Communal Harmony

সম্প্রীতির এক অনন্য নিদর্শন ছৌ শিল্পী গিয়াসউদ্দিন আনসারী

রাজ্য

Communal Harmony


যখন শুরু করেছিলেন তখন এসেছিল বাধা। সমাজের অনেকেই ভালো চোখে নেয় নি। একজন মুসলিম যুবক কিভাবে ছৌ নাচের আসরে কৃষ্ণ,  ব্রহ্মা সাজবেন। সবকিছু হেলায় সরিয়ে দিয়ে ছৌ নাচকেই জীবনের অঙ্গ করে নিয়েছেন পুরুলিয়া বরাবাজার ব্লকের পলমা গ্রামের গিয়াসউদ্দিন আনসারী। চার পুরুষ ধরে ছৌ নাচ তাদের রক্তে। এখন ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে তৈরি করছেন শিল্পী হিসেবে। একই আসরে মাতিয়ে বেড়াচ্ছেন বাবা ও সন্তান ।তার কাছে শিল্পীর একটাই পরিচয় তিনি শিল্পী। শিল্প বা শিল্পীর কোন ধর্ম হয় না।


বরাবাজার ব্লকের ধেলাৎবামু গ্রাম পঞ্চায়েতের পলমা গ্রাম। সেই গ্রামেরই পলমা শক্তি সংঘ ছৌ নৃত্য পার্টি। সে দলের ওস্তাদ ৪১ বছরের গিয়াসউদ্দিন আনসারী। দাদু হাজারী আনসারী এবং বাবা জমির উদ্দিন আনসারী ছিলেন ছৌ শিল্পী। কিন্তু তাদের কোন নিজস্ব দল ছিল না। ২০০৩ সালে যখন গিয়াসউদ্দিন আনসারী নিজের দল খুলেছিলেন সেই সময় এসেছিল নানা বাধা-বিপত্তি। কিন্তু সেসব বাধা-বিপত্তিকে সরিয়ে দিয়ে দেশজুড়ে ছৌ নাচের দল নিয়ে যাচ্ছেন গিয়াসউদ্দিন আনসারী। কখনো কৃষ্ণ সাজছেন, কখনো ব্রহ্মা সাজছেন, কখনো রাম সাজছেন। তাঁর সাফ কথা-মানুষের একটাই পরিচয় সে মানুষ। পুরুলিয়ার গর্ব ছৌ নাচ। সেই ছৌ নাচ তাঁকে করতেই হবে। সেখানে ধর্ম কোন বাধা হতে পারে না। মঞ্চে যখন নাচেন তখন তাঁর মনে থাকে না তিনি কোন ধর্মের। তখন তার একটাই পরিচয় তিনি ছৌ শিল্পী।


শুধু তিনি নিজেই নন। তাঁর পরিবারের সদস্যদেরও যুক্ত করেছেন ছৌ নাচের দলের সঙ্গে। তিনি যখন ঢোল বাজান তাঁর ছেলে তখন ছৌ নাচের আসর মাতান। পরম্পরা মেনে গিয়াস উদ্দিনের ছেলে কাইফুদ্দিন আনসারী মঞ্চ ভাগ করে দেন বিশ্বজিৎ, মধু, শক্তি প্রমুখ ছৌ শিল্পীদের সঙ্গে। কাইফুদ্দিন জানিয়েছেন ছোটবেলা থেকেই এই পরিবেশের সঙ্গেই তিনি বড় হয়ে উঠেছেন। ছৌ নাচ তাদের পরিবারের রক্তে রয়েছে। তাই এই নাচকে কখন যে তিনি ভালোবেসে ফেলেছেন সেটা নিজেও জানেন না।


ছোট্ট এক গ্রাম পলমা। সেই গ্রাম যেন মিনি ভারতবর্ষ। সারা দেশ জুড়ে যখন অসহিষ্ণুতার বাতাবরণ দেখা যায় তখন সম্প্রীতির এক অনন্য নিদর্শন মেনে ছৌ নাচের আসর মাতান পলমা শক্তি সংঘ ছৌ নৃত্য দলের সদস্যরা। দলের ম্যানেজার নারায়ণ চন্দ্র মাহাতো জানিয়েছেন কোনদিনই তাদের মধ্যে ধর্মীয় কোন ভেদাভেদ নেই। তাদের পালায় হিন্দুর দেবতা সাজেন মুসলিম ধর্মাবলম্বী ছৌ শিল্পী। ধর্ম কখনো মানুষকে ভেদাভেদ করতে পারে না। ভেদাভেদ করে মানুষ তার নিজের প্রয়োজনে।
 

Comments :0

Login to leave a comment