All India Farmers Union Open Rally

মানুষের ক্ষোভ বাড়ছে, পুলিশকে হুঁশিয়ারি দিলেন সেলিম

জেলা

বাংলাকে লুটেপুটে তছনছ করছে তৃণমূল আর বিজেপি। আর এখন পুলিশকে সঙ্গে নিয়ে সম্পূর্ণ বেলাইনে চলছে পঞ্চায়েত। সাধারণ গরিব মানুষ কিন্তু মেজাজ হারাচ্ছেন। মানুষের লড়াইয়ের মেজাজ দেখে ভয় পাচ্ছে ওই দুই দল। এলাকায় এলাকায় লাল ঝান্ডার আরও ঐক্যবদ্ধ এককাট্টা লড়াই ঝেঁটিয়ে তাড়াবে তৃণমূলকে। আর তৃণমূল সরলে বিজেপি’রও শক্তি থাকবে না এই রাজ্যে। শুক্রবার জয়নগরের ধোষায় সারা ভারত খেতমজুর ইউনিয়নের দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা দ্বিতীয় সম্মেলনের প্রকাশ্য সমাবেশে সিপিআই(এম) রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম একথা বলেন। 
তিনি বলেন, চুরি, দুর্নীতি এমন পর্যায়ে গেছে যে চারদিক থেকে প্রবল ঘৃণা, প্রতিরোধ বিক্ষোভ হচ্ছে। সামনে এমন দিন আসছে তৃণমূলের কর্মীদের বলতে হবে আমি আর তৃণমূল করব না, তৃণমূলের পতাকা ধরব না। সমাবেশে সারা ভারত খেতমজুর ইউনিয়নের রাজ্য সম্পাদক অমিয় পাত্র বলেন, গরিব মানুষের বাড়িঘর, লেখাপড়া, রুজি রোজগার সব লুট হয়ে গেছে। তৃণমূল যতদিন থাকবে ততদিন এরকম চলবে। সুতরাং এখনই পঞ্চায়েত থেকে ঘাড় ধরে তাড়াতে হবে তৃণমূলকে।
সারা ভারত খেতমজুর ইউনিয়ন দক্ষিণ ২৪ পরগনা দ্বিতীয় সম্মেলন ধোষায় শুরু হয় শুক্রবার। এই উপলক্ষে এদিন ধোষায় এই প্রকাশ্য সমাবেশ হয়। মহম্মদ সেলিম এবং অমিয় পাত্র ছাড়াও সমাবেশে বক্তব্য রাখেন সারা ভারত খেতমজুর ইউনিয়নের সভাপতি তুষার ঘোষ সহ আবদুল ওদুদ মোল্লা, দীপক দাস প্রমুখ নেতৃবৃন্দ। উপস্থিত ছিলেন হিমাংশু দাস, নিরাপদ সর্দার, রাহুল ঘোষ, অলোক ভট্টাচার্য, অশোক ভট্টাচার্য, রামকৃষ্ণ রায়চৌধুরি প্রমুখ। সভাপতিত্ব করেন রুহুল আমিন গাজি।

সমাবেশের অনেক আগে থেকেই গোটা মাঠ এদিন পরিপূর্ণ হয়ে ওঠে এলাকার খেতমজুর, কৃষক ও সাধারণ শ্রমজীবী মানুষের ভিড়ে। সেই ভিড় রাস্তা উপচে পড়ে সমাবেশ শুরু হতেই। আশেপাশে এলাকা থেকে বিভিন্ন মিছিল একের পর এক এসে সমবেত হয় ধোষার মাঠে। টোটো এবং বাসে চেপে লাল পতাকা হাতে অসংখ্য মানুষ শামিল হন প্রকাশ্য সমাবেশে। শুধু তাই নয়, বারুইপুর থেকে গোচারণ পেরিয়ে ধোষায় এগোতেই লাল পতাকার ভিড় ছিল চোখে পড়ার মতো।
সমাবেশে মহম্মদ সেলিম বলেন, তৃণমূল তো আছেই, তার সঙ্গে যোগ হয়েছে তাদের মদতপুষ্ট পুলিশ। তারাই হম্বিতম্বি বেশি করছে। মনে রাখতে হবে দালালদের দিন কিন্তু শেষ। তৃণমূল-বিজেপি’র মুখের ঝগড়া দেখে কিন্তু ভুললে চলবে না। আরএসএস, বজরঙ, দুর্গা বাহিনী, মমতা ব্যানার্জি—সবাই  একসঙ্গে হয়েছে। গোটা দেশে এবং রাজ্যে চলছে লুটপাট। কেরোসিন, রান্নার গ্যাসের দাম কত ছিল আর কত হয়েছে। বিনা পয়সায় রেশনের কী হাল। এখন নরেন্দ্র মোদীর সেই হাসি মুখের ছবি কোথায় গেল। কোথায় গেল কন্যাশ্রী, উৎসশ্রী’র ছবিতে মমতা ব্যানার্জির সেই হাসি মুখ। 
সেলিম বলেন, আরএসএস’র হাত ধরে সংখ্যালঘুদের পর্যন্ত ধোঁকা দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। কেন্দ্রের সঙ্গে হাত মিলিয়ে বুলডোজার রাজনীতি চালাচ্ছেন তিনি। ওদিকে শুভেন্দু অধিকারী এত বড় বড় কথা বলছেন, তৃণমূল যখন চুরি করেছে তখন তো তিনি তৃণমূলেই ছিলেন। বিজেপি’তে যোগ দিয়ে শুদ্ধ হয়ে গেছেন বলে সবাইকে বোঝাচ্ছেন। মানুষ সবই শুনছেন, দেখছেন, জানছেন। মানুষ যাতে ফুঁসে উঠতে না পারেন তার জন্য ঐক্য ভাঙার চেষ্টা চলছে। সবাইকে এককাট্টা থাকতে হবে। এক হয়ে লড়তে হবে।


