Tea Garden Worker Death

মিলল না এ্যাম্বুল্যান্স, বিনা চিকিৎসায় মৃত্যু চা শ্রমিকের

রাজ্য

মৃত শ্রমিকের বাড়ির সামনে উদ্বিগ্ন শ্রমিকরা।

সঞ্জিত দে - বীরপাড়া 

নাম সুশীল ওরাও ঠিকানা চা সুন্দরী আবাসন রুগ্ন বাগান ঢেকলা পাড়া। জেলা আলিপুরদুয়ার। মৃত্যুর কারণ চিকিৎসার  অভাব। সরকারি পরিষেবা উধাও। অ্যাম্বুল্যান্স বিকল।  শ্রমিক আবাসনেরগাল ভরা নাম চা সুন্দরী। ঝকঝকে বাড়ি কিন্তু বাড়ির বাসিন্দাদের আয় নেই পেটে খাদ্য নেই চিকিৎসা নেই। নির্মম পরিহাসের শিকার ডুয়ার্সের রুগ্ন চা বাগান ঢেকলা পাড়ার বাসিন্দারা। 
এ্যাম্বুল্যান্স না পেয়ে মৃত্যু হল এক শ্রমিকের। হাসপাতালে ফোন করেও জুটলনা একটি এ্যাম্বুল্যান্স। ফলে চিকিৎসা না পেয়ে বাড়িতেই মৃত্যু হল শ্রমিকের। মর্মান্তিক ঘটনাটি ঘটেছে বৃহস্পতিবার মাদারিহাট বীরপাড়া ব্লকের ঢেকলাপাড়া চা বাগানে। মৃত শ্রমিকের নাম সুশীল উড়াও। সে ঢেকলাপাড়া বাগানে চা সুন্দরী ঘরে বাস করতেন। 
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, গত বৃহস্পতিবার অসুস্থ হয়ে পরেন সুশীল ওরাও। দু মাস ধরে মজুরি পাচ্ছেন না। অন্যান্য শ্রমিকদের আর্থিক অবস্থা একই রকম। ফলে এ্যাম্বুল্যান্স ভাড়া করে হাসপাতালে যাবার মতো আর্থিক সঙ্গতি তাদের ছিল না। বাধ্য হয়ে বীরপাড়া রাজ্য সাধারণ হাসপাতালে অ্যাম্বুল্যান্সের জন্য ফোন করলে জানানো সেটি বিকল অভিযোগ পরিবারের। এ্যাম্বুল্যান্স না পেয়ে শেষে বাড়িতেই মৃত্যু হয় শ্রমিকের।
মৃতের দাদা রাজু ওড়াও বলেন, ‘‘ভাই অসুস্থ হয়ে পড়লে বীরপাড়া হাসপাতালে ফোন করি। কিন্তু হাসপাতাল থেকে জানায় অ্যাম্বুল্যান্স বিকল। তাই এ্যাম্বুল্যান্স পাঠাতে পারবে না। তিনি বলেন দুই মাস ধরে বাগানের কোন বেতন নেই। ফলে প্রচন্ড আর্থিক সঙ্কটে ভুগছি। ভাইকে গাড়ি ভাড়া করে নিয়ে যাবার মতো ক্ষমতা আমাদের নেই। ফলে বিনা চিকিৎসায় বাড়িতেই ভাইয়ের মৃত্যু হল। তবে হাসপাতালে পৌঁছাতে পারলে ভাই বেঁচে যেত বলে তিনি জানান।
স্থানীয় বাসিন্দা রনধির ওড়াও এবং স্বপন সমজারও একই অভিযোগ করেছেন। তাদের আক্ষেপ বীরপাড়া রাজ্য সাধারণ হাসপাতালে ফোন করেও কোন এ্যাম্বুল্যান্স না পাবার ফলে অকালেই সুশীল উড়াওয়ের মৃত্যু হল। অ্যাম্বুল্যান্স পেলে হয়তো বেঁচে যেত। রনধির বাবু বলেন, আজ একটি রোগীকে বাইকে করে চড়াইউৎরাই পার করে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।
বীরপাড়া রাজ্য সাধারণ হাসপাতাল সুপার কৌশিক গড়াই বলেন, আমাকে ওরা জানিয়েছিল। কিন্তু অ্যাম্বুল্যান্সটি বিকল ছিল। আমি ওদের বলে ছিলাম, অন্য কোন গাড়ি করে হাসপাতালে নিয়ে আসতে। গাড়ি ভাড়া হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ মিটিয়ে দেবে। 
সরকারের দেওয়া চা সুন্দরী ঘরে থেকেও শ্রমিকদের এ্যাম্বুল্যান্স ভাড়া করবার মতো হাতে পয়সা নেই। কাজ করেও বেতন মেলেনা। ফলে শ্রমিকদের এমন মর্মান্তিক অবস্থার সম্মুখীন হতে হচ্ছে। 
উল্লেখ্য এই বাগান এক দশকের বেশি সময় বন্ধ, অনাহার অপুষ্টিতে অনেক শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে। এর পরেও  রাজ্য সরকার বাগান খোলার উদ্যোগ নেয়নি। কয়েক বছর আগে বাধ্য হয়ে মালিক পক্ষের সঙ্গে শ্রমিকরা আলোচনা করে বাগানের কাজ শুর করেন। এই আলোচনায় রাজ্য সরকার অনুপস্থিত ছিল কোনো দায় নেয়নি। এই প্রসঙ্গে আলিপুরদুয়ার জেলার চা শ্রমিক নেতা বিদ্যুৎ গুন বলেন,‘‘ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী নিজেই স্বাস্থ্য মন্ত্রী। স্বাস্থ্য ব্যবস্থা এরাজ্যে ভেঙে  পরেছে। আবার চা বাগানে স্বাস্থ্য পরিষেবা বলে কিছু নেই। চালু বাগানে বন্ধ রুগ্ন সব বাগানেই স্বাস্থ্য ব্যবস্থা বলে কিছু নেই। চা বাগানের চিকিৎসা বিষয়ে বাগান মালিক রাজ্য সরকার কেউ দ্বায়িত্ব নেয়নি। চা শ্রমিকের বিনা চিকিৎসায় মৃত্যু একটি  জ্বলন্ত উদাহরণ।

Comments :0

Login to leave a comment