কেড়ে নেওয়া হয়েছে মাথার ছাদ। মাথা গোঁজা ঠাই ভেঙে দিয়েছে দিল্লি ডেভেলপমেন্ট অথরিটি। কেন্দ্রীয় আবাসন এবং নগরোন্নয়ন মন্ত্রকের অধীন এই সংস্থা নোটিস পর্যন্ত দেয়নি। এখন মরণ ছাড়া আর পথ খোলা নেই।
বৃহস্পতিবার একরাশ খেদ উগরে বলছেন র্যা ট হোল মাইনার ভাকিল হাসান। গত নভেম্বরে হাসানরাই উত্তরাখণ্ডের সিল্কিওয়ায় সুড়ঙ্গ কেটে উদ্ধার করেছিলেন আটকে থাকা ৪১ শ্রমিককে।
গত নভেম্বরে সারা দেশ অভিবাদন জানিয়েছিল হাসানদের। প্রাণের ঝুঁকি নিয়ে খুঁড়েছিলেন সুড়ঙ্গের ধস। বুধবার ভাকিল হাসানের বাড়ি ধসিয়ে দেয় বুলডোজার। বৃহস্পতিবার হাসান বলেছেন, ‘‘বাড়ি ভাঙার নির্দেশনামা দেখতে চেয়েছিলাম তিনি। দেখতে চেয়েছিলেন কাগজপত্র। তাঁর অপরাধই বা কী জানতে চেয়েছিলেন। কোনও কথা শোনা হয়নি। স্রেফ ভেঙে দেওয়া হয়েছে গোটা বাড়ি।’’
দিল্লিতে ‘বেআইনি’ ঘোষণা করে বাড়ি ভাঙা চলছে। বুধবার খাজুরি খাস এলাকায় চলে বুলডোজারের অভিযান। দিল্লিতে একাধিক জায়গায় এভাবেই গুঁড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে বসতি। গরিব, প্রান্তিক মানুষের মাথা গোঁজার ঠাঁই কেড়ে নেওয়া হচ্ছে।
সংবাদমাধ্যমে হাসান বলেছেন, ‘‘কেন এই সাজা আমরা জানি না। আমাদের কাজের এই পুরস্কার! আমাদের সংসার চালানোই কঠিন, নতুন বাড়ি কিনব কিভাবে?’’
হাসানের অভিযোগ, থানায় তাঁর পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে জঘন্য ব্যবহার করা হয়েছে। মারধর পর্যন্ত হয়েছে। তিনি বলেছেন, ‘‘আমি, আমার শিশু সন্তান এবং স্ত্রী থানায় গিয়েছিলাম। সেখানে কার্যত আটকে রাখা হয়। এখন আমাদের মরে যাওয়া ছাড়া আর কোনও রাস্তা খোলা নেই।’’
হাসান বলেছেন, ‘‘সরকার যখন জানতে চেয়েছিল কী পুরস্কার চাই, বলেছিলাম একটি বাড়ি হলে ভালো হত। তার বদলে যে বাড়িতে ছিলাম সেটিই ভেঙে দেওয়া হলো। এমনকি একটি নোটিস পর্যন্ত দেওয়া হলো না বাড়ি ভাঙার আগে।’’
গত বছরের নভেম্বরের গোড়ায় উত্তরখাণ্ডের উত্তরকাশীতে সিল্কিওয়ারা সুড়ঙ্গে ধস নেমেছিল। প্রধানমন্ত্রী প্রচারিত চারধাম প্রকল্পের এই নির্মীয়মান সুড়ঙ্গে আটকে পড়েছিলেন ৪১ শ্রমিক। হিমালয়ের বুকে ভঙ্গুর ভূ-প্রকৃতির কারণে ভারি যন্ত্র ব্যবহার করা সমস্যার হয়ে পড়ে। ধসের শেষ অংশ হাতে কেটে আটকে পড়া শ্রমিকদের বেরনোর রাস্তা তৈরি করেছিলেন হাসান এবং তাঁর সঙ্গী খননকারী দল। খনির কাজে এই পারদর্শী শ্রমিকদের বলা হয় ‘র্যা ট হোল মাইনার্স’। প্রায় চারশো ঘন্টা আটকে থাকার পর সূর্যের আলো দেখেছিলেন শ্রমিকরা। সারা দেশ অভিবাদন জানিয়েছিল হাসানদের।
হাসানের সঙ্গে খননকারী ওই দলের পাঁচ সদস্য থাকেন খাজুরি খাস এলাকায়। বাকিদের নিয়ে যাওয়া হয়েছিল উত্তর প্রদেশের বুলন্দশহর থেকে।
হাসানের প্রতিবেশী মুন্না কুরেশিও বৃহস্পতিবার বলেছেন, ‘‘সরকার আমাদের বাড়ি করে দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছিল। অথচ আমাদের এক সদস্যের মাথার ছাদ কেড়ে নিল সরকার।’’
মুন্না কুরেশি, ভাকিল হাসানদের জড়িয়ে ধরেছিলেন মুক্তি পাওয়া শ্রমিকরা। তার মধ্যে বাংলার শ্রমিকরাও ছিলেন। তাঁরা বলেছিলেন এই আলিঙ্গনই সবচেয়ে বড় পুরস্কার।
RAT MINER VAKIL HASSAN
মরণই এখন রাস্তা, বলছেন প্রাণ বাঁচানো র্যাট মাইনার
×
Comments :0