বিশ্ব জুড়ে আয় বৈষম্য বিপুল হারে বেড়ে চলেছে। জি-২০ বৈঠকে আয় বৈষম্য কমানোর নানা উদ্যোগের ঘোষণা হলেও বিশ্ব জুড়ে আয় বৈষম্যে কোন ভাবে রাশ টানা যায়নি। চলতি বছরের নভেম্বরে ব্রাজিলে হতে চলেছে জি-২০ বৈঠক।তার আগে ক্রমশ বেড়ে চলা আয় বৈষম্যের প্রকট চিত্র ফের সামনে নিয়ে এসেছে অক্সফাম। সম্প্রতি প্রকাশিত রিপোর্টে বলা হয়েছে, গত এক দশকে বিশ্বে ১ শতাংশ ধনীর সম্পদ বেড়েছে ৪২ ট্রিলিয়ন (১ লক্ষ কোটি) ডলার। এই সম্পদ বিশ্বের ৫০ শতাংশ মানুষের অর্জিত সম্পদের ৩৪ শতাংশ বেশি। মূল্যবৃদ্ধির হার হিসাবে গড়ে ১ শতাংশ ধনীর মাথাপিছু প্রকৃত সম্পদ বেড়েছে ৪ লক্ষ ডলার।সেখানে ৫০ শতাংশ নিম্ন আয়ের মানুষের সম্পদ বেড়েছে মাত্র ৩৩৫ ডলার।
বিশ্ব জোড়া বৈষম্যের সঙ্গে ভারতে আয় বৈষম্যে আলাদা কোন ছবি নেই। উলটে তা আরও প্রকট বলা যায়। অক্সফাম জানাচ্ছে,ভারতে ২০১২ থেকে ২০২১ এই দশ বছরে দেশে যে সম্পদ তৈরি হয়েছে তার ৪০ শতাংশ জমা হয়েছে দেশের ১শতাংশ ধনীদের কাছেই। সেখানে সেই সম্পদের মাত্র ৩শতাংশ জমা হয়েছে ভারতের বাকি ৫০ শতাংশ নিম্ন আয়ের মানুষের কাছে। বর্তমানে ভারতের ধনী ৫ শতাংশ মানুষের কাছে জমা রয়েছে দেশের ৬০ শতাংশ সম্পদ। ৫০ শতাংশ মানুষের কাছে রয়েছে তার মাত্র ৩ শতাংশ সম্পদ। মোদী জমানায় বিপুল ধনীর সংখ্যাও বেড়ে চলেছে তা উল্লেখ করা হয়েছে রিপোর্টে। তাতে বলা হয়েছে ২০২০ সালে দেশে ধনকুবের সংখ্যা ছিল ১০২ জন ২০২২ সালে তা বেড়ে হয়েছে ১৬৬ জন। উল্লেখ করা যেতে পারে, ভারত সহ সারা বিশ্বেই ধনকুবেররা দেশের সরকারকে যা কর দেয় তা তাদের সম্পদের মাত্র ০.৫শতাংশ।অক্সফাম জানাচ্ছে, জি-২০ বৈঠকে আশা করা যায় বিভিন্ন দেশের অর্থমন্ত্রীরা ধনীদের উপর কর বসিয়ে বৈষম্য কমানোর প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা করবেন। গত বৈঠকে এই প্রস্তাব এলেও তা ভারত সহ বিভিন্ন দেশে কার্যকর হয়নি। ফলে ধনী গরিবে আরো বেশি হারে আয় বৈষম্য বেড়ে চলেছে। অক্সফামের বৈষম্য সংক্রান্ত নীতি প্রধান ম্যাক্স লসন জানাচ্ছেন, বিশ্বের ১শতাংশ ধনী আজও বিপুল সম্পদে তাদের পকেট ভরছে। অন্যদিকে কম আয়ের ৫০ শতাংশ মানুষ আরো নিঃস্ব থেকে নিঃস্বতর হচ্ছে।অক্সপাম রিপোর্ট জানাচ্ছে জি-২০ দেশের ১শতাংশ ধনীর আয় চার দশকে বেড়েছে ৪৫ শতাংশ হারে একই সঙ্গে সেই সব ধনীর কর কমেছে তাদের মোট প্রদেয় করের এক তৃতীয়াংশ হারে।
এদিকে বিশ্বের ৫জন ধনকুবেরের ৪ জন থাকে জি-২০ দেশে। অক্সফাম’র মতে, ধনী দরিদ্রে আয় বৈষম্য কমাতে অতি ধনীদের সম্পদ কর বসানো উচিত। কম করে ৮ শতাংশ হারে সম্পদ কর বসানোর সুপারিশ করা হয়েছে। এদিকে ভারতে মোদী সরকার ক্ষমতায় এসে ২০১৫ সালে সম্পদ কর বাতিল করে দেয়। তার বদলে বছরে ১কোটি টাকার উপর আয় যেসব ধনীর তাদের ২শতাংশ হারে সম্পদে লেভি চাপানো হয়। ২০১৫ সালের আগে হিন্দু অবিভক্ত পরিবার এবং কোম্পানির ক্ষেত্রে ১ শতাংশ হারে সম্পদ কর চালু ছিল।২০১৩-১৪ সালে শেষ বার মোট সম্পদ কর আদায় হয় ১ হাজার ৮ কোটি টাকা। এর পর থেকে সম্পদ বিপুল হারে ধনীর ১ শতাংশের কাছে কেন্দ্রীভূত হলেও তাতে সম্পদ কর আর বসানো হয়নি।
Comments :0