Central Vista

ধস্ত সংসদীয় গণতন্ত্র, তবে ‘সেন্ট্রাল ভিস্টা’ হতে পারে এ মাসেই

জাতীয় বিশেষ বিভাগ

প্রতীম দে

চলতি মাসেই উদ্বোধন হতে পারে বহু আলোচিত সেন্ট্রাল ভিস্টা’-র। ২৮ মে, নরেন্দ্র মোদী নেতৃত্বাধীন সরকারের নবম বর্ষপূর্তি পালন হতে পারে নতুন সংসদ ভবন উদ্বোধন করে। রাজনৈতিক মহলে এমনটাই গুজ্ঞন। ২০১৪ সালে ২৬ মে প্রধানমন্ত্রী হিসাবে শপথ নিয়েছিলেন নরেন্দ্র মোদী। নবম বর্ষ পালনে একগুচ্ছ কর্মসূচিও নিয়েছে বিজেপি, বিশেষত কর্নাটকে পরাজয়ের পর জাঁকজমক করে মোদীর মুখ সামনে আনার প্রয়াস রয়েছে।

বিজেপির তৎপরতায় ফের সামনে এসেছে গণতন্ত্রের কাঠামো ভাঙার অভিযোগও। সংসদভবনের সিড়িতে প্রণাম ঠুকেছিলেন মোদী। পরের নয় বছর সংসদকে, বিরোধী কন্ঠস্বরকে স্তব্ধ করে দেওয়ার অভিযোগে বারবার সরব হয়েছেন বিরোধীরা। তুলে ধরেছেন কৃষি বিল, শ্রম বিল থেকে শেষ অধিবেশনে আদানি কেলেঙ্কারিতে সরকারের জবাবদিহি এড়িয়ে যাওয়ার বৃত্তান্তও।

 

একাংশ বলছেন, আরএসএস ইতিহাসের ভিত্তি ছাড়াই দাবি করতে পারে যে তাজমহলের তলায় মন্দির আছে বা জ্ঞানবাপী মন্দিরের অজুখানার পাথরটা শিব লিঙ্গ। আরএসএস নিয়ন্ত্রিত সরকারই সংসদে আলোচনার সুযোগ, বনিরোধীদের বিপক্ষে মত দেওয়ার সুযোগ কেড়ে নিচ্ছে। সেই বিচারে ভারতীয় গণতন্ত্রের স্মৃতির সৌধের নাম হতে পারে সেন্ট্রাল ভিস্টা

উল্লেখ্য এই বছরে সংসদের অভ্যন্তরে বিরোধীদের কন্ঠ রোধ করা হয়েছে। হইচই করে অধিবেশন বন্ধ করেছে বিজেপি সাংসদরা। আদানি বেনিয়মে কংগ্রেস সাংসদ রাহুল গান্ধীর বক্তব্য পুরো বাদ দেওয়া হয়েছে লোকসভার নথি থেকে। পরে আদালতের নির্দেশকে হাতিয়ার করে সাংসদ পদই খারিজ হয়েছে তাঁর। সেই সঙ্গে চলছে ধর্মের নামে মানুষকে ভাগ করার রাজনীতি। জাতীয় শিক্ষা নীতির মতো গুরুত্বপূর্ণ  বিষয় সংসদে আলোচনা ছাড়াই কার্যকর হচ্ছে দেশে।

 

সেন্ট্রাল ভিস্টামোদী সরকারের স্বপ্নের প্রকল্প। ৬৪ হাজার ৫০০ স্কোয়ার ফুট এলাকা নিয়ে তৈরি হচ্ছে নতুন সংসদ ভবন। সরকারের কোষাগার থেকে খরচ হচ্ছে প্রায় ৯০০ কোটি টাকা। ঠিক যখন টাকার দাম কমছে। ভারতের অর্থনীতি মন্দার মুখ দেখছে। লকডাউনের পর দেশের ৯০ শতাংশের বেশি মানুষের আয় কমেছে তখন। প্রতিদিন যখন জিনিসের দাম বেড়ে চলেছে। সরকার তা নিয়ন্ত্রণ করছে না। কিন্তু গোটা বিশ্বের সামনে নিজেকে মহান প্রমান করতে ৯০০ কোটি টাকা খরচ করছে সরকার। দেশের মানুষের নুন্যতম অর্থীক নিরাপত্তা যখন নেই তখন সরকার ৯০০ কোটি টাকা ব্যয় করছে। 

