লোকসভার বাদল অধিবেশনের প্রথম থেকেই চরম উগ্র হিন্দুত্ববাদী অ্যাজেন্ডা নিয়ে ময়দানে নেমেছে বিজেপি। বৃহস্পতিবার সংসদে দাঁড়িয়ে ঝাড়খন্ডের বিজেপি সাংসদ নিশিকান্ত দুবে বলেছেন, ‘‘ ঝাড়খন্ড এবং পশ্চিমবঙ্গের কয়েকটি জেলাকে নিয়ে নতুন কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল তৈরি করার প্রয়োজন রয়েছে। এই জেলাগুলিকে ব্যবহার করে বাংলাদেশ থেকে অবৈধ অনুপ্রবেশকারীরা দেশে ঢুকছে। এই জেলাগুলিতে অসমের মডেলে এনআরসি যত দ্রুত সম্ভব কার্যকর করা উচিত।’’
এই প্রসঙ্গে সিপিআই(এম) রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম বলেছেন, ‘‘বিজেপি টুকরো টুকরো করে রাজ্যকে অস্থির করে তুলতে চাইছে। আরএসএসের দর্শনই হল দেশের ভাষাভিত্তিক রাজ্যের অস্তিত্বকে অস্বীকার করে ৫০টি ছোট ছোট রাজ্য তৈরি করা। এরফলে যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোকে দুর্বল করা সম্ভব। নিশিকান্ত দুবে সেই কথাই বলেছেন।’’
ক্ষুদ্র রাজ্যের তত্ত্বকে প্রশ্ন করে সেলিম বলেছেন, ‘‘ছোট ছোট রাজ্য তৈরি করে কি দাঙ্গা হাঙ্গামা ঠেকানো গিয়েছে? তারজন্য প্রয়োজন প্রশাসনিক দক্ষতা।’’
প্রসঙ্গত, বিজেপির এই রাজনীতির ক্ষেত্রে সহায়কের ভূমিকা নিয়ে থাকে তৃণমূল। উত্তরবঙ্গের বিচ্ছিন্নতাবাদী নেতা তথা রাজ্যসভার বিজেপি সাংসদ অনন্ত রায় ওরফে অনন্ত মহারাজকে দলে টানার জন্য উঠেপড়ে লেগেছে তৃণমূল।
নিশিকান্ত দুবের দাবি, ‘‘ব্যবস্থা না নেওয়া হলে এই জেলাগুলি থেকে হিন্দু জনসংখ্যা মুছে যেতে পারে।’’
এদিন লোকসভার জিরো আওয়ারে বলতে উঠে দুবে দাবি করেছেন, ‘‘মালদা মুর্শিদাবাদ থেকে আসা মানুষের চাপে ঝাড়খন্ডের সাঁওতাল পরগণায় আদিবাসী জনসংখ্যার হার কমে গিয়েছে। এই বদল ঠেকাতে মালদা, মুর্শিদাবাদ, আরারিয়া, কিষাণগঞ্জ, কাটিহার এবং সাঁওতাল পরগণাকে আলাদা কেন্দ্র শাসিত অঞ্চল ঘোষণা করা উচিত।’’
যদিও নিশিকান্ত দুবে একা নন। কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী ও পশ্চিমবঙ্গের বিজেপি রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার বৃহস্পতিবার বলেছেন, ‘‘উত্তরবঙ্গের জেলাগুলিকে উত্তর পূর্ব ভারতের সঙ্গে জুড়ে দেওয়ার প্রস্তাব আমি প্রধানমন্ত্রীকে দিয়েছি। এই প্রস্তাব বাস্তবায়িত হলে উত্তরবঙ্গে উন্নয়ন করা সম্ভব হবে।’’
মজুমদারের বক্তব্য, ‘‘উত্তরবঙ্গের এই অঞ্চলগুলিকে উত্তর পূর্ব ভারতের সঙ্গে যুক্ত করে দিলে উত্তরবঙ্গের উন্নয়নে বাড়তি নজর দেওয়া যাবে। একইসঙ্গে উত্তরপূর্ব ভারতের জন্য বরাদ্দ তহবিল থেকেও উত্তরবঙ্গের উন্নয়ন করা সম্ভব হবে।’’
ওয়াকিবহাল মহলের বক্তব্য, বিজেপি আদর্শগত ভাবে ছোট রাজ্যের পক্ষে। ছোট রাজ্য হলে তার রাজনৈতিক শক্তিও সীমিত হয়। স্বাভাবিক নিয়মে শক্তিশালী হয় কেন্দ্রীয় সরকার। বিজেপির দৃষ্টিভঙ্গী যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোর পরিপন্থী হওয়ায় ক্ষমতায় এলেই তারা রাজ্য ভাঙার উদ্যোগ নেয়। একইসঙ্গে পশ্চিমবঙ্গকে ভেঙে একাধিক রাজ্য তৈরি করার ছক বিজেপির বহুদিনের। বিজেপির সাংগঠনিক বিন্যাসেও উত্তরবঙ্গ এবং দক্ষিণবঙ্গের পৃথক অস্তিত্ব রয়েছে। বিজেপি মধ্যযুগের ইতিহাস অনুযায়ী পশ্চিমবঙ্গকে ভেঙে তিনটি রাজ্য- পশ্চিমাঞ্চল, উত্তরবঙ্গ ও গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গ তৈরি করতে চায়। সুকান্ত মজুমদারের প্রস্তাবে সেই বিষয়টি উঠে এসেছে।
এই অংশের বক্তব্য, পশ্চিমবঙ্গে বিজেপি লোকসভা নির্বাচনে আশানুরূপ ফল করতো পারেনি। কোচবিহার লোকসভা হাতছাড়া হয়েছে বিজেপির। এই অবস্থায় উত্তরবঙ্গকে আলাদা রাজ্য বানানোর টোপ দিয়ে ২০২৬’র বিধানসভা নির্বাচনে উত্তরবঙ্গে আসন জয়ের ছক কষছে বিজেপি। এবং মালদা, মুর্শিদাবাদ সহ সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমান মানুষ বাস করেন এমন জেলাগুলিকে আলাদা করে কেন্দ্র শাসিত অঞ্চল তৈরি করতে পারলে, সেখানে প্রশাসনিক মদতে ধর্মীয় বিভাজন তীব্র করা সম্ভব হবে। নিশিকান্ত দুবের মন্তব্যে সেই ছক প্রকাশ পেয়েছে।
Comments :0