Salim

শ্রমিক ঐক্যে রুখে দিতে হবে ধর্ম-ভাষার বিভাজন, বললেন সেলিম

জেলা

  ধর্ম জাত ভাষার নামে শ্রমিকদের মধ্যে বিভাজন রুখে ঐক্যবদ্ধভাবে লুটের রাজনীতির বিরুদ্ধে লড়াইয়ের আহবান জানালেন সিপিআই(এম)’র রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম। রবিবার জগদ্দলে বেঙ্গল চটকল মজদুর ইউনিয়নের ৬৭তম রাজ্য সম্মেলনের প্রকাশ্য সমাবেশে তিনি বলেছেন, বিজেপি এবং তৃণমূল মিলেমিশে লুটের রাজত্ব কায়েম করেছে, দিল্লিতে মোদীর লুট, রাজ্যে দিদির লুট চলছে। দুর্নীতির বিরুদ্ধে, অধিকারের দাবিতে শ্রমিকদের লড়াইয়ের ঐক্য ভাঙতে বিভাজনের রাজনীতিকে হাতিয়ার করেছে ওরা। মানুষের ঐক্যকে ধর্মীয় ভাবাবেগ দিয়ে ভাঙতে চাইছে বিজেপি এবং তৃণমূল। ওদের হটাতে লাল ঝান্ডা হাতে মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করতে হবে। 
    এদিন সেলিম বলেছেন, এরাজ্যে লুটের কত পারসেন্টেজ কোথায় যাবে সব ঠিক করে দিচ্ছে তৃণমূল। আর দিল্লিতে মোদীর লুট চলছে, দেশটাকে আদানি আম্বানিদের হাতে তুলে দিতে চাইছে। দেশ যে মোদীর হাতে সুরক্ষিত নয়, সেটা কর্নাটকের মানুষ বুঝতে পেরেছেন। মোদী বজরঙ্গবলীর নামে ভোট চাইতে গেছিলেন, কর্নাটকের মানুষ প্রত্যাখান করেছেন। এখানেও নির্বাচন এলেই ধর্মের নামে মানুষকে বিভাজন করতে চায় তৃণমূল এবং বিজেপি। কিন্তু সেই কৌশল আর কাজে দেবে না। বাংলার মানুষ বুঝে গিয়েছেন তৃণমূল না থাকলে বিজেপি এই রাজ্যে পা রাখার জায়গা পাবে না। মমতা ব্যানার্জি মোহন ভাগবতের কথায় চলেন, আরএসএস মমতা ব্যানার্জিকে মা দুর্গা বলেছিল, আর উনি আরএসএস’কে দেশপ্রেমিক বলেছিলেন। এরাজ্যে বিজেপি’র ধর্মীয় বিভাজনের রাজনীতির পথে বাধা ছিল বামপন্থীরা। সেইজন্যই মমতা ব্যানার্জির দলকে ভাড়ায় খাটানোর মতো ব্যবহার করে আরএসএস লালঝাণ্ডাকে খতম করতে চেয়েছিল। সেই লাল ঝান্ডা হাতে নিয়েই তৃণমূল এবং বিজেপি’কে একসঙ্গে হটাতে হবে।
   এদিন বিসিএমইউ’র ৬৭তম রাজ্য সম্মেলনের প্রকাশ্য সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয় জগদ্দল গোলঘর পার্কে। সম্মেলন হয়েছে কাঁকিনাড়া প্রেমচাদ শতবার্ষিকী ভবনে। ৫০টি ইউনিট থেকে মোট ৪৫ জন প্রতিনিধি সম্মেলনে আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন। এই সম্মেলনে মোট ৩১৩ জন পুরুষ ও ১৩ জন মহিলা প্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন। সম্মেলন থেকে অনাদি সাহুকে সভাপতি, গার্গী চ্যাটার্জিকে কার্যকরী সভাপতি, মঙ্গলবেন বংশীকে সাধারণ সম্পাদক, তীর্থঙ্কর রায়কে সাংগঠনিক সম্পাদক, রঞ্জিত মন্ডল ও জুলফিকার আলিকে যুগ্ম সম্পাদক, বিশ্বকর্মা যাদবকে কোষাধ্যক্ষ করে ৩১ জনের কেন্দ্রীয় সম্পাদকমণ্ডলী ও ১৫১ জনের কেন্দ্রীয় কমিটি গঠন করা হয়। 
