SUJAN CHAKRABORTY RANINAGAR

‘বিরোধীশূন্য’ মডেল, রানিনগরেও বিজেপি’কে অনুকরণ তৃণমূলের, ক্ষোভ চক্রবর্তীর

রাজ্য

ছবি সংগ্রহ থেকে।

‘‘মুর্শিদাবাদের রানিনগরে পঞ্চায়েত সমিতির নির্বাচিত সদস্যদের দল ভাঙিয়েছে তৃণমূল। একই খেলা। বিজেপি যেমন দল না ভাঙিয়ে রাজনীতি করতে পারে না, বিরোধীশূন্য রাজনীতি। তৃণমূলও তাই।’’

রবিবার পরিস্থিতির এই ব্যাখ্যা দিয়েছেন সিপিআই(এম) কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তী। তাঁর ক্ষোভ, দল ভাঙানোর খেলায় পুলিশ এবং প্রশাসনকে পুরোদমে ব্যবহার করছে রাজ্যের সরকারে আসীন তৃণমূল। সম্প্রতি ঝালদায় পৌর বোর্ড দখলের প্রসঙ্গ মনে করিিয়েছেন তিনি।

পঞ্চায়েত সমিতিতে নির্বাচিত তিন বিরোধী সদস্যকে তৃণমূল ভাঙিয়েছে। শুক্রবার রানিনগরে পুলিশের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ দেখিয়েছিলেন কংগ্রেস কর্মীরা। তার জেরে শনিবার বামফ্রন্ট ও কংগ্রেসের ৩৬ কর্মীকে গ্রেপ্তার করল তৃণমূল সরকারের পুলিশ। ধৃতদের মধ্যে ৪ জনকে দুদিনের জন্য পুলিশ হেপাজতে রাখার নির্দেশ দিয়েছে আদালত। ৩২ নেতা ও কর্মীকে ১৪ দিনের জন্য পাঠানো হয়েছে জেল হেপাজতে। ১১ সেপ্টেম্বর রানিনগর পঞ্চায়েত সমিতিতে স্থায়ী কমিটি গঠনের সভা রয়েছে। 

এই পঞ্চায়েত সমিতির মোট আসন ৩১। গরিষ্ঠতার জন্য প্রয়োজন ১৬ সদস্য।  তৃণমূল জেতে ১৩ আসনে, ১৩ টি আসনে জেতে কংগ্রেস। সিপিআই(এম) প্রার্থীরা জেতেন ৪ আসনে, ১ টি আসনে জেতেন আরএসপি প্রার্থী।  পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন কংগ্রেস সদস্য মহম্মদ কুদ্দুস আলি, সহ সভাপতি হয়েছেন আরএসপির আয়েশা সিদ্দিকা। পঞ্চায়েত সমিতি হাতছাড়া হওয়ার পর থেকেই এলাকায় এলাকায় অশান্তি সৃষ্টির চেষ্টা করে চলেছে তৃণমূল। 

চক্রবর্তী রবিবার বলেন, ‘‘সব আমার দিকে আসতে হবে। সব খাব আমি। এই হচ্ছে তৃণমূলের মনোভাব। এতগুলো পৌরসভা। একটিতে সিপিআই(এম), একটিতে কংগ্রেস বোর্ড গড়েছে। সেই ঝালদায় কংগ্রেস ভাঙিয়ে নিল তৃণমূল। কোনওমতে বিরোধীদের বোর্ড থাকতে দেবে না। পুলিশ, প্রশাসনকে ব্যবহার করে দল ভাঙাবে। রানিনগরে হেরেছে তৃণমূল। পঞ্চায়েত সমিতির প্রধান কংগ্রেসের। বিরোধীরা সংখ্যাগরিষ্ঠ।  সেই সভাপতিকে গ্রেপ্তার করে জেলে। অন্য সদস্যদের দল ভাঙিয়ে তৃণমূলে আনা হলো, যাতে রানিনগরে তৃণমূল হারলেও কারচুপি করে জিততে পারে।’’ 

লোকসভায় সবচেয়ে বড় বিরোধী দল এবং প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী রানিনগর নিয়েই মুখ্যমন্ত্রীকে চিঠি দিয়েছেন এদিন। নির্বাচিত সদস্যদের নিরাপত্তা চেয়েছেন। চিঠির উল্লেখ করে চক্রবর্তী বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী নিরাপত্তার জন্য নেই। উনি দল ভাঙানোর জন্য আছেন। তৃণমূল হারলেও যাতে পুলিশ লাগিয়ে দল ভাঙানো যায়, তার জন্য উনি আছেন। বিরোধীশূন্য রাজনীতি চাই। তৃণমূল একেবারে বিজেপি’র মতো করে চলছে।’’

এ রাজ্যে বিজেপি এবং তৃণমূল, দুই শক্তিকেই হারানোর ওপর জোর দিয়েছেন চক্রবর্তী। এ রাজ্যে বামফ্রন্ট সেই অবস্থানে রয়েছে। বলেছেন ধূপগুড়ি উপনির্বাচন প্রসঙ্গেও। 

সংবাদমাধ্যমের প্রশ্নে চক্রবর্তী বলেছেন, ‘‘ধূপগুড়িতে আমরা যা ভেবেছিলাম তা হয়নি ঠিক। আমরা নিশ্চয় আমাদের দিক থেকে পর্যালোচনা করব। তবে এটাও ঠিক যে সামান্য হলেও সিপিআই(এম) প্রার্থীর ভোট বেড়েছে। বিজেপি’র প্রায় ১১ হাজার এবং তৃণমূলের প্রায় আড়াই হাজার ভোট কমেছে। ভারতে বিজেপি’কে রুখতে হবে। তার জন্য মঞ্চ ‘ইন্ডিয়া’। আর এ রাজ্যে বিজেপি’র মদতদাতা তৃণমূল। ঠিক বিজেপি’র কায়দায় রাজনীতি করে তৃণমূল। তাই তৃণমূলকেও হারাতে হবে। এই বোঝাপড়ায় সমস্যা নেই।’’ 

রাজ্যপাল এবং নাবন্ন দ্বন্দ্বকে সাজানো আখ্যা দিয়ে চক্রবর্তী মনে করিয়েছেন জগদীপ ধনকড় প্রসঙ্গ। তাঁর মন্তব্য, ‘‘তখন তো রোজ মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্ঘে রাজ্যপাল ধনকড়ের ঝগড়া। আবার উপরাষ্ট্রপতি নির্বাচনে এই তৃণমূলই বিরোধীদের থেকে নিজেদের সরিয়ে নিল। ভোট না দিয়ে ধনকড়ের সুবিধা করে দিয়েছিল। এরা ঝগড়া ঝগড়া ভাব দেখাচ্ছে। কিন্তু বাংলার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলির সর্বনাশ করছে। একে রুখতে হবে।’’

 

Comments :0

Login to leave a comment