রণদীপ মিত্র: বোলপুর,
ফের কুসংস্কার আর ভ্রান্ত বিশ্বাসের বলি হয়েছেন এক গৃহবধূ। বুজরুকির ফাঁদ পেতে পয়সা রোজগার করা এক ভণ্ডের প্রতারণার শিকার হয়ে অচিরেই প্রাণ হারিয়েছেন ওই গৃহবধূ। আদিবাসী মহল্লায় তান্ত্রিক, তার জড়িবুটি ও মিথ্যা ভীতি প্রদর্শনের জেরে গৃহবধূর মৃত্যুর পর রীতিমত ক্ষেপে উঠেছেন এলাকার মানুষ। বুজরুকির কারবার করা ওই তান্ত্রিককে ঘিরে বিক্ষোভ দেখিয়েছেন। যার ফলে এলাকায় উত্তেজনার সৃষ্টি হলে পুলিশ তড়িঘড়ি ছুটে এসে অভিযুক্ত তান্ত্রিককে আটক করে।
ঘটনাটি ঘটেছে, বৃহস্পতিবার শান্তিনিকেতন থানার বনের পুকুরডাঙ্গা আদিবাসী পাড়ায়। এলাকারই গৃহবধুর তুলসী টুডুর (২৬) মৃত্যু ঘিরে আবারও উঠে এসেছে অন্ধবিশ্বাস ও কুসংস্কারের প্রভাবের চিত্র। জানা গেছে, মৃতা তুলসী টুডু দীর্ঘদিন ধরে মাথাব্যাথা ও অন্যান্য উপসর্গজনিত সমস্যায় ভুগছিলেন। বোলপুরের হাসপাতালে, বর্ধমানেও চিকিৎসা করিয়েছিলেন। ওষুধ নিয়ে এসেছিলেন। সেই ওষুধই খেতেন। কিন্তু এরপরই তিনি পড়ে যান স্থানীয় এক বুজরুকের খপ্পরে। লক্ষ্মণ সরেন নামে অভিযুক্ত ওই ব্যক্তিকে তান্ত্রিক বলেই জানেন এলাকার মানুষ। জড়িবুটি, সিঁদুর মেশানো জল ইত্যাদি নানান জিনিস দিয়ে তিনি রোগ সারাবার কারবার চালান এলাকায়, বলেই দাবি স্থানীয়দের। এই লক্ষ্মণ সরেনের খপ্পরে পড়ে ওই গৃহবধু ওষুধ খাওয়া বন্ধ করে তার দেওয়া নানা জড়িবুটি খেতে শুরু করেন। স্বাভাবিকভাবেই শরীর ভেঙে পড়ে। অবশেষে বৃহস্পতিবার তাঁর মৃত্যু হয়। এই মৃত্যুর পরেই উত্তেজনা ছড়ায় এলাকায়।
গৃহবধুর মৃত্যুর খবর পাওয়ার পর গ্রামবাসীরা অভিযুক্ত ওঝাকে গাছে বেঁধে রেখে বিক্ষোভ দেখান। এলাকায় এসে পৌঁছায় শান্তিনিকেতন থানার পুলিশ। দীর্ঘক্ষণ পরে ওই তান্ত্রিক লক্ষ্মণ সরেনকে উত্তেজিত জনতার হাত থেকে উদ্ধার করে নিয়ে যায় পুলিশ। গ্রামের বাসিন্দা মণি টুডু, পানমনি হাঁসদারা জানিয়েছে, ‘‘ এলাকায় ওই তান্ত্রিক দীর্ঘদিন ধরেই নিজের ব্যবসা ফেঁদে বসেছিলেন। ঝাড়ফুঁক করে গ্রামের বাসিন্দাদের রোগ সারিয়ে দেবার দাবি করতেন। বেশ কিছুদিন ধরে মৃতা তুলসী টুডু অসুস্থ হয়েছিলেন। সে কারণে তিনি বোলপুর মহকুমা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। কিন্তু সেখান থেকে দেওয়া ওষুধ গ্রামে ফিরে আসার পর খেতে দেয়নি ওই তান্ত্রিক। নিজের জড়িবুটি দেওয়ার বদলে প্রচুর পরিমাণ টাকা দাবি করেছিল।’’ মৃত গৃহবধূর স্বামী সোম টুডুর বক্তব্য, ‘‘ আমি স্ত্রীকে বোলপুর, বর্ধমান সব জায়গায় চিকিৎসার জন্য নিয়ে গিয়েছিলাম। তারপর এই তান্ত্রিক আমাকে ভয় দেখায়। বলে ওষুধে কিছু হবে না। পঞ্চাশ হাজার টাকা চেয়েছিল।’’
পুলিশের হাতে আটক হওয়ার আগে অভিযুক্ত তান্ত্রিক সাফাই দিয়েছেন, ‘‘ আমি কামরূপ-কামাখ্যা থেকে জড়িবুটি নিয়ে এসে চিকিৎসা করি। তবে তুলসীকে আমি জবাব দিয়ে দিয়েছিলাম। আমি ওকে কিছু করিনি।’’
Comments :0