Unlimited Corruption Pradhan Mantri Awas Yojana

আবাস দুর্নীতি, বিডিও’কে হুশিয়ারি গ্রামবাসীদের

রাজ্য

Unlimited Corruption Pradhan Mantri Awas Yojana

ইটভাটায় কাজে না গিয়ে ৮-১০ কিলোমিটার পথ পেরিয়ে বিডিও অফিসে এসেছেন। আবার কেউ চাষের কাজ ফেলে অথবা জনমজুরী ছেড়ে ৫-৬ কিমি পথ সাইকেল চালিয়ে এসেছেন প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনায় নাম তুলতে। যাদের অধিকাংশের প্লাস্টিক ছাওয়া ঘরে বাস। আমফানে ক্ষতিপূরণ পান নি। ভাঙাচোরা ঘরেই নিত্য সংসার। অথচ ঘরের তালিকায় নাম ওঠে নি। নাম উঠেছে পঞ্চায়েত, পঞ্চায়েত সমিতি, জেলা পরিষদ সদস্যদের আত্মীয় স্বজনদের। বিডিও অফিস চত্বরে বাঁধানো গাছের নিচে রাখা আছে ড্রপ বক্স। যদিও সেটি তালাচাবিহীন অবস্থায় কার্যত উন্মুক্ত অবস্থায় পড়ে আছে। তাতে কেউ ঘরের জন্য আবেদন ফেলছেন আবার কেউ ফেলছেন না। যারা ফেলছেন না তাদের বক্তব্য ফেলে কী হবে? ওতো ঠোঙা হয়ে যাবে। এসব লোক দেখানো সরকারের চালাকি! এমনই আবহে মঙ্গলবার দুপুরে নয়াবস্তিয়া মিলনী গ্রাম পঞ্চায়েতের ১৬৭ নং বুথের প্রায় দেড় শতাধিক মানুষ ঘরের জন্য বিডিও অফিসে এসেছিলেন। বিডিও পুলিশ দিয়ে কার্যতঃ কুকুরের মতো তাড়িয়ে দিলেন তাদের।

আবাস যোজনা দুর্নিতি প্রসঙ্গে এদিন জলপাইগুড়িতে সিপিআই(এম) নেতা সুজন চর্কবর্তী বলেন, কেবল আবাস যোজনায় অন্তত ১০ হাজার কোটি টাকা লুট হয়েছে। এখন জনরোষে পালাতে হচ্ছে। কারচুপির এই তালিকা তৈরির পেছনে কোন বিডিও রয়েছে, কোন প্রধান রয়েছে তা জানাতে। 

 অভিযোগের সুরে পুলিশের এহেন আচরণের কথা বললেন রীতা ভট্টাচার্য, শিল্পা ব্যানার্জি, সুমিত্রা ভট্টাচার্যরা। শেষে কুলিয়া গ্রামের বাসিন্দা সারাভারত কৃষক সভার নেতা তসলিম আরিফ সহ চারজনকে বিডিও সুপর্ণা বিশ্বাসের সাথে দেখা করার অনুমতি দেওয়া হয়। সেই মতো তাঁরা দেখা করেন এবং কুলিয়া গ্রামের বাসিন্দা পঞ্চায়েত সমিতির সদস্যা রমা মণ্ডল ও ১৬৭নং বুথের পঞ্চায়েত সদস্য দিলীপ মণ্ডলের বিরুদ্ধে একগুচ্ছ অভিযোগ জানান। অভিযোগে বলা হয় প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনায় সীমাহীন দুর্নীতি অর্থাৎ পাকা ছাদ দেওয়া বাড়ির মালিকদের নাম তালিকায় রাখা হয়েছে। অথচ দীনমজুরী করে অধিকাংশ প্লাস্টিক ছাউনিতে বাস করেন তাদের কারোরই ঘরের তালিকায় নাম নেই। বিডিও সব শুনে বলেন, ছাদ দেওয়া বাড়ি অথচ প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনার তালিকায় নাম আছে তাদের নাম অবশ্যই বাদ যাবে। পঞ্চায়েত সমিতির সদস্যা রমা মণ্ডল ও পঞ্চায়েত সদস্য দিলীপ মণ্ডলের বিরুদ্ধে ওঠা একাধিক অভিযোগের তদন্ত করে দেখা হবে। ঘর পাওয়ার যোগ্য অথচ তালিকায় নাম নেই তাদের আবেদন খতিয়ে দেখে ঘরের ব্যবস্থা করা হবে। বিডিও'র সঙ্গে কথপোকথনের পর সংবাদমাধ্যমকে এদিন এমনই জানান তসলিম আরিফ।

 


