Abhishek Banerjee

অভিষেকের বিদেশযাত্রায় অনুমতি? সুপ্রিম কোর্টে স্পষ্ট জানালো না ইডি

কলকাতা

অভিষেক ব্যানার্জির বিদেশ যাত্রার প্রসঙ্গে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার ইডি’র ভূমিকায় রীতিমতো ধোঁয়াশা তৈরি হলো। সুপ্রিম কোর্টের শুনানিতেও সেই ধোঁয়াশা কাটল না।
শুক্রবারের শুনানি শেষে দেশের সর্বোচ্চ আদালত জানিয়েছে, এবার বিদেশ যেতে হলে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় ও তাঁর স্ত্রীকে সাত দিন আগে তদন্তকারী সংস্থার কাছে অনুমতির জন্য আবেদন করতে হবে। আবেদন বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত নেবে তদন্তকারী সংস্থা। ফলত অভিষেক ব্যানার্জির বিদেশযাত্রায় কোনও বাধা রইল না, শাসক তৃণমূলের এমন দাবি রীতি মতো বিভ্রান্তিকর। 
তবে একইসঙ্গে এদিন বিচারপতি সঞ্জয় কিষান কাউল ও বিচারপতি সুধাংশু ধুলিয়ার বেঞ্চ কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার কাছে জানতে চায়, অভিষেক ব্যানার্জি ও তাঁর স্ত্রী রুজিরা নারুলা ব্যানার্জির বিরুদ্ধে কী লুক আউট নোটিস জারি করা রয়েছে? ইডি’র তরফে এরপরেই আদালতে জানানো হয়, বিদেশ যাত্রার ক্ষেত্রে অভিষেক ব্যানার্জি ও তাঁর স্ত্রীর বিরুদ্ধে লুক আউট নোটিস তুলে নেওয়া হয়েছে। অভিষেক ব্যানার্জি চিকিৎসা সংক্রান্ত ব্যাপারে বিদেশ যাওয়ার আগে চিঠি দিয়ে জানিয়েছিলেন তদন্তকারী সংস্থাকে। সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি সঞ্জয় কিষান কাউল এরপরেই অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের স্ত্রী রুজিরা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে থাকা লুক আউট নোটিস প্রত্যাহারের কথা বলেন। বিচারপতি বলেন, এক্ষেত্রে পিটিশনারকে বিদেশ যাওয়ার ক্ষেত্রে সাত দিন আগে আবেদন করতে হবে। আর আবেদন করেই যদি যেতে হয়, তাহলে লুক আউট সার্কুলারের ভূমিকা কী? আবেদন করেই যেহেতু দেশ ছাড়তে হবে, সেক্ষেত্রে তাই লুক আউট নোটিস তুলে নেওয়ার কথাই বলেন তিনি।
আর এখানেই উঠছে প্রশ্ন, রুজিরা নারুলা ব্যানার্জির বিরুদ্ধে লুক আউট নোটিস জারি ছিল। তা দেখিয়েই গত ৫ জুন দমদম বিমানবন্দরে আটকানো হয় তাঁকে। দুবাই যাওয়ার চেষ্টা করেছিলেন অভিষেক-জায়া। যদিও অভিষেক ব্যানার্জির বিরুদ্ধে লুক আউট নোটিস জারি রয়েছে, এমন তথ্য ইডি আগে জানায়নি। আর যদি লুক আউট নোটিস জারি করাই থাকে, তবে কীভাবে গত বুধবার সকালে সস্ত্রীক দুবাই হয়ে আমেরিকায় চলে গেলেন অভিষেক ব্যানার্জি? স্বাভাবিকভাবেই ইডি’র বক্তব্যে তৈরি হয়েছে ধোঁয়াশা। 
