সোমবার মহাজাতি সদনে মুজফ্ফর আহ্মদের জন্মদিনের অনুষ্ঠানে একথা বলেছেন সিপিআই(এম) রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম। এই অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন সিপিআই(এম) পলিট ব্যুরো সদস্য সূর্য মিশ্র। সভাপতিত্ব করেন প্রবীণ সিপিআই(এম) নেতা বিমান বসু।
তিনি বলেন, ‘‘বাংলাদেশ উত্তাল। লক্ষ্য বা উদ্দেশ্য নিয়ে কিছু বলব না। কিন্তু লক্ষ লক্ষ মানুষ পথে নামলেন। কারও কোনও অনুমতি দরকার পড়েনি। সব শাসক মনে করে পুলিশ দিয়ে দমন করা যায়। যায় না, যদি মানুষ ঐক্যবদ্ধ থাকেন। এখানে পুলিশ, বিজেপি, তৃণমূল মিলে ঐক্য ভাঙলো লোকসভা নির্বাচনে। মুর্শিদাবাদে ঠিক তাই হয়েছে।’’
সেলিম বলেন, ‘‘বাংলাদেশে জামাত,পাকিস্তান, আমেরিকা,সৌদি আরবের স্বার্থ কাজ করে। ’’ তিনি বলেন, ‘‘শেখ হাসিনা ভোট জিতেছেন। কিন্তু ফল আর ভাবনায় গরমিল থাকলে বেশিদিন চলতে পারে না। সেনা শাসন যেন না হয়, সজাগ থাকতে হবে সে দেশের জনগনকে। ’’
পরিস্থিতি সম্পর্কে সেলিম বলেন, ‘‘দেশে চরম দক্ষিণপন্থা। বিশ্বে এবং উপমহাদেশেও দক্ষিণপন্থার প্রভাব বাড়ছে। কিন্তু কেবল বিচলিত হলে চলবে না। বামপন্থী পথে নতুন প্রজন্মকে প্রশিক্ষিত করার কাজ করতে হবে। মুজফ্ফর আহ্মদের ১৩৬ তম জন্মদিবসে এটিই কাজ। মতাদর্শগতভাবে শিক্ষিত করে কর্মী তৈরি করে আনা আমাদের কাজ।’’
সেলিম বলেন, ‘‘মানুষের সাহায্য আমরা পাচ্ছি, পেয়েছি। সঙ্ঘ পরিবারের প্রচারের মোকাবিলায় এবারে যে যেভাবে পেরেছেন নেমেছেন। কিন্তু এরাজ্যে মানুষের মতকে লুট করা হয়েছে কৃত্রিম বিভাজন ছড়িয়ে। ইভিএমের ফলাফল এবং মানুষের যন্ত্রণা এক জায়গায় আসেনি। মোদী এবং মমতা অর্থ, প্রচারমাধ্যম, পেশিশক্তি ও ব্যবস্থাপনার সাহায্যে নির্বাচনকে প্রভাবিত করেছে। পিআর এজেন্সি দিয়ে নির্বাচন পরিচালনা হয়েছে।’’
সেলিম বলেন, ‘‘বাংলায় সব থেকে বড় আক্রমণ কেবল সিপিআই(এম)'র উপর নয়, বামপন্থাকেই উৎখাত করার চেষ্টা চলছে। কাকাবাবুরা বামপন্থী পরিমণ্ডল গড়ে তুলেছিলেন। সেটিকে ভাঙার চেষ্টা চলছে। নয়া উদারবাদ সমাজে সামন্তবাদী মানসিকতার চাষ করছে। এর বিরুদ্ধে কমিউনিস্টদের উদ্যোগ নিতে হবে।’’
এবার মুজফ্ফর আহমদ স্মৃতি পুরস্কার পান শিবানন্দ পাল, স্বর্ণেন্দু দত্ত এবং প্রবীর পুরকায়স্থ। পুরস্কার কমিটির তরফে শ্রীদীপ ভট্টাচার্য বইগুলির বিষয়বস্তুর উপর বক্তব্য রাখেন। ‘নিউজক্লিক’-র প্রধান সম্পাদক প্রবীর পুরকায়স্থ বলেন, "মুজফ্ফর আহ্মদের মত ব্যক্তিরা উদাহরণ। প্রগতির সংগ্রামে বুদ্ধিজীবীদের কী ভূমিকা হতে পারে, কীভাবে সৃজনশীলতাকে বৃহত্তর সামাজিক স্বার্থে এক জায়গায় আনা যায়, তার উদাহরণ মুজফ্ফর আহ্মদ।’’
সূর্য মিশ্র বলেন, ‘‘আজকের চ্যালেঞ্জের সঙ্গে ১৯৩৪-৩৬ সালের মিল রয়েছে। বিশ্ব জুড়ে উগ্র দক্ষিণপন্থা এগোচ্ছে। আমেরিকায় ট্রাম্পের জয়ের সম্ভাবনা রয়েছে। এদেশে ১০ বছর ধরে দেশ যে কায়দায় চলছে তাতে ফ্যাসিবাদের সূচনার সমস্ত লক্ষণ দেখা গিয়েছে। মানুষ সতর্ক হয়েছেন তাই গরিষ্ঠতা পায়নি বিজেপি। কিন্তু তারপরেও রাজনীতি অর্থনীতির কোনও পরিবর্তন হয়নি, কারণ ওদের ভোট কমেনি বিশেষ।’’
মিশ্র বলেন, ‘‘আরএসএস'র ভূমিকা রয়েছে। এরাজ্যে স্বৈরতান্ত্রিক শক্তি ক্ষমতায়। বিজেপির বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ ভাবে লড়তে হবে। এর আগে ভোটে এমন জালিয়াতি হয়নি। দেশে ৫ কোটি বেশি ভোট কোথা থেকে এল নির্বাচন কমিশন কোনও হিসেব দেয়নি। রাজ্যে ১০টি আসনে বিজেপি হেরে যেত। আক্রমণের রাজনৈতিক, মাঠের লড়াই ও মতাদর্শগত মোকাবিলা করতে হবে। বামপন্থীদের ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। বামমনস্ক মানুষকে এক জায়গায় আনতে হবে। কেবল বামেদের শক্তিতে এই চ্যালেঞ্জ রোখা যাবে না। গণতান্ত্রিক শক্তিগুলিকেও এক জায়গায় আনতে হবে। ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে ব্যাপক ঐক্য প্রয়োজন।’’
মিশ্র বলেন,‘‘কেউ ভাবছে বিজেপি দিয়ে তৃণমূল, বা তৃণমূল দিয়ে বিজেপিকে হারানো যাবে। না সেটা হওয়ার নয়। যদিও তৃণমূল আর বিজেপি সমান নয়।’’
Comments :0