Couple Committed Suicide

পূর্ব বর্ধমানে ঋণের দায়ে আত্মঘাতী খেতমজুর দম্পতি

রাজ্য

Couple Committed Suicide

শঙ্কর ঘোষাল- পূর্ব বর্ধমান

মাথার উপরে ঋণের বোঝা। বেশ কয়েকটি মাইক্রোফিনান্স সংস্থা থেকে নেওয়া টাকা সপ্তাহে সপ্তাহে কিস্তি অনুযায়ী দিয়ে ঋণশোধ করার কথা। আর সেই কিস্তির টাকা জোগাড় নিয়েই পরিণতি হল মর্মান্তিক। ঋণের দায়ে আত্মঘাতী হলেন দম্পতি। ঘটনাটি পূর্ব বর্ধমানে। আত্মঘাতী খেতমজুর দম্পতি নাম হেমন্ত মালিক(৬৫) ও রেখা মালিক (৫৪)। একাধিক মাইক্রোফিনান্সের কাছে ঋণ নিয়েছিলেন বর্ধমান- ২ ব্লকের বড়শুল এলাকার দক্ষিণ গোপালপুরের এই খেতমজুর দম্পতি। সেই ঋণের কিস্তি শোধ করতে পারছিলেন না। ফলে মাইক্রোফিনান্সের বাউন্সার’রা এই পরিবারের উপর ক্রমশ চাপ বাড়িয়ে দিয়েছিল বলে অভিযোগ। আরো অভিযোগ বাড়ি বিক্রি করে ঋণ শোধ করতে হবে বলে হুমকি দিয়ে যায়। জানা গেছে ঋণ শোধ করতে না পেরে এই পরিবার ভয়ে বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে যায়। মাইক্রোফিনান্স সংস্থা গুলি খোঁজ নিয়ে দামোদর নদীর ওপারে জামদহ গ্রাম থেকে ওই দম্পতিকে হাত ধরে টেনে আনে। পুলিশে দেবার ভয় দেখায়। 


খেতমজুর দম্পতির বড় ছেলে সনাতন মালিক বৃহস্পতিবার জানিয়েছেন, তাঁর বাবা খেতমজুরের কাজ করতেন আর মা পরিচারিকার কাজ করতেন। বাড়িতে খুবই অভাব ছিল। ছোট ছেলেকে কিছু করতো না , তাকে ব্যবসার মাধ্যমে সংসারের অভাব দূর করতে বন্ধন তারপর আশীর্ব্বাদ সহ একাধিক মাইক্রোফিনান্সের কাছে ঋণ নেই এই পরিবার। কিন্তু ছোট ছেলে ঋণ শোধ করতে না পেরে মাস খানেক আগেই বাড়ি ছেড়ে চলে যায়। এরপর মাইক্রোফিনান্স সংস্থাগুলি মা- বাবার উপর চাপ বাড়াতে শুরু করে। দেড় লাখ টাকার ঋণ সুদ সহ অনেকটাই বেড়ে যায়। বাউন্সাররা বাড়িতে এসে বাড়ি বিক্রি করার জন্য চাপ দিতে থাকে। কিন্তু মাথা গোঁজার ঠাঁইটুকু হারাবার ভয়ে এই দম্পতি বাড়ি ছেড়ে অন্যত্র পালিয়ে যায়। সেখানেও খোঁজ নিয়ে মাইক্রোফিনান্স সংস্থার বাউন্সার’রা পৌঁছে গিয়ে এই দম্পতিকে হাত ধরে হিড় হিড় করে টানতে শুরু করে। পুলিশে দেবার ভয়ও দেখায়। বুধবার তাঁরা বাড়িতে এলে ফের মাইক্রোফিনান্সের লোকজন আসে টাকার জন্য। এই দম্পতি বাড়িতে লুকিয়ে থাকেন। রাত সাড়ে ৯টা পর্যন্ত বসে থেকেও তাঁদের না পেয়ে হুমকি দিয়ে চলে যায় বাউন্সার’রা। এরপর  রাতে তাঁর বড় ছেলের বউ বাবা-মাকে ভাত দিয়ে আসেন কিন্তু আতঙ্কে সেই খাবার আর মুখে তুলতে পারেননি এই দম্পতি। রাতেই বাড়িতেই গামছা গলায় জড়িয়ে দু’জন ঝুলে পড়েন। এদিন ভোরে বাড়ির লোক জানালা দিয়ে দেখেন বাবা-মা দু’জনেই গলাই দড়ি দিয়ে ঝুলছেন। সাথে সাথে পুলিশকে খবর দেওয়া হয়। শক্তিগড় থানার পুলিশ মৃতদেহ দুটি নামিয়ে বড়শুল স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে গেলে চিকিৎসকরা মৃত বলে ঘোষণা করেন। 


এলাকার মানুষ অভিযোগ করেন, গ্রামে কাজ নেই, অভাব ফলে গরিব খেতমজুররা বাঁচার জন্য মাইক্রোফিনান্সের কাছে চড়া সুদে ঋণ নিতে বাধ্য হচ্ছেন। সেই সুযোগ নিয়ে জোকের মতো রক্ত চুষে খাচ্ছে মাইক্রোফিনান্স সংস্থাগুলি। আরো অভিযোগ গ্রামে সমবায় ব্যবস্থা লাটে তুলে দিয়েছে তৃণমূল। সেই সুযোগে মাইক্রোফিনান্স কোম্পানী গুলি গ্রামের গরিব পাড়ায় ঢুকে বাউন্সার দিয়ে জোর করে ঋণ আদায়ের কারণে পূর্ব বর্ধমানে একাধিক খেতমজুর, দিনমজুর, চাষী আত্মঘাতী হয়েছেন। অনেকে গ্রাম ছেড়ে ভিটেমাটি ফেলে পালিয়েছেন বাউন্সারের ভয়ে। 
আত্মঘাতী খেতমজুর দম্পতি ছেলে আরো অভিযোগ করে বলেন, একাধিক মাইক্রোফিনান্সের কোম্পানীর কাছে ঋণ নিতে বাধ্য হয়েছিল ঋণ সঠিক সময়ে শোধ করতে না পারার জন্য। তাঁর মায়ের চারটি সংস্থার যথাক্রমে ২৫০০, ২৩০০, ২২০০ ও ৩০০০ টাকার কিস্তি ছিল। কিন্তু বাঁচার জন্য একটা শোধ করতে অন্যটি ঋণ নিতে বাধ্য হয়েছিল। ছোট ভাই নিজেও মা, বাবা তিনজন খেটেও এই ঋণ শোধ করতে পারেনি। তাই বেশকিছুদিন আগে ভাই পালিয়ে যায়। মা-বাবাও দেনা শোধ করতে না পেরে গা ঢাকা দেন। সেখানেও খোঁজ করে মাইক্রোফিনান্স কোম্পানী তাঁদের টেনে, হেঁছড়ে নিয়ে আসে। এই ভয়ঙ্কর মহাজনদের হাত থেকে মুক্তি পেতে বুধবার রাতে গামছা দিয়ে গলায় দড়ি দিয়ে বাবা- মা ঘরেই আত্মঘাতী হয়েছেন।


 

Comments :0

Login to leave a comment