সম্মেলনকে অভিনন্দন জানিয়ে বক্তব্য রাখেন পশ্চিমবঙ্গ প্রাদেশিক কৃষক সভার সভাপতি বিপ্লব মজুমদার, সারা ভারত খেতমজুর ইউনিয়নের নেতা সত্য কপাট, অভ্যর্থনা সমিতির সভাপতি নেপালদেব ভট্টাচার্য সহ নেতৃবৃন্দ।
   প্রকাশ্য সমাবেশে মহম্মদ সেলিম বলেন, রাজ্যে বারো বছর ধরে দুর্নীতি চলছে, টাকার পাহাড় তৈরি হয়েছে তৃণমূলের নেতা মন্ত্রীদের বাড়িতে। মুখ্যমন্ত্রীর অজান্তে একাজ হতে পারে না, তিনি কেবল তদন্ত ধামাচাপা দিতে চাইছেন। সরকারী টাকায় আইনজীবী লাগিয়ে সুপ্রিম কোর্টে গিয়ে বাঁচতে চাইছেন। উনি সততার প্রতীক? একসময়ে যে শুভেন্দু অধিকারী মুখ্যমন্ত্রীর নাম ও ছবি সহ ‘সততার প্রতীক’ ফেস্টুন লাগাতেন তিনি এখন বিজেপি’তে। ফেস্টুনগুলো কোথায় গেল?
  দুর্নীতির পাশাপাশি মানুষের দুর্দশার উল্লেখ করে সেলিম বলেন, কেন্দ্রের সরকারে মোদী আসার আগে রান্নার গ্যাসের দাম ছিল ৪১০ টাকা। এখন সেটা বেড়ে হয়েছে ১১২৯ টাকা। বামফ্রন্ট সরকারের সময়ে রাজ্যে কেরোসিনের দাম ছিল ১৪ টাকা লিটার, এখন সেটা একশো টাকা ছাড়িয়েছে। মমতা ব্যানার্জি আগে বলেছিলেন এত দাম খাব কী? এখন কিন্তু মমতা ব্যানার্জির মুখে আর শোনা যায় না সেই কথা, কারণ ওঁর দলে এখন মূল প্রশ্নই হলো, এত টাকা রাখবো কোথায়?
  সভায় বিসিএমইউ’র নবনির্বাচিত সভাপতি অনাদি সাহু বলেন, চটকলগুলিতে শ্রমিকদের ওপর শোষণ চলছে। মালিকরা বুঝে গেছে কেন্দ্রে ও রাজ্যে তাদের স্বার্থরক্ষাকারী সরকার বসে আছে। ফলে কোনও দ্বিধা না করে শ্রমিকদের ওপর শোষণ চালিয়ে যাচ্ছে। মধ্যযুগীয় শাসন ব্যবস্থা চটকলে কায়েম করতে চাইছে। মোদী ও মমতা ব্যানার্জি শ্রমিকবিরোধী নীতি নিয়ে চলছেন। কিন্তু চটকলের শ্রমিকরা শিরদাঁড়া সোজা রেখে লড়াই চালিয়ে যাবেন। মিল থেকে শ্রমিকদের বের করে দেওয়া হলে এবারে সেই মিলের গেটের সামনে প্রতিরোধ আন্দোলন গড়ে তোলা হবে। চটকলের শ্রমিকদের প্রতি বঞ্চনার বিরুদ্ধে চটকলের শ্রমিকরা কলকাতায় ধরনায় বসবেন বলেও জানিয়েছেন তিনি। 
  সিআইটিইউ’র উত্তর চব্বিশ পরগনা জেলা কমিটির সম্পাদক গার্গী চ্যাটার্জি সভায় বলেন, মোদী ও মমতা ব্যানার্জির সরকার শ্রমিকদের অধিকার কেড়ে নিতে চাইছে। কিন্তু অর্জিত অধিকার রক্ষায় সমস্ত শ্রমিকের ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন গড়ে তোলা হবে। 
  সভায় সভাপতির ভাষণে বিসিএমইউ নেতা তড়িৎবরণ তোপদার বলেন, শ্রমিক ঐক্য গড়ে তুলে মালিকের জুলুম রুখতে হবে। এছাড়াও সভায় ভাষণ দেন বিসিএমইউ’র নবনির্বাচিত সম্পাদক মঙ্গলবেন বংশী সহ চটকল নেতৃবৃন্দ।

 

Comments :0

Login to leave a comment