Panchayat Election

জীবনের প্রথম পঞ্চায়েত ভোটটা দিতে চান বত্রিশের সুভাষ মালিক

রাজ্য

Panchayat Election

চিরন্তন পাড়ুই


এবার অন্তত জীবনের প্রথম পঞ্চায়েত ভোটটা দিতে চান। এলাকায় কাজ না থাকলেও মুম্বাইতে কাজে‌ না ফিরে উদয়নারায়ণপুরের গ্রামেই থেকে গেলেন বত্রিশ বছরের যুবক সুভাষ মালিক! তাঁর অভিযোগ গত দুটি পঞ্চায়েত নির্বাচনে ভোটারদের ভোট দিতে দেয়নি তৃণমূল কংগ্রেস। এবার কুড়চি শিবপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের গজা গ্রামের ১৩ নং গ্রাম সংসদ আসনে সিপিআই(এম)’র প্রার্থী তাঁর দাদা দীনেশ মালিক। সুভাষ মালিকের দাবি এবারের ভোট, ‘‘অত সোজা হবে না তৃণমূলের। বাধা এলেই বাধবে লড়াই। গণতন্ত্র ফেরাবোই আমরাই’’।

প্রার্থী দীনেশ মালিক বলেছেন, ‘‘করোনার সময় বাইরের রাজ্যে কাজে থাকা যুবকদের পরিবার দেখেছে, লাল ঝাণ্ডার পার্টিই গরিবের পাশে‌ ছিল। পাশে থাকেনি, শুধুই ঘোষণা করেছে তৃণমূল সরকার। পঞ্চায়েত কাজ করলে, এলাকার ছেলেদের ফের বাইরে কাজে যেতে হত না’’।
তৃণমূল কংগ্রেস ও বিজেপি’র আখের গোছানোর রাজনীতির বিপরীতে করোনার সময় মানুষের একমাত্র হেল্প লাইন হয়ে ওঠা রেড ভলান্টিয়ার্সও এবারের পঞ্চায়েত ভোটে উদয়নারায়ণপুরের বিভিন্ন আসনে সিপিআই(এম) প্রার্থী তালিকাতে। 

হাওড়া জেলা পরিষদের ৩৭ নং আসনে সিপিআই(এম) প্রার্থী সৌম্যশান্তি মুখার্জি পেশায় মেডিক্যাল রিপ্রেজেন্টেটিভ ও যুব নেতৃত্ব। আরডিএ গ্রাম পঞ্চায়েতের বামফ্রণ্ট মনোনিত সিপিআই(এম) প্রার্থী তালিকাতে থাকা বিপ্লব বেরা ডিওয়াইএফআই’য়ের প্রাক্তন হাওড়া জেলা সম্পাদক ও পার্টির সর্বক্ষণের কর্মী আরডিএ গ্রাম পঞ্চায়েতের ২নং গ্রাম সংসদ আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
এরাজ্যে তৃণমূল কংগ্রেসের শাসনকালে গণতন্ত্রকে কিভাবে কফিন বন্দী করে ভোট লুট, গণতন্ত্র লুট হয়েছিল তা কান পাতলেই শোনা যায় উদয়নারায়ণপুর সহ হাওড়া গ্রামাঞ্চলের বিভিন্ন ব্লকেই। গণতন্ত্র ফেরানোর লড়াইতে জোট বেঁধেছে হাওড়ার গ্রামাঞ্চল।

তেভাগা আন্দোলনের শহীদদের গ্রাম দক্ষিণ হাঁটাল গ্রামের খেতমজুর রমনী সতী সাঁতরা জানালেন, একশো দিনের কাজ করেও পেমেন্ট দেয়নি গ্রাম পঞ্চায়েত। ৩২দিনের রোজ বাকি। দুই ছেলে স্বরূপ, সৌরভ প্রেসের কাজ করে দিনে একশত আশি টাকা রোজ পায়। কাজ থাকে না রোজ তখন রাজাপুর ক্যানেলের মাছ ধরে রোজগার করে। কিন্তু, কাঁচা লঙ্কার দাম এতটাই চড়া আলুভাতে ভাতের সঙ্গে লঙ্কা মেখে খাবার জো নেই। সতী সাঁতরা এবার জগৎবল্লভপুরের পঞ্চায়েত সমিতি আসনে সিপিআই(এম) প্রার্থী হয়েছেন। 

রাজাপুর ক্যানেলের দুই পার জগৎবল্লভপুরের দক্ষিণ হাঁটাল ও বোহারিয়া। দুই গ্রাম জুড়েছে শহীদ সেতু। শহীদ সেতুর দুই পারের গ্রাম বাসীরা জানালেন, রাজাপুর ক্যানেল কৃষকের সেচের জলের উৎস। সেই জলে কারখানার বর্জ্য মিশছে। পঞ্চায়েত-প্রশাসন ব্যবস্থা নিচ্ছে না। মাছ মারা যাচ্ছে। ধানের গোড়া ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। মৎস্যজীবী ও কৃষকের সর্বনাশ হয়েছে তৃণমূল সরকার আমলে। অরুণ মাঝি, স্বপ্ন বাগ, সনোকা মাঝিরা জানালেন, একশো দিনের কাজ নেই। খেতমজুর মহিলারাও গ্রাম ছেড়ে বাইরে কাজে যায়। রাজাপুর ক্যানেলের কালো বিষ জলে চাষ উঠে গিয়ে সবুজ মাঠ শুকনো। “তৃণমূল কংগ্রেস মানুষের রোজগার কেড়েছে। মানুষের হাসি কেড়েছে। ওদের ঘুম কাড়তে হবে।“, বলেছেন হাঁটাল অনন্তবাটি গ্রাম পঞ্চায়েতের বোহারিয়া গ্রামের ৭ নং আসনের সিপিআই(এম) প্রার্থী মঙ্গলা মাজি। 

হাওড়া গ্রামাঞ্চলের রাস্তায় রাস্তায় তৃণমূল সুপ্রিমো ও ভাইপোর হাসির ঝা চকচকে হোর্ডিং। কিন্তু গ্রামের বুথে বুথে ঘুরলেই শোনা যায় তৃণমূল কংগ্রেসের রাজত্বে কেবল গরিবের কান্না ও বঞ্চনা।
খেতমজুর গ্রাম দেখেছে, গ্রামের বিজেপি পঞ্চায়েত সদস্য তৃণমূল কংগ্রেসের গ্রাম পঞ্চায়েত রেগার মজুরি বাকি রাখলেও মজুরি ফেরানোর জন্য একটিও কথা বলেননি। গ্রামের মজদুরদের বকেয়া মজদুরির দাবিতে লাল ঝাণ্ডাই লড়াই করে। কাস্তে-হাতুরি তারায় ভোট দেওয়াটা যে কতটা জরুরী একথা বলেছেন গ্রামবাসীরা।

 

Comments :0

Login to leave a comment