Electoral bond RBI MAHINDRA

বন্ড তোফাতেই রফা, কোটাক মাহিন্দ্রার জন্য বদলে গেল রিজার্ভ ব্যাঙ্কের নীতি

জাতীয়

 বেসরকারি ব্যাঙ্ক বন্ড মারফত ‘চান্দা দো ধান্দা লো’ সূত্রেই রিজার্ভ ব্যাঙ্কের সঙ্গে নীতি বদলের রফা করেছে। বেসরকারি ব্যাঙ্ক কোটাক মাহিন্দ্রার তরফে বন্ডে বিজেপি’র তহবিলে ৩৫ কোটি টাকা তোফা জমা পড়ার পরে তাদের পক্ষে বদলে গিয়েছে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের নীতি। এতে ফায়দা তুলেছে কোটাক মাহিন্দ্রা ব্যাঙ্ক। 
সম্প্রতি দেশের তৃতীয় বৃহত্তম বেসরকারি ব্যাঙ্ক কোটাক মাহিন্দ্রা তার মালিকানার শেয়ারের অংশ নিয়ে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের নির্দেশ না মানায় তা নিয়ে বিরোধ আদালতে মামলা গড়ায়। মামলার প্রায় ১৩ মাস বাদে কোটাক মাহিন্দ্রা কোর্টের বাইরে রিজার্ভ ব্যাঙ্ককে তা ফয়সালার প্রস্তাব দিলে, তা বাধ্য হয়ে মেনে নেয় রিজার্ভ ব্যাঙ্ক। আসলে বন্ড তোফায় ফয়সালা হয় বিরোধের। আদালতের বাইরে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক তার ব্যাঙ্ক পরিচালনার নির্দেশিকা বদল করে কোটাকের সঙ্গে ফয়সালা করে নেয়। কোটাক মাহিন্দ্রা ব্যাঙ্কের পক্ষে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের এই নীতি বদলে ফয়সালা মেনে নেওয়ার পিছনে শাসক দলে দেওয়া বন্ডের তোফা কাজ করছে বলেই জানাচ্ছে অভিজ্ঞ মহল।
নির্বাচন কমিশন বন্ড-তথ্য প্রকাশের পর, শাসকের তহবিলে বন্ড তোফা পৌঁছে দিয়ে বিনিময়ে সরকারি নানা সুযোগ সুবিধা আদায়ের তথ্য উঠে আসছে। এবারে দেখা গেল বন্ডের হাত পৌঁছে গেছে রিজার্ভ ব্যাঙ্কেও। দেশে সমস্ত সরকারি ও বেসরকারি ব্যাঙ্কগুলিকে নিয়ন্ত্রণ করে থাকে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক। কোটাক মাহিন্দ্রা ব্যাঙ্ককে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক ২০১৩ সালে কোটাক পরিবারের মালিকানার শেয়ার ১২ বছরের মধ্যে কমিয়ে মোট শেয়ারের ১৫ শতাংশে নিয়ে আনার নির্দেশ দেয়। উল্লেখ. ২০০৩ সালে উদয় কোটাকের সংস্থা কোটাক মাহিন্দ্রা ফিনান্স লিমিটেডকে, কোটাক মাহিন্দ্রা ব্যাঙ্ক চালুর লাইসেন্স দেয় রিজার্ভ ব্যাঙ্ক। উদয় কোটাককে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক তাদের মাহিন্দ্রা ব্যাঙ্কে শেয়ার ১৫ শতাংশে নামিয়ে আনার  নির্দেশ দিলে তা তারা করেনি। নির্দেশ অমান্য করে ২০১৫ সাল অবধি কোটাকের শেয়ারের অংশ ৪০.২ শতাংশ তাদের হাতেই ছিল। ২০১৭ সালের মধ্যে শেয়ার কেনাবেচার মাধ্যমে তা কমে হয় ২৯.৭৯ শতাংশ। এরই মধ্যে কোটাক তাদের অংশের শেয়ার কমানোর যে নির্দেশ রিজার্ভ ব্যাঙ্ক দিয়েছিল, তা সংশোধনের আবেদন জানায়। সেই আবেদন খারিজ করে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক এনিয়ে কোটাকের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা দায়ের করে। এই বিরোধের মাঝেই বন্ড মারফত শাসক দলকে টাকা দিয়ে বিরোধ ফয়সালার পথ নেয় কোটাক। টাকা দেওয়ার পরেই দেখা গেল শাসকের চাপে রিজার্ভ ব্যাঙ্কেরও নীতি বদলে গেল।
বন্ড-তথ্য সুত্রে জানা গেছে, কোটাক গোষ্ঠীর  ইনফিনা প্রাইভেট লিমিটেড ৩৫ কোটি টাকার বন্ড কিনে বিজেপি-র তহবিলে জমা দেওয়ার পর থেকে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের সঙ্গে বিরোধের ফয়সালার পথ খোঁজা শুরু হয়। কোটাকের ইনফিনা ৩৫ কোটি টাকার মধ্যে ২৫ কোটি টাকার বন্ড কিনেছে ২০১৯ সালের ১০ অক্টোবর। তা বিজেপি তহবিলে জমা পড়ার ৬ দিন পরে ভাঙানো হয়েছে অর্থাৎ ২০১৯ সালের ১৬ অক্টোবর। ফের ১৬ জানুয়ারি, ২০২০ সালে তারা ১০ কোটি টাকার বন্ড কেনে এবং সেই বন্ড বিজেপি ভাঙায় ২০২০ সালের ২১ জানুয়ারি। বিজেপি বন্ড ভাঙানোর ৮ দিন বাদেই দেখা গেল রিজার্ভ ব্যাঙ্ক কোটাকের শর্ত অনুযায়ী তাদের আগের নির্দেশ বদল করে আদালতের বাইরে বিরোধের ফয়সালা করে নিয়েছে। যে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক কোনও মতেই নেজেদের ঘোষিত ব্যাঙ্ক নীতি আদালতের বাইরে ফয়সালা করতে রাজি ছিল না, রাতারাতি সেই নীতি বদল হয়ে গেল। উদয় কোটাকদের শেয়ার ১৫ শতাংশে সীমিত করার বদলে, ২৬ শতাংশ শেয়ার রাখার দাবি মেনে নেয় রিজার্ভ ব্যাঙ্ক। 
অন্যদিকে কোটাক মাহিন্দ্রা ব্যাঙ্কের সিইও পদে মালিক উদয় কোটাকের ১২ থেকে ১৫ বছরের মেয়াদ শেষ হলে, সেই মেয়াদ বাড়ানোর যে প্রস্তাব ছিল কোটাকের, তাও মেনে নেয় রিজার্ভ ব্যাঙ্ক। এক্ষেত্রেও বন্ড তোফার রফাতেই ভোল বদল হলো রিজার্ভ ব্যাঙ্কের নীতি। বন্ডের এই অপার মহিমায় বিস্ময় প্রকাশ করেছেন প্রাক্তন অর্থসচিব সুভাষ চন্দ্র গর্গ। তিনি বলেন, বিজেপি-কে বন্ডে টাকা দেওয়ায় রিজার্ভ ব্যাঙ্কের নীতি বদলের পরিনাম ভালো হবে না। দেখা গেল খুব সামান্য টাকায় শাসকের চাপে নীতি বদল করে ফেলল রিজার্ভ ব্যাঙ্ক, যা বিস্ময়কর।  

Comments :0

Login to leave a comment