বিধ্বংসী আমফান ঝড়ের তান্ডবে লন্ডভন্ড হয়ে যায় বাদুড়িয়ার বিস্তীর্ণ এলাকা। এদিন বাদুড়িয়া বিডিও অফিস চত্বরে তাদেরই অধিকাংশ এসেছেন ঘরের দাবিতে। আমফানে কুলিয়া গ্রামের লালবানু সরদারের ঘর ভেঙে পড়লে পরিবার নিয়ে ইটভাটায় আশ্রয় নেন। বর্তমানে সেখানে তার বাস। ঠিক তেমনি বটগাছের নিচে পেপারের ঘরে বাস করে গাছের ডাল ভেঙে চাপা পড়ে গুরুতর আহত হয়েছিলেন ষাটোর্ধ্ব ফেলো মণ্ডল। কুলিয়া বাজার ঝাড়ু দেওয়া তার পেশা। বর্তমানে কিছুটা সুস্থ হয়েও ঘরের তালিকায় নাম তুলতে পারেন নি। যেমন পারেন নি নারায়নপুর শাখারবাগান এলাকার বাসিন্দা বৃদ্ধা কুন্তী মণ্ডল, যদুরহাটির দারিগোবিন্দপুরের বাসিন্দা শ্রীদাম দাস। কুন্তী মণ্ডল বাস করেন পেপারের ছাউনি দেওয়া ঘরে। অসুস্থ শ্রীদাম দাসের ভাঙাচোরা ঘরে বাস। বিডিও অফিস চত্বরে দাঁড়িয়ে অঝোরে কেঁদে চলেছেন তাঁরা। জিজ্ঞাসা করতেই বললেন, ছয় ছয়বার ঘরের ছবি তুলে নিয়ে এসেছে। দুয়ারে সরকার ক্যাম্পে গেছি। তাও ঘর পেলাম না। বিডিও'র সাথে দেখা করতে এলাম। পুলিশ হটিয়ে দিল। একবার অনন্ত বিডিও গিয়ে দেখে আসুন। যদি যোগ্য না মনে হয় ঘর দেবেন না। বাবা সিপিআই(এম) করেন। সেই অপরাধে রামচন্দ্রপুর উদয় গ্রাম পঞ্চায়েতের আটলিয়া গ্রামের বাসিন্দা ফতেমা বিবির নাম আবস যোজনার তালিকায় নেই। তেমনি তালিকায় নাম নেই পূর্ব শিমূলিয়া গ্রামের বাসিন্দা দীনমজুর প্রমিলা সরকারের। তাদেরও আমফানে ঘর ভেঙে পড়ে। এদিন কাজ কামাই করে ৫ কিমি পথ সাইকেল চালিয়ে বিডিও অফিসে রাখা ড্রপ বক্সে আবেদন জমা দিতে এসেছেন। ফিরলেন একরাশ হতাশা নিয়ে। বললেন জানি না ঘর মিলবে কিনা। তবুও দিয়ে গেলাম। ফিরে যাওয়ার সময় কুলিয়া গ্রামের বাসিন্দা সন্ধ্যা মণ্ডল, লব মণ্ডল, কানাই মণ্ডল, শিবানী,কালিদাসী, বিশাখা,মালতি, শ্যামলী মণ্ডলরা একযোগে হুঁশিয়ারি দিয়ে জানিয়ে দিলেন ঘর আমাদের হক। ঘর না পেলে ফের আসবো বিডিও দোরে। সেদিন ঘর আদায় করে তবেই ফিরবো।


এদিকে বসিরহাট-১নং ব্লকের গোটরা গ্রাম পঞ্চায়েতের আশা ও আইসিডিএস'র কর্মীরা দ্বারস্থ হলেন বিডিও বিশাখ ভট্টাচার্যের। জমা দিলেন ১২ জন আশা ও আই সি ডি এস কর্মীর সই সংবলিত অভিযোগপত্র। তাতে উল্লেখ করা হয়,আশা কর্মী প্রমিলা গায়েনকে আবাস যোজনার সমীক্ষার কাজ করতে গিয়ে স্থানীয় পঞ্চায়েত সদস্য তুষার মণ্ডল নানানভাবে ভয়ভীতি দেখাচ্ছেন। আজ প্রমিলাকে হুমকি দেওয়া হচ্ছে। এরপর বাকিদের উপরেও নেমে আসতে পারে প্রধান, পঞ্চায়েত সদস্যদের এহেন আচরণ। সেই কারণে নিরাপত্তা ও এই কাজ থেকে তাদের অব্যাহতি দেওয়ার আবেদন জানানো হয় অভিযোগ পত্রে।

Comments :0

Login to leave a comment