এর আগের শুনানিতে অভিষেকের ব্যানার্জির তরফে আইনজীবী কপিল সিবাল সুপ্রিম কোর্টে সওয়ালে বলেন, চোখের চিকিৎসার জন্য আগামী ২৬ জুলাই আমেরিকায় যেতে চান অভিষেক ব্যানার্জি। আগামী ৮ আগস্ট অস্ত্রোপচারের জন্য সেখানে তাঁর অ্যাপয়েন্টমেন্ট রয়েছে। প্রায় ২৪ দিন আমেরিকায় থাকার কথা তাঁর। তাঁর স্ত্রীরও বিদেশ যাত্রার কথা রয়েছে। তার পরিপ্রেক্ষিতেই বিচারপতি সঞ্জয় কিষান কাউল এরপরে ইডি’র উদ্দেশে বলেছিলেন, ‘‘আপনারা ওঁর (অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়) তদন্ত করছেন এক বছর হয়ে গেল। তদন্তের প্রয়োজনে বারবার সমন করুন। সুপ্রিম কোর্টের আগের নির্দেশমতো তদন্ত করতে বাধা কোথায়? কেন লুক আউট নোটিস জারি করা হয়েছে এবং এই ব্যাপারে কী করতে হবে বলুন।’‘ ইডি’র তরফে আইনজীবী জানান, তদন্তকারী আধিকারিকদের সঙ্গে এই বিষয়ে নির্দিষ্ট আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে তিনি বিষয়টি পরবর্তী শুনানিতে জানাবেন । 
সেই শুনানিই ছিল এদিন। ইডি জানায়, অভিষেক ব্যানার্জি আগেই জানিয়েছিলেন তাঁদের বিদেশ যাওয়ার কথা। একইসঙ্গে ইডি’র তরফে আইনজীবী জানান, তদন্ত চলাকালীন লুক আউট নোটিসের ক্ষেত্রে কিছু ছাড় এবং শর্তও দেওয়া হয়। রুজিরা নারুলার বিরুদ্ধে লুক আউট নোটিস তুলে নেওয়ার কথাও বলা হয়। গত ৫ জুন তাঁকে বিমানবন্দরে আটকে দেওয়ার প্রসঙ্গও তোলেন তিনি। গত ৫ জুন দুবাই যেতে গিয়ে অভিবাসন দপ্তরের বাধার মুখে পড়তে হয়েছিল রুজিরা নারুলা ব্যানার্জিকে। তাঁর নামে কয়লা পাচারকাণ্ডে ইডি’র লুক আউট নোটিস জারি থাকায় অভিবাসন দপ্তর তাঁকে আটকে দেয়। 
অভিবাসন দপ্তর সূত্রের খবর, কয়লা পাচারকাণ্ডের তদন্তেই ‘লুক আউট’ নোটিস জারি হয়েছিল অভিষেক-জায়ার নামে। তার ভিত্তিতেই তাঁকে বিমানবন্দরে বোর্ডিং-এ বাধা দেওয়া হয়। বেশ কিছুক্ষণ কথা কাটাকাটির পরে দুই সন্তানকে নিয়ে বিমানবন্দর থেকে ফিরে যান রুজিরা নারুলা ব্যানার্জি। ব্যাঙ্কক যেতে গিয়েই নয় মাসে আগে দমদম বিমানবন্দরে অভিবাসন দপ্তরের বাধার মুখে পড়তে হয়েছিল অভিষেক ব্যানার্জির শ্যালিকা মেনকা গম্ভীরকে। কয়লা পাচারকাণ্ডে রুজিরা নারুলা ব্যানার্জির বোন মেনকা গম্ভীরের নামেও লুক আউট নোটিস জারি করেছিল ইডি।
আর এখানেই প্রশ্ন উঠছে, তাহলে কি সুপ্রিম কোর্টে শুনানি এবং আগামী সোমবার কলকাতা হাইকোর্টে শুনানির আগে অভিষেক ব্যানার্জি যে গত ২৬ জুলাই সস্ত্রীক আমেরিকায় চলে গেলেন, তা ইডি’র সম্মতি নিয়েই? আদালতে তদন্তকারী সংস্থা বলেছে, অভিষেক ব্যানার্জি তা আগেই জানিয়েছিলেন। গত ১৫ জুলাই এই মর্মে চিঠিও দেন।

 

Comments :0

Login to leave a comment