কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশে ১৮৩ জন ভুয়ো শিক্ষকের নাম প্রকাশ করতে বাধ্য হয়েছে এসএসসি। সেই তালিকা বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় প্রকাশ হওয়ার পর বেআইনিভাবে চাকরি পাওয়া শিক্ষকরা কী করবেন, তা নিয়ে আলোচনা শুরু হয়ে গিয়েছে। দু’জন অন্তত আগেই ইস্তফা দিয়েছেন। আগামীদিনে এই ঘুর পথে চাকরি পাওয়া প্রার্থীদের অনেকেই ইস্তফা দিতে বাধ্য হবেন বলেই মনে করা হচ্ছে।
এসএসসি’র তালিকায় ৯৩তম স্থানে নাম রয়েছে পিউ মজুমদারের। তিনিও গত ৯ নভেম্বর স্কুলে গিয়ে ইস্তফাপত্র জমা দিয়ে এসেছেন। একইভাবে একমাস আগেই ইস্তফা দিয়ে এসেছেন মালদহ জেলার খরবা এইচএন এগ্রিল হাইস্কুলের বাংলার শিক্ষক আজাদ আলি মির্জা। এসএসসি’র প্রকাশ করা ভুয়ো তালিকায় তাঁর নাম রয়েছে ১১তম স্থানে। ভুয়ো তালিকায় পিউ মজুমদার ছাড়াও উত্তর দিনাজপুরের আরও ১২ জনের নাম রয়েছে বলে ডিআই অফিস সূত্রে জানা গিয়েছে।
পিউ মজুমদার কোচবিহার জেলার মেখলিগঞ্জের ফুলকাডাবড়ি নবীনচন্দ্র হাইস্কুলে ভূগোলের শিক্ষক হিসাবে প্রথমে নিযুক্ত হয়েছিলেন। সেই স্কুলে কয়েক মাস শিক্ষকতা করার পর আপস বদলি নিয়ে তিনি ২০২১ সালের ৯ নভেম্বর উত্তর দিনাজপুর জেলার চোপড়া ব্লকের টুটু সিংহ স্মৃতি হাইস্কুলে যোগ দেন। এরমধ্যে শিক্ষক নিয়োগের দুর্নীতির বড়সড় ফাঁস আদালতে খুলতে শুরু করে। বেআইনিভাবে নিয়োগ হওয়া প্রার্থীদের নামও আদালতের কাছে চলে আসে সিবিআই’র মাধ্যমে। বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় স্পষ্ট করে বলেছিলেন, বেআইনিভাবে চাকরি পাওয়া প্রার্থীরা ১২ নভেম্বরের মধ্যে স্বেচ্ছায় ইস্তফা না দিলে তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এখনও পর্যন্ত যা জানা যাচ্ছে, একাদশ-দ্বাদশে ভুয়ো শিক্ষক নিয়োগ হয়েছে ৩৯ জন। সিবিআই আদালতকে জানিয়েছে, ৩৯ জন নয়, ৯০৭ জন। নবম-দশমে ১৮৩ জন। সিবিআই বলছে, ৯৫২ জন। গ্রুপ-সি শিক্ষাকর্মী নিয়োগে ৩৫২ জন। এটা এসএসসি’র দাবি। সিবিআই বলছে, ৩ হাজার ৪৮১ জন শিক্ষাকর্মী বেআইনিভাবে নিয়োগ হয়েছে।
গত ৯ নভেম্বর পিউ মজুমদার ব্যক্তিগত কারণ দেখিয়ে চাকরি থেকে ইস্তফা দেওয়ার সময় স্কুল কর্তৃপক্ষ কারণ জানতে চাইলে তিনি মুখ খোলেননি। টুটু সিংহ স্মৃতি হাইস্কুলের অন্যান্য শিক্ষকরা যখন পিউ মজুমদারের কাছে সিদ্ধান্তের কারণ জানতে চান, তখন পিউ বলেছিলেন, তাঁর আইনজীবীর পরামর্শ অনুযায়ী ইস্তফা দিচ্ছেন। আর কিছু বলেননি তিনি। গত ৯ নভেম্বর সকালে স্কুলে এসে ইস্তফা দিয়ে তড়িঘড়ি স্কুল ছেড়ে চলে যান পিউ মজুমদার। হতচকিত হয়ে যান সহকর্মীরা। সে দিনের পর থেকে ভূগোল শিক্ষিকাকে আর স্কুলের চৌহদ্দিতে দেখেননি কেউ। পিউ মজুমদারের ইস্তফার বিষয়টি তখনই জেলা স্কুল পরিদর্শকে জানানো হয়েছে বলে টুটু সিংহ স্মৃতি হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক জানিয়েছেন।
বৃহস্পতিবার ১৮৩ জনের ভুয়ো নিয়োগের তালিকা প্রকাশ হওয়া ১১তম জায়গায় নাম থাকা আজাদ আলি মির্জা বাংলার শিক্ষক ছিলেন। নভেম্বর মাসেই তিনি স্কুল থেকে ইস্তফা দিয়ে আসেন। তাঁর ইস্তফা দেওয়া নিয়ে খরবা এইচএন এগ্রিল হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক শেখ হোসেন আলি বিস্ফোরক মন্তব্য করেছেন। তিনি বলেন, ওই ব্যক্তিকে নিয়োগ করার জন্য কয়েকজন ব্যক্তি তাঁর উপর চাপ তৈরি করেছিল। যদিও কারও নাম সরাসরি উল্লেখ করতে চাননি তিনি।
প্রধান শিক্ষক শেখ হোসেন আলি বলছেন, “এর আগে যখন এই খবর প্রকাশ্যে এসেছিল, তারপর থেকে তিনি আর স্কুলে আসেননি। পরে তাঁর নিয়োগও বাতিল হয়ে যায়। কাল দেখলাম ১৮৩ জনের মধ্যে ওঁর নামও আছে। আমি প্রথমে ওঁকে নিয়োগ করাতে চাইনি। কারণ, আমাদের কাছে কোনও চিঠি ছিল না। উনি হাতে হাতে চিঠি নিয়ে এসেছিলেন। পরে যখন মেল মারফত চিঠি পাঠানো হয় আমাদের কাছে, তখন বাধ্য হয়েই জয়েন করিয়েছিলাম। তারপর বছরখানেক চাকরি করেছে। বেতনও পেয়েছেন। তারপর যখন রিকমেন্ডেশন বাতিল হয়ে যায়, তার আগে থেকেই স্কুলে আসা বন্ধ করে দিয়েছিলেন। তবে জয়েন করার আগে, দুই চারজন আমাকে চাপ দিয়েছিল জয়েন করানোর জন্য। কিন্তু আমি বলেছিলাম, বৈধ কাগজ না থাকলে তো জয়েন করা যায় না।”
Comments :0