অনন্ত সাঁতরা ও শুভ্রজ্যোতি মজুমদার: পাণ্ডুয়া
পঞ্চায়েত থেকে লুটেরাদের তাড়িয়ে মানুষের পঞ্চায়েত গড়ে তুলতে সবাইকে এককাট্টা হয়ে লড়াই করতে হবে। বাংলার ভবিষ্যৎ বাংলার মানুষ ঠিক করবেন। বাংলার মানুষ মানে হিন্দু-মুসলমান, আদিবাসী, রাজবংশী, তফসিলি সবাই। সবাইকে একসঙ্গে লড়তে হবে। লাল ঝান্ডা মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করে। সেই কাজ আমাদের সকলকে করতে হবে। মানুষের ঐক্যই লুটেরাদের তাড়াতে পারবে। শনিবার পাণ্ডুয়ায় সারা ভারত খেতমজুর ইউনিয়নের হুগলী জেলা দ্বিতীয় সম্মেলন উপলক্ষে আয়োজিত সমাবেশে কথাগুলি বলেন সিপিআই(এম)’র রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম।
পাণ্ডুয়া শান্তিনগর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাঠে সমাবেশ হয়। মহিলাদের উপস্থিতি ছিল উল্লেখযোগ্য। সভা পরিচালনা করেন খেতমজুর ইউনিয়নের হুগলী জেলা সভাপতি গণেশ মাণ্ডি।
সমাবেশের আগে পাণ্ডুয়া শশীভূষণ সাহা উচ্চ বিদ্যালয়ের সামনে সংগঠনের পতাকা উত্তোলন করেন গণেশ মাণ্ডি। শহীদ বেদীতে মাল্যদান করেন নেতৃত্ব, কর্মীরা। ছিলেন গণআন্দোলনের নেতা দেবব্রত ঘোষ, মিতালি কুমার প্রমুখ।
সেলিম সমাবেশে বলেন, বাংলা বাঁচাতে, মূল্যবোধ রক্ষা করতে, বেকারত্ব দূর করতে, মজুরির টাকা পেতে এবং আমাদের অর্থনীতি ও রাজনীতি বাঁচাতে লাল ঝান্ডার লড়াইকে শক্তিশালী করতে হবে। এতদিন দেখতাম তৃণমূল-বিজেপি আমাদের স্লোগান চুরি করত। এখন দেখছি আমাদের ঝান্ডা চুরি করছে। কারণ বিজেপির সভায় এখন লোক হচ্ছে না, তাই নাটক করছে। তৃণমূল-বিজেপি’র মিছিলে যারা থাকে তাদের টাকা দিয়ে কেনা যায়। কিন্তু লাল ঝান্ডাকে কেনা যায় না। আমাদের রক্তে রাঙা হয়েছে লাল ঝান্ডা। এরা কেন বলছিল লাল হটাও বুঝতে পারছেন তো? দিল্লিতে লুট হবে, এরাজ্যেও লুট হবে। কেউ যাতে প্রতিবাদ না করতে পারে, তাই লাল ঝান্ডাকে তৃণমূল-বিজেপি হটাতে চাইছে।
মহম্মদ সেলিম আরও বলেন, এখন দেখা যাচ্ছে সেই চোরদের রক্ষাকারী পুলিশ। পুলিশের উদ্দ্যেশে বলছি পুলিশ তুমি তোমাদের কাজ করো। চোর ধরো জেলে ভরো। তা না করলে মানুষ কিন্তু ছেড়ে দেবেন না। আজ অনুব্রতকে বাঁচাতে পুলিশ প্রশাসন জোর চেষ্টা করছে। আসলে ওকে দিল্লি নিয়ে গেলে যদি সবার নাম বলে দেয়। তাহলে তো বিপদ। তাই আটকানোর চেষ্টা হচ্ছে। অথচ কাকদ্বীপ থেকে কোচবিহার— আমাদের হাজারো কর্মী শহীদ হয়েছেন। এ নিয়ে হাজারো এফআইআর করা হয়েছে। পুলিশ একটিরও ব্যবস্থা নিয়েছে? নেয়নি।
