ভারত-চীন সীমান্ত দীর্ঘ, প্রায় ৩৪০০ কিলোমিটার। সীমান্তের অনেকটাই স্পষ্টভাবে নির্দিষ্ট করা নেই। যে কারণে দু’দেশের মধ্যে বিভিন্ন সময়েই বিরোধ হয়েছে। এখন প্রয়োজন সীমান্ত বিরোধ নিষ্পত্তির লক্ষ্যে তৈরি বিভিন্ন দ্বিপাক্ষিক ব্যবস্থাপনাকে ফের চাঙ্গা করা।
সীমান্ত এবং নিয়ন্ত্রণরেখায় নজরদারি সংক্রান্ত দ্বিপাক্ষিক বোঝপড়াকে স্বাগত জানিয়ে এই মত জানিয়েছে সিপিআই(এম)। পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির মুখপত্র ‘পিপলস ডেমোক্র্যাসি’ বা পিডি-র সর্বশেষ সংখ্যার সম্পাদকীয়তে এই অভিমত জানানো হয়েছে।
২০২০-তে গালওয়ানে দুই সেনার সংঘাতের পর থেকে সম্পর্কে গুরুতর অবনতি হয়। প্রতিবেশি দু‘দেশের সম্পর্ক ঘিরে উদ্বেগ জানানো হয়। ভারত আবার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে চার দেশের আঞ্চলিক জোটের সদস্য। যে জোটের প্রধান লক্ষ্য চীনকে কোণঠাসা করা। ফলে সম্পর্ক আরও তলানিতে ঠেকে।
২১ অক্টোবর ভারত এবং চীন নিয়ন্ত্রণরেখা অঞ্চলে নজরদারিতে স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনার সমঝোতা চূড়ান্ত করে। রাশিয়ার কাজানে ‘ব্রিকস’-র শীর্ষ বৈঠকের ফাঁকে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং চীনের রাষ্ট্রপতি শি জিনপিঙ।
সম্পাদকীয়তে বলা হয়েছে, ‘‘এই পদক্ষেপ স্বাগত। আশা করা যায় যে দুই প্রতিবেশি রাষ্ট্রের সম্পর্ক স্বাভাবিক করতে এই পদক্ষেপ কার্যকরী ভূমিকা নেবে।’’
২০২০ থেকে সামরিক এবং কূনৈতিক স্তরে ৩১ দফা বৈঠক হয়েছে দু’দেশের। সেনার কমান্ডার স্তরে বৈঠক হয়েছে দফায় দফায়। জুলাই এবং আগস্টে ভারতের বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর দু’বার চীনের বিদেশমন্ত্রী ওয়াঙ ই-র সঙ্গে বৈঠক করেছেন। এই প্রক্রিয়ার উল্লেখ করা হয়েছে সম্পাদকীয়তে।
রাশিয়ায় ‘ব্রিকস’ সম্মেলনে শি-মোদী বৈঠককে গুরুত্বপূর্ণ আখ্যা দিয়ে সম্পাদকীয় বলেছে, ‘‘২০২০-র সীমান্ত বিরোধের পর এই প্রথম দুই দেশের দুই শীর্ষনেতা মুখোমুখি বসেছেন।’’
চীনের সঙ্গে সম্পর্ক ঘিরে জড়িত অর্থনীতির প্রসঙ্গও উল্লেখ করা হয়েছে সম্পাদকীয়তে। বলা হয়েছে, ‘‘অর্থনৈতিক সঙ্কটে পড়ে ভারতীয় বুর্জোয়ারা চীনের সঙ্গে ব্যবসায়িক সম্পর্ক সহজ করার জন্য তদ্বির করছিলেন। ভারতের বিদেশ মন্ত্রকের তথ্য অনুযায়ী চীন থেকেই ভারত সবচেয়ে বেশি আমদানি করে। চলতি অর্থবর্ষের এপ্রিল সেপ্টেম্বরে ৫৬.২৯ বিলিয়ন(=১০০কোটি) ডলারের আমদানি হয়েছে।
এই প্রসঙ্গেই সম্পাদকীয় বলেছে, ‘‘বৈদ্যুতিক গাড়ি, স্মার্টফোন, সোলার প্যানেল এবং ওষুধ নির্মাতা শিল্পগুলিকে ভারত সরকার ‘ম্যানুফাকচারিং হাব’ তৈরির জন্য চিহ্নিত করেছে। এমন বেশিরভাগ শিল্পের প্রয়োজন চীনের সঙ্গে ভারতের স্বাভাবিক সম্পর্ক ফিরিয়ে আনা।’’
এই সঙ্গে সম্পাদকীয় ভারতের চালু নীতির সমালোচনাও করেছে। বলা হয়েছে, ‘‘ম্যানুফাকচারিং ক্ষেত্রে চীনের সঙ্গে যৌথ উদ্যোগের প্রশ্নে নেতিবাচক মনোভাবও ভারতকে বদলাতে হবে। বৈদ্যুতিক গাড়ি নির্মাতা চীনের বৃহদাকার সংস্থা বিওয়াইডি’র সঙ্গে ভারতের একটি সংস্থার যৌথ উদ্যোগের প্রস্তাবকে বাতিল করা হয় ২০২৩ সালে।’’
সম্পাদকীয় বলেছে, ‘‘দু‘দেশের সম্পর্ক স্বাভাবিক করার তাগিদ অনুভূত হয় পরিবর্তনশীল ভূ-রাজনীতির জেরে। ইউক্রেন যুদ্ধ এবং গাজায় ইজরায়েলের আগ্রাসন সম্পদ সরবরাহে গুরুতর বাধা তৈরি করে। মার্কিন যু্ক্তরাষ্ট্রের ওপর অন্ধ নির্ভরতার বিপদ বুঝতে পারছে বহু দেশ।’’
INDIA CHINA PD
চীনের সঙ্গে বিরোধ প্রশমনে অর্থনীতিও: ব্যাখ্যা পিডি-র সম্পাদকীয়তে
×
Comments :0