ন? সবই কি হবে যথার্থ গতিতে ? নাকি সেখানে লাগু হবে গণিতের সমানুপাতিক , ব্যস্তানুপাতিক হার? অর্থাৎ কেউ গরীব হবে কেউ বা বড়লোক?
ভারতবর্ষের চিকিৎসা জগৎ নিয়ে সারা পৃথিবীতেই নানা ধরনের রটনা জল্পনা আছে। এর পিছনে রয়ে গেছে বেশ কিছু তথ্য। যেমন ধরুন কয়েকদিন আগে সংসদে দাঁড়িয়ে ভারতবর্ষের এক মন্ত্রী বলেছেন ওষুধ কোম্পানিগুলি তাদের উৎপাদন মূল্যের ১৮০ থেকে ২০০০ গুন দাম বৃদ্ধি করে ওষুধ বিক্রি করে। দেশের ডায়াগনস্টিক সেন্টার এবং বিভিন্ন জায়গায় অপারেশনের নামে চলে, প্রচুর পরিমাণে মুনাফা লোটা। সরকারের পক্ষ থেকে যখন এজাতীয় স্বীকারোক্তি প্রকাশ্যে করা হয় তখন সাধারণ মানুষের মধ্যে সন্দেহ তো থাকবেই। এদেশের কোটি কোটি মানুষ প্রতিদিন এক অসহায় পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়ে বাস্তবকে মেনে নিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হন। শেষমেষ সুস্থতার বাতাস তাদের গায়ে লাগলেও আর্থিক অসুস্থতা গোটা পরিবারকেই গ্রাস করে ফেলে। এ এক বিরাট বড় সমস্যা! রোগের চিকিৎসা আছে, কিন্তু চিকিৎসক এবং চিকিৎসা ব্যবস্থার যে রোগ সে রোগের চিকিৎসা এখনো পর্যন্ত আবিষ্কার হয় নি। হবেই বা কি করে? ১৮০ থেকে ২০০০ শতাংশ মুনাফা আদায়কারী কোম্পানিগুলোই তো ইলেক্টোরাল বন্ডে কোটি কোটি টাকা অনুদান দেয়। কাজেই তাদের হাতে পায়ে বেড়ি পড়ানোর স্বপ্ন দেখাটা ছেঁড়া কাঁথায় শুয়ে লাখ টাকার স্বপ্ন দেখার মতোই।
অতএব, রোগমুক্তির স্বাদ টক!!!
এ রোগের বিশল্যকরনি কোন গন্ধমাদন পাহাড়ে লুকিয়ে আছে তা আমাদের জানা নেই। স্বীকার করতে দ্বিধা নেই যে এর পিছনে রয়েছে দেশীয় ব্যক্তিদের পাশাপাশি প্রচুর বহুজাতিক প্রতিষ্ঠান। আজ থেকে তিন দশক আগে ডানকেল প্রস্তাবের বিরুদ্ধে যখন স্বর উঠেছিল তখন যেসব মানুষ নীরব ছিলেন বা সম্মতি জানিয়েছিলেন তারাও কিন্তু আজকে ভুক্তভোগী। আর সেই কারণেই এদেশের স্বাস্থ্য পরিষেবা ব্যবস্থাকে সচল, স্বচ্ছ এবং সফল করতে পারাটা এক কঠিনতম নাগরিক সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
Comments :0