প্রতীম দে
‘‘শ্রীমতী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে দীর্ঘ ২৬ দিনের অনশন কর্মসূচি রাজ্য সরকারের অগণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে জমি দখলের চেষ্টার বিরুদ্ধে মানুষের প্রতিবাদী মনোভাবকে শক্তিশালী শাণিত তেজোদীপ্ত করে তোলে।’’
না এটা কোন লেখকের বই থেকে নেওয়া অংশ নয়। এই অংশটি পাওয়া যাবে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের অষ্টম শ্রেণির ইতিহাস বইয়ের ১৬৫ পাতায়।
ক্ষমতায় আসার পর নতুন সিলেবাস কমিটি করেছিলেন মমতা ব্যানার্জি। সেই সিলেবাস কমিটি অষ্টম শ্রেণির ইতিহাসের পাঠ্য বইয়ের নবম অধ্যায় যুক্ত করেছে সিঙ্গুর আন্দোলনকে। যেখানে প্রতিটা ছত্রে ছত্রে লেখা রয়েছে মমতা ব্যানার্জির সংকীর্ণ রাজনীতির কথা। বর্তমানে তৃণমূলের নেতা নেত্রীদের একগুচ্ছ নাম রয়েছে। রয়েছে পার্থ চ্যাটার্জি, পূর্ণেন্দু বসু, দোলা সেন, ব্রাত্য বসু, অর্পিতা ঘোষ, শোভন চ্যাটার্জি, শোভনদেব চ্যাটার্জি, সুব্রত বক্সী, মুকুল রায়, রবীন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য, বেচারাম মান্নার নামও। নাম রয়েছে শুভাপ্রসন্ন, যোগেন চৌধুরী, জয় গোস্বামী, কবীর সুমনদের।
কী বলা হয়েছে এই ইতিহাসে?
প্রথম কথা যা এই ইতিহাসে উল্লেখিত রয়েছে তা হচ্ছে সিঙ্গুর আন্দোলনের নেতৃত্ব দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী তৎকালীন বিরোধী নেত্রী মমতা ব্যানার্জি। এই মমতা ব্যানার্জি তো আরএসএস’র দুর্গা। আর তাই তাদের কায়দায় নিজের তৈরি করা ‘ইতিহাস‘-কে তিনি নিজেই বিকৃত করলেন। পরে মমতা ব্যানার্জিই বললেন টাটা-দের তিনি তাড়াননি। তাহলে কি মিথ্যে লেখা এই ইতিহাস বইয়ে?
বইয়ে উল্লেখ করা হয়েছে যে সরকার উর্বর জমির ওপর কারখানা তৈরি করতে চেয়েছিল। বামফ্রন্ট সরকার কী চেয়েছিল লিখেছেন তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। ‘ফিরে দেখা’ বইয়ের দ্বিতীয় তিনি লিখেছেন, ‘‘পরবর্তীতে অনেকের সিঙ্গুরে জমি উর্বরতা ইত্যাদি নিয়ে কিছু কথা বলেছেন সেখানে এক ফসলি থেকে দু-ফসলি জমিতে চাষ করে যে কর্মসংস্থান হয় সম্পদ সৃষ্টি হয় অটোমোবাইলের মতন একটি কারখানা হলে তার কী ফলাফল হয় তার তুলনামূল্য বিচার করেই আমরা চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিয়েছি। প্রকৃতপক্ষে রাজ্য সিংহভাগ জমির সেই অর্থের চাষযোগ্য পতিত জমির পরিমাণ শতকরা তিনভাগের বেশি নয় সিংহ রেখার জন্য জমি অধিগ্রহণের দায়িত্ব নিয়েছে অধিগ্রহণ শুধু প্রশাসন করবে না কৃষক সংগঠন গণসংগঠন রাজনৈতিক দল স্থানীয় ক্লাব সাংস্কৃতিক সংগঠন সবাইকে একত্র করতে হবে এই প্রক্রিয়ায় সংশ্লিষ্ট গ্রামগুলিতে আলাপ আলোচনা পথসভা মিছিল জনসভা সংগঠিত হয়েছে এসব সত্বেও পরে দেখা যাচ্ছে ফাঁক রয়ে গেছে সমস্ত মানুষের কাছে সমস্ত কথা পৌছায়নি।’’
Comments :0