তিনি আরও বলেন, বামফ্রন্ট আমলে রাস্তা, কালভার্ট, সেতু, স্কুল- কলেজ তৈরি হয়েছে। ১০ বছরে তৃণমূল সরকার নীল সাদা রং করে চমকে রাজনীতি করছে। দিল্লিতে যখন সিএএ, এনআরসি’র বিরুদ্ধে আন্দোলন চলছে তখন মিথ্যে মামলা চাপিয়ে জামিয়া মিলিয়া সহ একাধিক বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিবাদী ছাত্র-ছাত্রীদের নামে মিথ্যা মামলা করা হয়। এরাজ্যে তৃণমূলের দুর্নীতির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করলেই মিথ্যা মামলা দেওয়া হচ্ছে।
খেতমজুর ইউনিয়নের রাজ্য সম্পাদক অমিয় পাত্র বলেন, ১০০ দিনের কাজে তৃণমূল যেমন চুরি করছে তেমনই ১০০ দিনের কাজের বরাদ্দ কমিয়েছে বিজেপি। গরিবের কাজ চাই এই দাবিতে বিজেপি-তৃণমূলকে কোনোদিন মিছিল করতে দেখবেন না। গরিব খেতমজুরদের অধিকার রক্ষার কথা বিজেপি-তৃণমূল বলে না। ১০০ দিনের কাজের বামপন্থীদের চাপেই হয়েছিল। এখানে যেমন তৃণমূল পঞ্চায়েতে চুরি করছে, ত্রিপুরাতে বিজেপি চুরি করছে। কিন্তু কেরালাতে পঞ্চায়েতে দুর্নীতির অভিযোগ তৃণমূল-বিজেপি-কংগ্রেস কেউ করতে পারবে না। এইজন্যই বামপন্থা বিকল্প।
খেতমজুর ইউনিয়নের হুগলী জেলা সম্পাদক রামকৃষ্ণ রায়চৌধুরি বলেন, আমাদের দেশের অসংখ্য অগণিত মানুষ দেশটাকে তুলে ধরেছেন। কিন্তু তারাই আজ বঞ্চিত হচ্ছেন। বিজেপি-তৃণমূল শাসনে গরিব মানুষ আজ অতিষ্ঠ হয়ে আছেন। তাদের ন্যূনতম সহায় সম্বলগুলি হারিয়ে যেতে বসেছে। আমাদের গ্রামে, রাজ্যে, দেশে পরিবর্তন হোক আমরা চাই।
প্রাক্তন বিধায়ক, খেতমজুর আন্দোলনের নেতা আমজাদ হোসেন বলেন, ক্ষমতা দিয়ে পঞ্চায়েত দখল করেছে, তারা এবারে কিছু করতে পারবে না। কারণ মানুষ লাল ঝান্ডা হাতে নিয়েছে। তৃণমূল তো চোরের দল। বিজেপি’র তাদের সঙ্গে যোগসাজশ রয়েছে। যারা ভুল করে তৃণমূলকে হটাতে বিজেপি-কে আনতে চেয়েছিল তারা বুঝে নিয়েছে। মানুষ বুঝে নিয়েছে চোর তৃণমূলকে তাড়াতে পারে লাল ঝান্ডা।
সমাবেশ শেষে সম্মেলনে শশীভূষণ সাহা উচ্চ বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে শুরু হয়েছে। সম্মেলন উদ্বোধন করেন অমিয় পাত্র। সম্মেলনে প্রতিনিধি ও দর্শক নিয়ে ২৭৬ জন অংশগ্রহণ করেছেন। মহিলা প্রতিনিধি ৪৪ জন। সম্পাদকীয় খসড়া প্রতিবেদন পেশ করেন রামকৃষ্ণ রায়চৌধুরি। আয়ব্যয়ের হিসাব পেশ করেন ফারুক আহমেদ লস্কর। প্রতিনিধিদের আলোচনা শুরু হয়েছে। সম্মেলন পরিচালনা করছেন গণেশ মাণ্ডি, মিতালি কুমার, বন্যা টুডু, স্বপন বটব্যাল, গৌর জানা ও কাশীনাথ খামারুকে নিয়ে গঠিত সভাপতিমণ্ডলী। সম্মেলন শেষ হবে রবিবার।
ক্যাপশন : শনিবার পান্ডুয়ায় খেতমজুর সমাবেশে বক্তব্য রাখছেন মহম্মদ সেলিম।
Comments :0