Duare Sarkar

ইসলামপুরে শিবির ভাঙচুরে তৃণমূলীরা চন্দ্রকোনায় হেনস্তার শিকার মানুষজন

রাজ্য

দুয়ারে সরকার প্রকল্পের অব্যবস্থাকে ঘিরে রাজ্যজুড়ে শুরু হয়েছে ব্যাপক অশান্তি ও গন্ডগোল। উত্তর দিনাজপুরের ইসলামপুরে তৃণমূল সরকারের দুয়ারে সরকার কর্মসূচিতে ভাঙচুর চালালেন তৃণমূল নেতা, কর্মীরাই। অন্যদিকে, পশ্চিম মেদিনীপুরের চন্দ্রকোনায় দুয়ারে সরকার শিবিরে হেনস্তা হওয়ার প্রতিবাদ জানিয়ে শিবিরের সামনেই বিক্ষোভ দেখালেন এলাকার সাধারণ মানুষ। বৃহস্পতিবার এই ঘটনা ঘটেছে। 
বৃহস্পতিবার চন্দ্রকোনায় দুয়ারে সরকার শিবিরে হেনস্তা হওয়ার প্রতিবাদ জানিয়ে শিবিরের সামনেই বিক্ষোভ দেখান সাধারণ মানুষ। গত চার পাঁচ বছর ধরে আবেদন করেও চালু হয়নি বয়স্ক ভাতা, কেউ পাননি প্রতিবন্ধী ভাতা। এর আগে কেউ ৪ বার, কেউ ৫ বার দুয়ারে সরকার ক্যাম্পে একই কারণে আবেদন পত্র জমা দিলেও এখনেও পর্যন্ত তাদের সামাজিক সুরক্ষার ভাতা চালু হয়নি। আবারেও বৃহস্পতিবার চন্দ্রকোনা ২ নন্বর ব্লকের পলাশচাপড়ি গ্রামপঞ্চায়েত এলাকার বসনছোড়াতে এমনই শিবিরে পুনরায় আবেদন পত্র জমা দিতে এলে তাঁদের বলা হয় আর নেওয়া হবে না। আগের আবেদন পত্র আপলোড করা আছে, তাতেই হবে।
এলাকার বাসিন্দা হরিসাধন চক্রবর্তী বলেন, আমার বয়স এখন ৬৬ বছর। এর আগে পাঁচবার এই শিবিরে এসে বয়স্ক ভাতার আবেদন পত্র সহ কাগজ জমা দিই। এখনেও আমার সেই ভাতা চালু হয়নি। তিনি ক্যাম্পের সামনেই দলবাজি সহ স্বজন পোষণের অভিযোগ তোলেন। মিলন সতপথি নামে ৬৪ বছর বয়সি ব্যক্তি বলেন,  তিনিও এর আগে তিনবার আবেদন পত্র জমা দিয়েছেন লাইন দিয়ে। সেই ভাতা এখনেও না পাওয়ায় আজ আবার লাইনে দাঁড়িয়ে ছিলেন। ঘন্টা তিনেক পর যখন টেবিলের সামনে যান তখন বলা হয় আর আবেদন পত্র দেওয়ার দরকার নেই। কবে ভাতা চালু হবে কেউ কোনও উত্তর দিতে পারেনি। 
লক্ষী সর্দার, নয়ন বেরা, শেখ সাজ্জু— এঁরা সকলেই প্রতিবন্ধী। এর আগে চার বার আবেদনপত্র সহ কাগজ পত্র জমা দেন তাঁরা। এখনোও তাদের প্রতিবন্ধী ভাতা চালু করেনি সরকার। তাঁদেরও আর আবেদন পত্র না নিয়ে বলা হয়, সব আপলোড হয়ে আছে, যখন সরকার চালু করবে তখন টাকা ব্যাঙ্কে চলে যাবে। প্রশ্ন ওঠে,  তাহলে কেন আগে থেকে এমন কথা ঘোষণা করা হলো না। এরপর বারে বারে লাইনে দাঁড় করিয়ে হেনস্থা ও বঞ্চিত করা হচ্ছে বলে অভিযোগ তুলে ক্যাম্পের সামনে বিক্ষোভ দেখান অঞ্চলবাসীরা। এমন ঘটনা ঘাটাল মহকুমা সহ সারা জেলা জুড়েই চলছে। 