অমিয় পাত্র বলেন, তৃণমূল আর বিজেপি—একদল চোর আর এক দল ডাকাত। এক দল থেকে অন্য দলে যাওয়া আসা চলে নেতা কর্মীদের। এই দুই দলকে একটাই দল ধরে নিয়ে আরও জোরদার লড়াই চালাতে হবে। যেখানে প্রকৃত ভোট হবে, মানুষ নিজের ভোট নিজে দিতে পারবেন, সেখানেই নিশ্চিহ্ন হবে তৃণমূল। যার আত্মসম্মান বোধ আছে তিনি এরপর আর তৃণমূল করবেন কি না সন্দেহ আছে। কারণ তৃণমূলের কর্মীরাই তো দেখছেন কয়লার টাকায় কীভাবে প্রাসাদ গড়ে উঠছে, গরিবের আবাস যোজনার টাকায় কীভাবে ধনীদের তিনতলার পর চারতলা উঠছে। 
অমিয় পাত্র বলেন, বলা হয়েছিল ২০০২ সালের পর কারো আর কাঁচা বাড়ি থাকবে না। কোথায় কি। তৃণমূল থাকলে কিছুই হবে না। গরিবের ওপর আক্রমণ আর কতদিন সহ্য করবেন মানুষ? এই আক্রমণ ঠেকাতে হবে।
তৃণমূল কিন্তু চিরকাল ক্ষমতায় থাকবে না, মানুষই গদি থেকে সরিয়ে দেবেন—এই হুঁশিয়ারি দিয়ে এদিন তুষার ঘোষ বলেন, তারপর পুলিশের ভূমিকা কী হবে তা ভেবে রাখতে হবে পুলিশকে। কারণ একটা অত্যন্ত সন্ত্রাস কবলিত এলাকায় যখন এই সভার আয়োজন হচ্ছে, তখন ভরসা মেলেনি পুলিশের পক্ষ থেকেও। লাল ঝান্ডা নিয়ে মানুষই এগিয়ে এসেছেন, একজন আর একজনকে ভরসা জুগিয়েছেন। তবেই তো ভরে উঠেছে এই মাঠ, রাস্তা। এই মানুষই তৃণমূলের চোর লুটেরাদের এখন একঘরে করছেন, গাছে বেঁধে পেটাচ্ছেন। জিনিসপত্রের ভয়াবহ মূল্যবৃদ্ধিতে জেরবার মানুষের জন্য কোনও সরকার নেই। বামফ্রন্ট আমলের সমস্ত সুযোগ সুবিধাগুলি থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন মানুষ। সুতরাং সমস্ত অংশের গরিব মানুষকে আরও বেশি করে একজোট করতে হবে, হকের দাবিতে তীব্র লড়াই লড়তে হবে। 
   প্রকাশ্য সমাবেশের পর এদিন সম্মেলনের উদ্বোধন হয়। উদ্বোধন করেন অমিয় পাত্র। পতাকা উত্তোলন করেন সংগঠনের জেলা সভাপতি রুহুল আমিন গাজি। সম্পাদকীয় প্রতিবেদন পেশ করেন সংগঠনের জেলা সম্পাদক দীপক দাস। সম্পাদকীয় প্রতিবেদনের ওপর এদিন ১০জন প্রতিনিধি আলোচনা করেন। সম্মেলন স্থলের নাম হয়েছে পলাশ প্রামাণিক ও হেমন্ত বিশ্বাস নগর। মঞ্চ হয়েছে সলিল চৌধুরি ও অজিত চ্যাটার্জির নামে। সম্মেলন চলবে শনিবার পর্যন্ত।  

    
            
 

Comments :0

Login to leave a comment