Jalpaiguri hospital

মিলল না ট্রলি, ‘মাতৃমা'র সামনেই প্রসব মহিলার , প্রশ্নের মুখে সরকরি হাসপাতাল

জেলা

 


 

দীপশুভ্র সান্যাল-জলপাইগুড়ি

 

আবারও জলপাইগুড়ি মেডিকেল কলেজের পরিকাঠামোর অবব্যবস্থা সামনে আসায় বড় প্রশ্নের মুখে হাসপাতালের রোগী পরিষেবা। পর্যাপ্ত ট্রলি না থাকায় হাসপাতালের বাইরেই সন্তান প্রসব করলেন প্রসূতি মা!জলপাইগুড়ি মেডিক্যাল কলেজের পুরানো জলপাইগুড়ি সদর হাসপাতালের ক্যাম্পাসে অবস্থিত মাদার অ্যান্ড চাইল্ড হাব। এর নতুন নামকরণ হয়েছে ‘মাতৃমা’। এখানেই এই অমানবিক ঘটনা ঘটেছে। এই ঘটনায় সরকারি হাসপাতালের পরিকাঠামোগত সমস্যার বিষয়টি আরও একবার শিরোনামে উঠে আশায় অস্বস্তিতে জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ।

গত বছরই প্রবল শীতে জলপাইগুড়ি মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল থেকে মৃতদেহ বাড়ি নিয়ে যাওয়ার সময়ে চেয়েও সরকারি অ্যাম্বুলেন্স না পাওয়ায় এবং বেসরকারি অ্যাম্বুলেন্সের চড়া চার্জ মেটানোর ক্ষমতা না থাকার কারণে রোগীর পরিবারের সদস্যদের মৃতদেহ ঘাড়ে করে রাস্তায় নিয়ে আসার নির্মম চিত্র বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে দেখেছিল গোটা রাজ্য তথা দেশ। এরপরের ঘটনা হাসপাতালের গেটে সন্তান প্রসব। জানা গিয়েছে, প্রসব যন্ত্রণা উঠলেও ট্রলির অভাবে হাসপাতালের ওয়ার্ডে ঢুকতে পারেননি ওই সন্তানসম্ভবা মহিলা। শেষে বাধ্য হয়ে হাসপাতালের গেটের সামনেই সন্তান প্রসব করতে বাধ্য হন তিনি।

বৃহস্পতিবার রাতে লতা রায় নামে এক গর্ভবতী মহিলাকে তাঁর পরিজনরা অ্যাম্বুলেন্সে করে প্রসবের জন্য মাতৃমাতে ভর্তি করাতে নিয়ে যান। হাসপাতালে পৌঁছে অ্যাম্বুলেন্স থেকে গর্ভবতী মহিলাকে নামানোর পর ভিতরে নিয়ে যাওয়ার জন্য স্ট্রেচার বা ট্রলির দেখা মেলেনি বলে অভিযোগ। এদিকে প্রসব যন্ত্রণায় ওই মহিলা ততক্ষণে হাসপাতালের গেটের বাইরে যন্ত্রণায় কাতরাতে শুরু করেছেন। লতা রায়ের শ্বশুর বিষ্ণু কার্জির অভিযোগ, পুত্রবধূকে হাসপাতালের ভেতরে নিয়ে যাওয়ার জন্য ট্রলির খোঁজে বেশ কিছুক্ষণ তাঁরা এদিক-ওদিক ছোটাছুটি করেন। কিন্তু সিকিউরিটি গার্ড সহ হাসপাতালের কর্মীরা কোন‌ও সাহায্য করেননি।

শেষে ট্রলির অভাবে হাসপাতালের ভেতরে পৌঁছাতে পারেননি ওই প্রসূতি। এর কিছুক্ষণের মধ্যেই হাসপাতালের গেটের সামনেই তিনি সন্তান প্রসব করেন। এই ঘটনায় হাসপাতালে আসা অন্যান্য রোগীর আত্মীয়-পরিজনরাও ক্ষোভে ফেটে পড়েন। সিকিউরিটি গার্ডদের ঘিরে তাঁরা বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন। এই বিষয়ে কর্তব্যরত দু’জন সিকিউরিটি গার্ডকে প্রশ্ন করা হলে তাঁরাও বলেন, ট্রলির খোঁজ করা হলেও পাওয়া যায়নি। এদিকে হাসপাতালে ঢুকতে না পেরে রাস্তায় সন্তান প্রসবের পর টনক নড়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের। সদ্যোজাত শিশু সহ মাকে হাসপাতালের ভিতরে নিয়ে গিয়ে তাঁদের চিকিৎসা শুরু করা হয়।

এই ঘটনার পর‌ই হাসপাতালের ভেতর দালাল চক্র সক্রিয় আছে বলে দাবি করেছেন রোগীর পরিজনরা। তারা টাকা আদায়ের জন্য জোর করে ট্রলি আটকে রাখে বলে অভিযোগ। এই প্রসঙ্গে জলপাইগুড়ি মেডিক্যাল কলেজের এমএসভিপি কল্যাণ খাঁ জানান, এই ধরনের ঘটনার খবর জানা নেই। ট্রলি এবং হুইল চেয়ারের সমস্যা থাকার কথা নয় বলে তিনি দাবি করেন। তবে রোগীর পরিবারের কাছ থেকে অভিযোগ পেলে বিষয়টি খতিয়ে দেখবেন বলে তিনি জানিয়েছেন। প্রয়োজনে সিসিটিভি ফুটেজ দেখে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার আশ্বাস দেন তিনি। তবে শুধু এই অভিযোগই নয়, জলপাইগুড়ি জেলা হাসপাতাল, যাকে দু'বছর হলো রাজ্য সরকারের পরিকল্পনা মোতাবেক মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে রূপান্তরিত করা হয়েছে, সেখানে বিভিন্ন বিভাগে চিকিৎসা পরিষেবা নিয়ে প্রায়ই বিভিন্ন অভিযোগ সামনে আসছে। জলপাইগুড়ি মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল চালু হলেও এখনও এই হাসপাতালের অ্যানাটমি বিভাগ দেহদানে আগ্রহীদের ফিরিয়ে দিচ্ছে বলে অভিযোগ।

শুধু তা নয়। জলপাইগুড়ি মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল সংলগ্ন যে মর্গ চালু আছে, সেই মর্গে রাখা মৃতদেহের দুর্গন্ধে হাসপাতালের সামনের রাস্তা দিয়ে নাকে রুমাল চাপা দিয়ে যাতায়াত করতে হচ্ছে মানুষকে। রোগী থেকে ডাক্তার, নার্স মৃতদেহের পচা দুর্গন্ধে সবারই প্রাণ ওষ্ঠাগত। এই বিষয়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের বক্তব্য, ওই মর্গ পুলিশ মর্গ। পুলিশ মৃতদেহ সৎকার না করলে তাদের কিছু করার নেই। 

Comments :0

Login to leave a comment