hooghly rally

হুগলীতে বামপন্থীদের মহামিছিলে আহ্বান

জেলা

  সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষায় মানুষকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়ে রবিবার হুগলী জেলার কোন্নগর থেকে উত্তরপাড়া পর্যন্ত সম্প্রীতির মহামিছিলে পথে হাঁটলেন বামপন্থীরা। মিছিল শেষে জনসমাবেশে বামফ্রন্ট সভাপতি বিমান বসু পথে নামা মানুষদের অভিনন্দন জানিয়ে বলেছেন, দাঙ্গা থামাতে রাজ্যের সরকার ব্যর্থ, এখন জনগণের এই ঐক্যই একমাত্র দাঙ্গাবাজদের রুখে দিতে পারে। সিপিআই(এম)’র রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম বলেছেন, কেন্দ্র এবং রাজ্যের শাসকদল চাইছে বলেই সাম্প্রদায়িক অশান্তি ঘটছে, ক্ষমতায় টিকে থাকতে এভাবে ওরা মানুষকে ভাগ করতে চাইছে। এর বিরুদ্ধে লাল ঝান্ডা হাতে মানুষের বন্ধন দৃঢ় করতে হবে। 
দাঙ্গা নয়, শান্তি চাই। বাংলার সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির ঐতিহ্য রক্ষা করতে হবে। এই স্লোগান তুলে বিভেদকামীদের হুঁশিয়ারি দিয়ে রবিবার ১০টি বামপন্থী দলের আহবানে কোন্নগরের বাটা মোড় থেকে সম্প্রীতির মহামিছিল জিটি রোড ধরে এগিয়ে চলে উত্তরপাড়ার দিকে। ৬ কিলোমিটার পথ পেরিয়ে উত্তরপাড়ায় গৌরী সিনেমা হল পর্যন্ত গিয়ে সুসজ্জিত মিছিল শেষ হয় এবং জনসভা হয়। যাত্রাপথে মিছিল ঘিরে রাস্তার দু’ধারে ছিল অজস্র মানুষের ভিড়। দোকান, বাড়ি গাড়ি থেকে মানুষজন বেরিয়ে আসেন। বাড়ির ছাদ, আবাসনের ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে অনেকেই মিছিলে অংশগ্রহণকারী উদ্দেশ্যে হাত নেড়ে অভিনন্দন জানান। বিভিন্ন জায়গায় মানুষ সমবেত হয়ে ফুল দিয়ে অভ্যর্থনা জানান মিছিলের নেতৃত্বকে। বিমান বসু, মহম্মদ সেলিম, শ্রীদীপ ভট্টাচার্য, দেবব্রত ঘোষ সহ এই মিছিলে সিপিআই(এম), সিপিআই, এআইএফবি, আরএসপি, সিপিআই(এমএল) লিবারেশন, এসইউসিআই(সি), আরসিপিআই, এমএফবি, ওয়ার্কার্স পার্টি, বলশেভিক পার্টি সহ বামপন্থী দলগুলির নেতৃবৃন্দ, ছাত্র, যুব, মহিলা, শ্রমিক কর্মচারী ও শিক্ষকরা অংশ নেন। হুগলী জেলার বিভিন্ন অঞ্চল থেকে মানুষ এই মিছিলে শামিল হন।
মিছিল শেষে গৌরী সিনেমা হলের সামনে সমাবেশে বিমান বসু বলেন, প্রথমে হাওড়ার শিবপুরে এবং তারপরে হুগলীর রিষড়ায় রামনবমীর নামে যে ঘটনা ঘটলো তা মেনে নেওয়া যায় না। কে দায়ী এর জন্য? রাজ্যের প্রশাসনই দায়ী। দাঙ্গাবাজরা সক্রিয় ছিল সেটা কি আগে জানা যায়নি? পুলিশের গোয়েন্দা রিপোর্ট ছিল না? আম্বেদকরের মুর্তির সামনে ধরনার নামে বসে মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি বলেছেন, এক মাস আগে তিনি জানতে এমন ঘটবে জানতে পেরেছিলেন। মুখ্যমন্ত্রীর তো দাঙ্গা দমনের ক্ষমতা ছিল, তা হলে অঙ্কুরেই হিংসাশ্রয়ীদের থামানো হয়নি কেন?
বিমান বসু বলেন, ছয়ের দশকে তেলেনিপাড়ার দাঙ্গার সময় তখনকার উপমুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসু রাত বারোটায় তেলেনিপাড়ায় গিয়েছিলেন। তখন তিনি হুগলী জেলার এসপি’কে বলেছিলেন, দাঙ্গাকারী দেখলেই গুলি করবেন। সে হিন্দু হোক বা মুসলিম হোক ‘শ্যুট অ্যাট সাইট’ নির্দেশ দিয়েছিলেন। দাঙ্গাবাজরা দেশের শত্রু, সমাজের শত্রু। তাদের কোনও ধর্ম হয় না।
