RSS agenda

ভারত এখনই ‘হিন্দু রাষ্ট্র’, দাবি সঙ্ঘের

জাতীয়

ভারতকে ‘হিন্দু রাষ্ট্র’ বলেই মনে করে রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘ। সংগঠনের সর্বভারতীয় প্রতিনিধি সভার বৈঠকের পরে মঙ্গলবার সাধারণ সম্পাদক দত্তাত্রেয় হোসাবালে সাংবাদিকদের বলেন, ভারত ইতিমধ্যেই হিন্দু রাষ্ট্র। নেশন ও রাষ্ট্র পৃথক ধারণা। নেশন হচ্ছে একটি সাংস্কৃতিক ধারণা, রাষ্ট্র তৈরি হয় সংবিধানের মাধ্যমে। হিন্দু রাষ্ট্র সম্পর্কে আমরা একশো বছর ধরেই বলে আসছি এটি সাংস্কৃতিক ধারণা। কোনও তাত্ত্বিক ধারণা নয়। সংবিধান রাষ্ট্র তৈরি করে। রাষ্ট্রক্ষমতার সঙ্গে তা জড়িত। ভারত যেহেতু ইতিমধ্যেই হিন্দু রাষ্ট্র তাকে হিন্দু রাষ্ট্রে পরিণত করার প্রয়োজন নেই। 
এইসব ধোঁয়াশা ছড়ালেও আরএসএস জন্মলগ্ন থেকেই মনে করে ‘নেশন’ তলা থেকে তৈরি হবে এবং তার ভিত্তিতেই হিন্দু রাষ্ট্র গঠিত হবে। সঙ্ঘের দ্বিতীয় সরসঙ্ঘচালক গোলওয়ালকার এই ‘নেশন’ তৈরির লক্ষ্যকেই প্রাধান্য দিয়েছিলেন। কিন্তু তার মতাদর্শগত ভিত্তি হবে ‘হিন্দুত্ব’। এই হিন্দুত্বের সঙ্গে ধর্মের তত সম্পর্ক দেখেননি সঙ্ঘের তাত্ত্বিকরা। হিন্দুদের ‘জাতি’ হিসাবে দেখা হয়েছে। এই ধারণা সঙ্ঘ এখনও বহন করে। তাই ভারতীয় জাতিসত্ত্বার বদলে হিন্দু জাতিসত্ত্বার কথাই তারা বলে থাকে। হোসাবালে এদিন যা বলেছেন তা থেকে আবারও সামনে এসেছে এই ধারণাই। 
প্রতিনিধি সভার প্রস্তাবে বলা হয়েছে, ‘বিদেশি দখলদারি’ ও সংগ্রামের সময়ে ভারতের সামাজিক জীবন তছনছ হয়ে গিয়েছিল। সামাজিক, অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক ধর্মীয় ব্যবস্থা গুরুতর ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে গিয়েছিল। সেই সময়ে ‘স্ব’-এর ধারণাকে সামনে রেখে লড়াই হয়েছে। স্বধর্ম, স্বদেশি, স্বরাজের ধারণার ভিত্তিতে লড়াই হয়েছে। স্বাধীনতা উত্তরকালে ভারত অনেক সাফল্য অর্জন করেছে। এখন ভারত চিরায়ত ‘ভারতীয়’ ধারণার ভিত্তিতে ভারতের পুনর্জাগরণ ঘটছে। এখন দেশকে পুনর্গঠন করতে ‘আধুনিকতার ভারতীয় ধারণা’ ব্যবহার করতে হবে। তার ভিত্তিতে বিজ্ঞান-প্রযুক্তিকে ব্যবহার করতে হবে। তিনটি কথা সামনে আনা হয়েছে: পরিবার প্রথাকে শক্তিশালী করতে হবে, ভ্রাতৃত্বের ভিত্তিতে সম্প্রীতির সমাজ তৈরি করতে হবে, স্বদেশি চিন্তায় উদ্বুদ্ধ হয়ে উদ্যোগের প্রসার ঘটাতে হবে। 
প্রস্তাবে বলা হয়েছে, ঔপনিবেশিক মনোবৃত্তি বর্জন করতে হবে এবং নাগরিক কর্তব্য পালন করতে হবে। এই প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী স্বাধীনতা দিবসের ভাষণে যে পাঁচটি কর্তব্যের কথা বলেছেন তাকেই ‘পাঁচ প্রাণ’ বলে সামনে তুলে ধরা হয়েছে। 
এই প্রস্তাবের সুর হলো সঙ্ঘের ঘোষিত লক্ষ্যেই সমগ্র ভারতবাসীকে কর্তব্য পালন করে যেতে হবে। নাগরিক অধিকারের কথা বিন্দুমাত্র উচ্চারিত হয়নি। সংবিধানে বর্ণিত মৌলিক অধিকারের কথা বলা হয়নি। কিন্তু ‘কর্তব্যের’ কথা বলা হয়েছে। বিশ্বের প্রায় সর্বত্রই উগ্র দক্ষিণপন্থীরা ‘পরিবার প্রথা’ শক্তিশালী করার কথা বলে, আরএসএস-ও তাই বলেছে। বস্তুত হোসাবালে এদিন সমলিঙ্গে বিবাহের প্রসঙ্গে সঙ্ঘের বিরোধিতার কথা জানিয়ে এবং কেন্দ্রের অবস্থানকে সমর্থন করে বলেছেন, দুই বিপরীত লিঙ্গের মধ্যেই কেবল বিবাহ হতে পারে। তেমনই ‘সম্প্রীতির’ কথা প্রস্তাবে লেখা থাকলেও সঙ্ঘ পরিবারের সংগঠনগুলির হাতে প্রতিদিনই আক্রান্ত হচ্ছেন সংখ্যালঘুরা। 
হিন্দুত্বের প্রসঙ্গও এসেছে সঙ্ঘের প্রস্তাবে। বলা হয়েছে, হিন্দুত্বের বিরুদ্ধে দেশের ভেতরে ও বাইরে কিছু শক্তি ষড়যন্ত্র করছে। তাদের সম্পর্কে সতর্ক থাকতে হবে, তাদের পরাস্ত করতে হবে। 
সঙ্ঘের এই প্রস্তাবে বলা নেই দেশের তীব্র অর্থনৈতিক বৈষম্যের কথা, কর্মসংস্থানের সঙ্কটের কথা, কৃষির সঙ্কটের কথা। রুটি-রুজির প্রসঙ্গেই যায়নি তারা। 
সাংবাদিক সম্মেলনে রাহুল গান্ধীর সঙ্ঘ-বিরোধী মন্তব্য সম্পর্কে হোসাবালের দাবি, সমাজে সঙ্ঘের গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে। তা মাথায় রেখেই রাহুলের দায়িত্বশীল মন্তব্য করা উচিত। বিদেশের মাটিতে গণতন্ত্র নিয়ে রাহুলের মন্তব্য নিয়ে হোসাবালে বলেন, গোটা দেশকে যারা জেলখানায় পরিণত করেছিল গণতন্ত্র সম্পর্কে তাদের মন্তব্য করার অধিকার নেই।
 

Comments :0

Login to leave a comment