অন্যদিকে বৃহস্পতিবার ইসলামপুর ব্লকের আগডিমটি খুন্তি গ্রামে দুয়ারে সরকারের কর্মসূচিতে ভাঙ্গচুর করলেন তৃণমূলের নেতারাই। জানা গেছে খোদ তৃণমূল অঞ্চল সভাপতির নেতৃত্বে ক্যাম্পের আসবাবপত্র ভাঙচুর হয়েছে, প্রশাসনের তৈরি কাগজপত্র ছুঁড়ে ফেলেছেন দলের কর্মীরা। খবর পেয়ে বিশাল পুলিশবাহিনী ঘটনাস্থলে গিয়েও হিমশিম খেয়েছে। সরকারি পদস্থ আধিকারিকরা জানিয়েছেন, পর্যাপ্ত ফরম রয়েছে। কিন্তু দেখা গেল কিছু বোঝার আগেই একদল এসে উত্তেজনা তৈরি করেছেন। 
গত ১ এপ্রিল থেকে রাজ্য জুড়ে শুরু হয়েছে দুয়ারে সরকার ক্যাম্প। বৃহস্পতিবার সকাল থেকে প্রখর রোদ। ইসলামপুর ব্লকের আগডিমঠি খন্তি অঞ্চলের দিঘলবস্তি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে এই ক্যাম্প অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা। এদিকে এলাকার তৃণমূলের নেতাদের জন্যে বরাদ্ধ হয়নি চেয়ার, ব্লক নেতাদের খবর দেওয়া হয়নি। এসব সহ্য হয়নি তৃণমূল নেতাদের। ফলে বেলা গড়ালে ক্রমশ বাড়তে থাকে উত্তেজনা। সকাল সাড়ে ১০টায় দুয়ারে সরকার ক্যাম্প চালু হওয়ার কথা থাকলে বেলা সাড়ে এগারোটা নাগাদ সরকারি কর্মীরা ক্যাম্পে হাজির হন বলে অভিযোগ। এই বিষয় নিয়েই শুরু হয় ভাঙচুর ।  
দূরদূরান্ত থেকে আসা গ্রামবাসীরা প্রকল্পের ফরম না পেয়ে ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন বলে অভিযোগ। দিঘলবস্তি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাশেই বাড়ি তৃণমূল অঞ্চল সভাপতি আকবর আলীর। তাঁকে আগাম কেন খবর দেওয়া হয়নি— এই প্রশ্ন তুলে ক্ষোভ জানান তিনি। এরপরেই সেখানে ক্ষুব্ধ মানুষকে সাহায্য করার নামে  ক্যাম্পে হাজির হন তিনি ও তাঁর দলবল। এদিকে দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকেও ফরম না মেলায় চরম হয়রানির অভিযোগ বাসিন্দাদের। জিগির তুলে ১০-১২ জন তৃণমূল নেতা কর্মী এসেই ক্যাম্পের সমস্ত আসবাবপত্র বারান্দা থেকে বাইরে ফেলে দেন। এই ঘটনায় ব্যাপক উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। অনেক পরে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে পুলিশ। আগডিমঠি খন্তি অঞ্চলের সরকারি আধিকারিক সাগরাম  সোরেন জানিয়েছেন, ক্যাম্পে পর্যাপ্ত ফরম রয়েছে। এনিয়ে অহেতুক গ্রামবাসীদের সমস্যার অজুহাত দেখিয়ে ক্যাম্পে ভাঙচুর চলে।  

 

Comments :0

Login to leave a comment