নরেন্দ্র মোদীর সরকারের এই সিদ্ধান্তের সঙ্গে ইতিহাসের এক শাসকের মিল দেখছেন অনেকে। ফরাসি বিপ্লবের আগে যখন রাজতন্ত্র ফ্রান্স চালাচ্ছে, তখন রাজা ষোড়শ লুইয়ের রাজপ্রাসাদে ৬০০ জন ভৃত্য ছিল। রাজতন্ত্র টিকিয়ে রাখতে খরচ হতে বিপুল টাকা যা মানুষের কর থেকে আদায় করা হতো। রাজার ইচ্ছা পুরন করতে হবে এটাই ছিল তৎকালিন ফ্রান্সের আসল কথা। দেশের মানুষ কেমন আছে সেই দিকে রাজা নজর দিতেন না।

 

এই ৯০০ কোটি টাকায় কী হতে পারত বা কী হবে? তা নিয়েও রয়েছে চর্চা।

বিরোধীরা, বিশেষ করে, বামপন্থীরা বারবার বলছেন লকডাউনের সময় বা লকডাউন পরবর্তী সময় মানুষের হাতে সরাসরি টাকা দিতে পারত সরকার। সেই টাকা বাজারে ঘুরলে লাভ হতো সরকারেরই। অর্থনীতির সহজ হিসাব বলে মানুষের হাতে টাকা থাকলেই তবে সে জিনিস কিনবে। আর বাজারে টাকা ঘুরলে মুদ্রাস্ফিতীর সম্ভাবনা কমে।

ইউএনডিপি এবং ডেনিভা বিশ্ববিদ্যালয়ের যৌথ গবেষণায় উঠে এসেছে যে ২০৩০ সালের মধ্যে ভারতের ২০ কোটি ৭০ লক্ষ মানুষ চরম আর্থিক সংকটের মুখোমুখি হবেন। গোটা বিশ্বে সেই সংখ্যা দাঁড়াবে ১০০ কোটিতে। 

এই পরিস্থিতি স্বাধীনতার পর এই প্রথম দেশে বেকারত্বের হার সব থেকে বেশি। চলতি বছর মার্চ মাসের পরিসংখ্যান অনুযায়ী শহরে বেকারত্বের হার ৮.৪ শতাংশ। গ্রামে ৭.৫ শতাংশ। যেই সরকার ৯ বছর আগে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল যে তারা বছর দুকোটি বেকারকে চাকরি দেবে সেই সরকারের শাসন কালেই বেড়েছে বেকার সংখ্যা।

পরিবেশ বিধি ভাঙার অভিযোগও জড়িয়ে গোটা প্রকল্পে। সুপ্রিম কোর্টে একাধিক পিটিশন বলা হয় যে এই কাজের জন্য শয়ে শয়ে গাছ কেটে ফাঁকা করা হয়েছে। সুপ্রিম কোর্ট এই সংসদ ভবন নির্মানের কাজ বন্ধ করেনি। ২০২০ সালের ৬ ডিসেম্বর তৎকালিন সলিসিটার জেনারেল তুষার মেহতা আদালতে জানিয়ে ছিলেন যে, সরকার বৃক্ষ রোপনের কাজ শুরু করবে। কিন্তু হলো কতদূর, কোনও তথ্য দেয়নি সরকার।

সরকারের বক্তব্য কী

বলা হচ্ছে, লোকসভায় বর্তমান সাংসদ সংখ্যা ৫৪৩। কিন্তু সেই সংখ্যা বাড়বে। জনসংখ্যা বৃদ্ধির ভিত্তিতে ২০২৬ সালে লোকসভার সদস্য সংখ্যা বেড়ে হবে ৮৪৮ এবং রাজ্যসভার ৩৮৪। আর এই সাংসদ সংখ্যা বাড়ার জন্য নাকি তৈরি হচ্ছে নতুন সংসদ ভবন। বর্তমানে ভারত জনসংখ্যার দিক থেকে চীনকে পিছনে ফেলে প্রথম স্থান দখল করেছে। জন সংখ্যা বাড়ছে। বেকারত্ব বাড়ছে। পরিবেশের ওপর চাপ বাড়ছে। বিশ্বের প্রতিটা দেশ যখন জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণের জন্য একাধিক পদক্ষেপ নিচ্ছে তখন ভারত কেন নিচ্ছে না। চীন অর্থনীতি ঠিক রাখতে বাধ্য হয়েছে জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণের পথে হাঁটার জন্য। উল্লেখ্য সাংসদ সংখ্যা যত বাড়বে তত চাপ বাড়বে কোষাগারের ওপর।

Comments :0

Login to leave a comment