Vegetable Price Kolkata

ষাটের কমে নেই কিছু, দয়ালু শুধু পেঁপে, ‘খাবো কী’

কলকাতা

ছবি প্রতীকি

প্রতীম দে

মধ্যবয়সী ক্রেতা সাজানো এক ঝুড়ি থেকে অন্য ঝুড়ির দাম জানছেন। বেশি বেলায় বাজারে ভিড় কিছু কম। তবে কিলোতে ষাটের নিচে নেই প্রায় কোন সবজি। বিক্রেতা বলছেন, ‘‘সকালে আড়াইশো বেচেছি ২০ টাকায়। এখন কাকু আপনার জন্য কুড়ি টাকায় তিনশো।’’

উৎসবের মরসুম এখনও পুরোপুরি শেষ হয়নি। দীপাবলী, ভাইফোঁটা বাকি। এরই মধ্যে চড়া হয়েছে মাছ থেকে সবজির দাম। কিছুদিন আগে, অর্থাৎ, অক্টোবর মাসের মাঝামাঝিতেও সবজির দাম ঘোরা ফেরা করেছে ৪০ থেকে ৫০ টাকার মধ্যে। কিন্তু শারদোৎসব মিটতেই একলাফে দাম বেড়েছে। পটল ছিল ৪০ টাকা কিলো, বেড়ে হয়েছে ৬০ থেকে ৮০ টাকা। কসবা হোক বা মানিকতলা জিনিসের দাম প্রায় একই। পটল (ছোট) কসবায় যদি দাম হয় ৬০ তো মানিকতলায় ৬৫ থেকে ৭০। বড় হলে দামও বড় হচ্ছে। 

গাঁটি কচু, ঝিঙে, টমেটো সবেরই দাম ৬০ এর বেশি। একমাত্র পেঁপে তাও তা ছোট হলে দাম পড়ছে ৪০ টাকা। কিন্তু কী কারণে বাড়লো দাম

সবজি বিক্রেতাদের একাংশ দায়ী করছেন অসময়ে হওয়া বৃষ্টি এবং চাঁদার জুলুমকে। তাঁদের কথায়, ‘‘পাইকারি বাজারেই জিনিসের চড়া দাম। গাড়ি আটকে চাঁদা নিচ্ছে পুজোর জন্য। তার প্রভাব তো আছেই। তার সঙ্গে এই বৃষ্টির কারণেও দাম বেড়েছে।’’ আবার কৃষকদের থেকে শোনা যাচ্ছে এই ফসলই তাঁরা বেচেছেন বাজার দামের অর্ধেকেরও কমে। ছোট বিক্রেতা আর নাজেহাল ক্রেতা, দু’পক্ষেরই ক্ষোভ রয়েছে ফড়েদের দাপটে। কৃষকের থেকে কম দামে কিনে বাজারে চড়া দামে বিক্রির মূলে এই প্রভাবশালী ব্যবসায়ীরা।   

মাছের দামও বেড়েছে চড়া হারে। বড় রুই, কাতলা মাছ কাটা বিক্রি হচ্ছে ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকা কেজি। পাবদা ৭০০ টাকা কেজি, ট্যাঙরা ৬০০ টাকা কেজি।

কসবা বাজারের এক মাছ বিক্রেতা সুমন হালদারের কথায়, ‘পুজোর পর মাছের জোগান একটু কম আছে। তাই দাম বাড়ছে, তার সঙ্গে চাঁদার দাবি তো রয়েছেই।’ তবে বাজার ঘুরলে কানাঘোঁষা শোনাই যাচ্ছে যে, হিমঘরে মাছ রাখা আছে। 

নতুন সবজি হিসাবে বাজারে আসা ফুলকপির দাম বেশি থাকছে। যুক্তি, ‘সবে উঠছে।আর শেষ হতে যাওয়া পটলের দাম বেশি হওয়ার কারণ শোনা যাচ্ছে, ‘এই তো আর ক’টা দিন তারপর তো আর উঠবে না, তাই দাম বেশি। সমস্যায় পড়ছেন সাধারণ মানুষজন। ২০০ টাকায় দু’জনের পরিবারে যদি তিনদিনের বাজার হতো তা এখন বেড়ে হয়েছে ৩০০ টাকা। 

কসবায় হোম ডেলিভারির ব্যাবসা করেন অরুণিমা দত্ত। তিনি বলেন, ‘‘বাজারে জিনিসের দাম বাড়ছে। কিন্তু আমরা খাবারের দাম বাড়াতে গেলে লোকে খাবার নেওয়া বন্ধ করে দিচ্ছে। গত কয়েক দিনে তো শুধু সবজি নয়। মাছ, চাল, ডাল, তেল সব কিছুরই দাম বাড়ছে। এই ভাবে দাম বাড়লে ব্যবসা চালানো অসম্ভব হয়ে যাবে। না হলে দাম বাড়ানো ছাড়া আর কোনও উপায় নেই।’’

সবিতা মাইতি। সবজি বিক্রেতা। তিনি জানাচ্ছেন, পাল্লায় কিনলেও কেজি’তে ৫৫ টাকা কেনা দাম পড়ছে। তিনি বলেন, ‘‘আমরা তো আর চাষির কাছ থেকে কিনছি না সবজি। খোলা বাজার থেকে কিনতে হচ্ছে, সেখানে তো দাম কম নেয়নি। যা দামে কিনেছি তার থেকে ৫-১০ টাকা কিলো প্রতি লাভ না রেখে বিক্রি করলে আমার পেট কি ভাবে চলবে।’’

মুল্যবৃদ্ধি আজকের জ্বলন্ত সমস্যা নয়। দীর্ঘদিনের সমস্যা। জিনিসের দাম নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য মুখ্যমন্ত্রী মাঝে মধ্যে কয়েকটা বাজারে গিয়েছিলেন। বলেও দিয়েছিলেন দাম কম নেওয়ার জন্য। ন্যায্য মুল্যে যাতে জিনিস বিক্রি হয় তার জন্য ঘটা করে টাস্ক ফোর্স তৈরি করেছিলেন। কিন্তু ফল কিছু হয়নি। সেই টাস্ক ফোর্স দাম নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য কোন কিছুই করেনি। ফলে লাফিয়ে লাফিয়ে দাম বেড়েছে জিনিসের। ফলে এ বাজার থেকে অন্য বাজারে আওয়াজ উঠছে, ‘খাবো কী’। 

Comments :0

Login to leave a comment