Mamata Banarjee

বিজেপির সাংসদের সঙ্গে গোপন বৈঠক মুখ্যমন্ত্রীর

রাজ্য

কোচবিহারে বিজেপির রাজ্যসভার সাংসদ নগেন্দ্র রায় ওরফে অনন্ত মহারাজের বাড়িতে গিয়ে দীর্ঘ প্রায় ৩৫ মিনিট গোপন বৈঠক করলেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মঙ্গলবার বেলা ১২টা ৪৫মিনিট নাগাদ কোচবিহার ২নং ব্লকের নীলকুঠি এলাকায় এই স্বঘোষিত অনন্ত মহারাজের প্রাসাদোপম বাড়িতে প্রবেশ করেন তৃণমূল নেত্রী। তার সাথে গোপন বৈঠকের পর বেলা ১টা বেজে ২০মিনিট নাগাদ তার বাড়ি থেকে বের হয়ে যান মুখ্যমন্ত্রী। মুখ্যমন্ত্রীর সাথে ছিলেন রাজ্যের মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস।
 সোমবার রাতে কোচবিহারে আসেন মুখ্যমন্ত্রী যাপন করেন কোচবিহার সার্কিট হাউসে। মঙ্গলবার সাড়ে এগারোটা নাগাদ তিনি পুজো দেন কোচবিহার মদনমোহন মন্দিরে। এরপরই তিনি সোজা চলে যান অনন্ত মহারাজের বাড়ি।
 এই গোপন বৈঠকের পর সাংবাদিকদের মুখ্যমন্ত্রী কিছু না বললেও বিজেপির রাজ্যসভার সাংসদ অনন্ত মহারাজ এদিন সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে জানান, শুধুমাত্র সৌজন্য সাক্ষাৎ করতেই তার বাড়িতে এসেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। রাজনৈতিক কোনো আলোচনা হয়নি তার সাথে। তবে বিজেপির রাজ্য নেতাদের বিরুদ্ধে এদিন কিছুটা ক্ষোভ উগড়ে দিতে দেখা যায় এই রাজ্যসভার সাংসদকে। 
 ২০২২সালের ১৬ফেব্রুয়ারি বীর চিলা রায়ের ৫১২তম জন্মজয়ন্তী উপলক্ষ্যে কোচবিহার ২নং ব্লকের সিদ্ধেশ্বরী এলাকায় দি গ্রেটার কুচবিহার পিপলস অ্যাসোসিয়েশনের অনুষ্ঠান মঞ্চে দেখা যায় মুখ্যমন্ত্রীকে।
 এরপর ২০২২সালের ১৪এপ্রিল রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে কোচবিহার জেলাশাসকের উপস্থিতিতে সরকারি উদ্যোগে পালন করা হয়েছিল সংবিধান বিরোধী, বিচ্ছিন্নতাবাদের এই পৃষ্ঠপোষকের জন্মদিন। 
   ২০২২সালের অক্টোবর মাসের ১৯তারিখ শিলিগুড়িতে মুখ্যমন্ত্রীর বিজয়া সম্মিলনীর মঞ্চে শেষ দেখা গিয়েছিল এই অনন্ত মহারাজকে। মঞ্চ থেকে নেমেই কোচবিহারকে পশ্চিমবঙ্গের অংশ হিসেবে মানতে তিনি প্রকাশ্যে অস্বীকার করেন। এই বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলনের মুখ তথা গ্রেটার কোচবিহার পিপলস অ্যাসোসিয়েশনের প্রধান স্বঘোষিত অনন্ত মহারাজকে। এরপরও তাকে ভ্রাতৃ দ্বিতীয়ার শুভেচ্ছা সহ উপহার পাঠান রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী। 
  এরপর তোর্ষা এবং তিস্তা নদী দিয়ে বয়ে গেছে অনেক জল। বিজেপির রাজ্যসভার সাংসদ হয়ে গেছেন এই অনন্ত মহারাজ। কিন্তু তার সাথে সখ্যতা এতটুকু কমেনি তৃণমূল নেত্রীর।
    বিজেপি এবং তৃণমূল উভয় রাজনৈতিক দলই নিজেদের রাজনৈতিক স্বার্থ চরিতার্থ করতে প্রত্যক্ষ কিংবা পরোক্ষভাবে যে বিচ্ছিন্নতাবাদকে মদত জুগিয়ে আসছে, তার নিদর্শন মিলেছে বারবার। তা সে গ্রেটার আন্দোলনই হোক বা পাহাড়ের বিভেদ সৃষ্টি করার আন্দোলন, সবেতেই এই দুই রাজনৈতিক দলের সম্পৃক্ত থাকার উদাহরণ দেখেছেন রাজ্যের মানুষ। পৃথক রাজ্যের দাবিদাররাও যে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর অত্যন্ত স্নেহের, তা আবারও প্রমাণিত হয়ে গেল এদিন। 
২০২১ বিধানসভা নির্বাচনে কোচবিহার সহ গোটা উত্তরবঙ্গে তৃণমূলের ভরাডুবি, রাজবংশী সম্প্রদায়ের অধিকাংশ ভোট তৃণমূলের কাছ থেকে সরে যাওয়া, একটা বড় চিন্তার বিষয় হয়ে দাঁড়ায় রাজ্যের শাসকদলের। কিন্তু ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনের আগে বিজেপির রাজ্য ও জেলার নেতাদের বিরুদ্ধে অনন্ত মহারাজের প্রকাশ্যে ক্ষোভ উগরে দেওয়া এবং এর পরবর্তীতে উত্তরবঙ্গের শুধুমাত্র কোচবিহার লোকসভা আসনটিতে তৃণমূল প্রার্থীর জয় এবং বিজেপি প্রার্থী কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী নিশীথ প্রামাণিকের হারের ক্ষেত্রে রাজবংশী ভোট যে একটা বড় ফ্যাক্টর হয়ে দাঁড়িয়েছে, তা কার্যত বুঝতে পেরেছেন মুখ্যমন্ত্রী এবং এর সম্পূর্ণ কৃতিত্ব অনন্ত মহারাজকে দিয়ে, তাকে ধন্যবাদ জানাতেই তার সাথে তৃণমূল নেত্রীর গোপন বৈঠক বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের একাংশ।
   সরকারি জমি দখল, অবৈধ উপায়ে টাকা তোলার মামলা সহ বেশকিছু মামলায় অভিযুক্ত এই অনন্ত রায়। অনন্ত রায় তথা তাঁর সংগঠনের মূল দাবি, ১৯৪৯ সালে কোচবিহারের রাজা ভারতভূক্তির যে চুক্তি করেছিলেন সেটা মানা হয়নি। ভারত সরকার কোচবিহারকে জেলা করে রেখেছে। কিন্তু এটা আলাদা রাজ্য বা কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল করতে হবে। তাঁর এলাকা শুধু কোচবিহার জেলা নয়, নরনারায়ণ রাজা থাকাকালীন রাজ্যের যে আয়তন ছিল, সেটাই ফেরাতে চায় জিসিপিএ। সংগঠনের দাবি অনুযায়ী, উত্তরবঙ্গের করতোয়া নদী থেকে অসমের বেশ কিছু অংশ নিয়ে গ্রেটার কোচবিহারের দাবিদার তারা।জিসিপিএ-র অনন্ত গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে অভিযোগও অনেক।

Comments :0

Login to leave a comment