মহম্মদ সেলিম বলেন, আমাদের দেশে এবং বাংলার বুকে ধর্মীয় উৎসব নতুন কিছু নয়। কিন্তু যারা ধার্মিক মানুষ তাঁরা ধর্মপালন করেন, ধর্মীয় রীতি অনুযায়ী ধর্মস্থলে উপাসনা গৃহে যান। কিন্তু ধর্মীয় উসকানি দিয়ে রামনবমী ও হুনুমান জয়ন্তীর মিছিলকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা হয়েছে। গরিব মানুষ, যাদের রোজগার নেই, দাঙ্গা তৈরিতে তাদের একটা অংশের হাতে অস্ত্র তুলে দেওয়া হয়েছে। এখন ধর্মকে ব্যবহার করা হচ্ছে রাজনীতির প্রয়োজনে। ধর্মকে অপকর্মের বর্ম করা হচ্ছে। রাজ্যের শাসক দল ও কেন্দ্রের শাসক দল নিজেদের মধ্যে প্রতিযোগিতায় নেমেছে কে বেশি রামভক্ত। মুখ্যমন্ত্রীর কাছে নাকি একমাস আগে দাঙ্গার খবর ছিল। নবান্নে এসে তো তিনি রোজ বসেন, কেন তিনি এই সময়েই গঙ্গার পশ্চিমকূল ছেড়ে পূর্বকূলে চলে গিয়ে ধর্ণার নামে তামাশায় বসলেন? আরএসএস’এর পরিকল্পনামাফিক দাঙ্গাকারীদের জন্য প্রশাসনকে নিষ্ক্রিয় করে দিলেন। 
সেলিম বলেছেন, ব্রিটিশ আমল থেকে আমাদের দেশে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা হয় শাসকদের ইচ্ছেয় মানুষকে ভাগ করে দুর্বল করে দেওয়ার জন্য। ব্রিটিশ আমলে যখন কানপুরের চটকল শ্রমিকরা মজুরির দাবিতে লড়াই করেছিল তখন দাঙ্গা বাধানো হয়েছিল। আজকের বাংলার মানুষকে ভাগ করতে চাইছে চোরেরা। চুরি দুর্নীতি, জনজীবনের দুর্দশা থেকে মানুষের দৃষ্টি ঘোরাতে ধর্মকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে রাস্তায় নামানো হচ্ছে। তৃণমূল এবং বিজেপি হিন্দু মুসলমান, মন্দির মসজিদের নামে মানুষের মধ্যে বিরোধ লাগাতে চাইছে। আসলে দাঙ্গাবাজরা থাকে অল্প কয়েকজন। তাই সরকার না চাইলে দাঙ্গা হয় না। দাঙ্গা হচ্ছে কেন্দ্রের সরকার এবং রাজ্যের সরকার চাইছে বলে। লাল ঝান্ডা হাতে মানুষ ঐক্যবদ্ধভাবে রাস্তায় নেমে হক দাবি করলে দাঙ্গা করা এত সহজ হবে না। মানুষ যদি এক হয় তাহলে আমাদের কেউ ভাগ করতে পারবে না। আমাদের ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। 
ফরওয়ার্ড ব্লক নেতা সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায় বলেন, যে কোনও মূল্যে দাঙ্গার বিরুদ্ধে মানুষের ঐক্য গড়ে তুলতে হবে। সিপিআই নেতা তিমির ভট্টাচার্য বলেন, সাম্প্রদায়িক শক্তিকে পরাস্ত করতে সকলকে ঐক্যবদ্ধভাবে লড়াই চালিয়ে যেতে হবে। আরএসপি নেতা মৃন্ময় সেনগুপ্ত বলেন, রুটিরুজির ঐক্যবদ্ধ লড়াইয়ের মধ্য দিয়ে দাঙ্গাবাজদের জনজীবন থেকে বিচ্ছিন্ন করে দিতে হবে। সিপিআই(এমএল) লিবারেশনের নেতা কার্তিক পাল বলেন, কৃষক শ্রমিক ও ছাত্র যুব মহিলাদের মুখরিত আন্দোলনের মধ্য দিয়ে সাম্প্রদায়িক শক্তিকে পরাস্ত করতে হবে। 
সভাপতির ভাষণে দেবব্রত ঘোষ বলেন, হুগলী জেলার মাটি সাম্প্রদায়িকতার মাটি নয়, আরএসএস দাঙ্গাবাজের মাটি নয়। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির মাটি। যারা এই সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ধ্বংস করতে চায় মানুষ তাদের ক্ষমা করবে না। মানুষের নজর ঘোরানোর রাজনীতির নোংরা খেলায় কারা মেতেছে মানুষ বুঝে গেছে। দাঙ্গাবাজদের তৈরি করা অশান্তি বিভিন্ন ধর্মাবলম্বী মানুষের মনের যে ঐক্য অটুট আছে তাকে ভাঙতে পারেনি। এই ঐক্যকে আরও মজবুত ও প্রসারিত করে লড়াইকে তীব্র করতে হবে।
সোমবার হাওড়ার বালি খাল থেকে ফের একটি শান্তি ও সম্প্রীতির মিছিল বের হবে বামপন্থীদের আহবানে এবং তা হাওড়ার পিলখানায় ব্রিজ অ্যান্ড রুফের সামনে শেষ হবে।

 

Comments :0

Login to leave a comment